Sylhet Today 24 PRINT

এটি কিভাবে আত্মহত্যা হয়?

দীপিকা চক্রবর্তী |  ১৪ মে, ২০১৯

ছবির এই মুখটা দেখুন। চিরন্তন মায়ের চেহারা এটাই। মায়ায় ভরা, হাসিমুখ। ওর চোখ-মুখ দেখেই বোঝা যায় ভদ্র, শান্ত, বিনয়ী একটা মেয়ে। বাস্তবেও সে তাই ছিল। বকাঝকা করলেও সে চুপ করে থাকত। কটু কথা বললেও, গায়ে হাত তুললেও...
এটা তার দোষ ছিল।

আপনারা মেয়েদের এসব দোষকেই ভালোত্বের কাতারে ফেলেন। আর এজন্যই ভাল হতে হতে মেয়েটা হারিয়ে গেল।

কেন, কিভাবে?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার দাবি জানাতে আজ আমরা ওর সহপাঠী, জুনিয়র, সিনিয়র, শিক্ষক, সহকর্মীরা ছিলাম শহীদ মিনারে, রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে।

মৃত্যুর দিনও যার আর্তচিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে গিয়ে জানতে চেয়েছে, 'কি হয়েছে?'

শ্বশুরবাড়ির লোকজন "কিছুই হয়নি" বলে প্রতিবেশীদের ফিরিয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর সেই মেয়েকেই, ড্রয়িংরুমে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেল।

ঘরভর্তি লোকজন রেখে কেউ কিভাবে ড্রয়িংরুমে আত্মহত্যা করে? এটা কিভাবে আত্মহত্যা হয়? আপনাদের বুদ্ধি কি বলে?

শ্বশুর বাড়ির লোকজন আত্মহত্যা বলে এড়িয়ে যাচ্ছে, প্রচার করছে। অথচ কয়েক গজ দূরে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়েও বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে জানার প্রয়োজন মনে করলো না!
আবার ওর স্বামী বলেন,তাদের সাথে নাকি প্রিয়াঙ্কার কোন ঝামেলাই ছিল না।

রিক্সাড্রাইভার ও কুড়িয়ে পাওয়া বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করিয়ে জানতে চায়, বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে।

আর তারা তথাকথিত উচ্চশিক্ষিতরা (!) সেই মেয়েটাকে ঝুলন্ত অবস্থায় পেয়েও হাসপাতালে নিলেন না!

যার সাথে একই ছাদের নিচে ছয়টা বছর থাকলেন! যে তাদের রান্না-বাড়া করে খাওয়ালো, তাদের হাঁস-মুরগির যত্ন নিল, তাদের জন্য ভোর সাড়ে চারটা থেকে গভীর রাত অবধি ঘরের সব কাজ করল, রোজগার করল....গর্ভ থেকে জন্ম দিল তাদের উত্তরসূরি "কাব্য" কে...সেই মেয়েটাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেও তারা কেউ কাঁদল না...কেউ পানের বাটা খুঁজল, কেউ খুঁজল ফোন!

ওর সহপাঠী, জুনিয়র, সিনিয়ররা খবর পেয়ে দৌড়ে গিয়ে সেই ঝুলন্ত শরীর দেখে সবাই বলছে "এটা আত্মহত্যা নয়!"

কখনো ভাবিনি প্রিয়াংকার মৃত্যুর সঠিক তদন্তের দাবি জানাতে রাজপথে দাঁড়াতে হবে। কখনো ভাবিনি, বিশ্বাস করুন।

প্রিয়াংকা তো এবছর পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েশন এ চান্স পেয়েছিল। ওকে ভর্তি হতে দেওয়া হয়নি। ভর্তি হলে আর দুবছর পরও এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হয়ে যেত। মেয়েটার যোগ্যতা কতখানি বুঝতে পারছেন?

এত যোগ্যতাসম্পন্ন মেয়ে কেন এভাবে চলে গেল? কেন ঝুলন্ত অবস্থায় ওর চোখের জলের শুকনো রেখা চোখ থেকে গালের দিকে না গিয়ে, কানের দিকে যাচ্ছিল?

এই শ্যামলা মেয়েটাকে ওর অতি সুন্দরী শ্বাশুড়ি (আমাদের কাছে যদিও ডাইনির মতো মনে হচ্ছিল) ওর গায়ের রঙ আর চেহারা নিয়ে কত কটুকথা বলেছেন! ফেয়ার এন্ড লাভলি মেখে আপনারাও এবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ুন।

একটা জাতি কতখানি অন্তঃসারশূন্য হলে এমন শ্বাশুড়ি, এমন স্বামী, এমন শ্বশুর বাড়িতে প্রিয়াংকার মতো ভালো, গুণী, হবু প্রফেসর ডাক্তার মেয়েকে এমন ভাবে মরতে দেখেও চুপ করে থাকবে?

রবি ঠাকুর, তোমার কালো মেয়েটার কালো হরিণ চোখগুলো, জল ঝরিয়েই ক্ষান্ত হল। কারো কৃষ্ণকলি হতে পারলো না।

আফসোস!!

(ফেসবুক থেকে নেওয়া)
লেখক: চিকিৎসক।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.