এস এম নাদিম মাহমুদ

০৩ এপ্রিল, ২০২০ ১০:৪৩

ঔষধ নিয়ে সাংসদের গুজব রুখবে কে?

অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ হিসেবে পরিচিত জাপানে ঔষধ ‘অ্যাভিগান’ ২০১৪ সাল থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিপরীতে জাপানেই ব্যবহার হয়ে আসছে। সম্প্রতি চীন সরকার দাবি করে, এই ঔষধটি ‘কভিড-১৯’ প্রতিরোধে ভাল কাজ দিয়েছে। আর এরপরই সারা বিশ্বে এই ড্রাগ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।

জাপান সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তার সরকার নতুন এই ভাইরাসের চিকিৎসা হিসেবে অ্যাভিগানের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু করবে যদি এই ঔষধটি  উত্তীর্ণ হয়। গত ২৭ মার্চ অ্যাভিগানের প্রস্তুতকারক কোম্পানি ফুজি ফিল্ম এক বিবৃতিতে বলে, অ্যাভিগান ট্যাবলেট জাপান ও জাপানের বাহিরের হাসপাতাল কিংবা কোন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বাজারে বিতরণ করতে পারবেন না।

গত ৩১ মার্চ, ফুজি ফিল্ম তয়োমা ফার্মাসিউটিক্যালস লি. প্রেসিডেন্ট জুনিজি ওকাদা আর এক বিবৃতিতে বলেন, ফ্যাভিপিরাভিরের জেনরিকের অ্যাভিগান তৃতীয় ধাপে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছে। কডিড-১৯ মহামারি রুখতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের চাহিদা অনুযায়ী জাপান সরকারের পরামর্শক্রমে তারা এই ঔষধ সরবরাহ করবে।

এই হলো, অ্যাভিগানের বর্তমান অবস্থা। জাপানে এই ঔষধ বিপণন ও সরবরাহ বন্ধ থাকলেও বাংলাদেশে সম্ভবত এই ঔষধের উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে। আমি গতকাল থেকে ‘ভেরিট্যাস ফার্মাসিউটিক্যালস’ তৈরি ভেরিগান’ ঔষধের প্যাকেটের ছবি ইনবক্সে পাচ্ছি।

পরে দেখলাম যে, এই ভেরিট্যাস ফার্মাসিউটিক্যাল চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের এক সদস্য তার ফেইসবুক ওয়ালে এই ভেরিগানের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দাবি করছেন বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (Directorate General of Drug Administration (DGDA)

সরকারের একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে তিনি কীভাবে এই মিথ্যাচারের আশ্রয় নিলেন? যে ঔষধ এখন পর্যন্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে, যেটিকে এখনো বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা অনুমোদনই দেননি, জাপান সরকার এটি নিয়ে এখনো ভাবছে, সেখানে নিজের কোম্পানির ঔষধের প্যাকেট তৈরি করে জনগণের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করার এই দায়িত্ব কে নেবে?

বিশ্বের কোন দেশই যখন এই ঔষধ এখনো অনুমোদন দেয়নি সেখানে সরকারের ঔষধ প্রশাসন কীভাবে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়?

চারিদিকে এতো গুজবের ডালপালা। সরকারকে যখন গুজব মোকাবেলা করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে, সেখানে এই সাংসদের গুজব রুখবে কে? সংবেদনশীল একটি বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজ কোম্পানির এই ঔষধ নিয়ে বিজ্ঞাপন শুধু হতাশই করেনি, এটি এক ধরনের অপরাধ। তিনি শুধু একজন সাংসদই নন কিংবা ভেরিট্যাস কোম্পানির চেয়ারম্যানই নন, তিনি কিন্তু একজন চিকিৎসক অধ্যাপক। এমন ব্যক্তির কাছ থেকে এমন দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ড অন্তত আশা করি না।

আশা করি, সরকার খুব শিগগির এই সাংসদের মিথ্যাচার বা গুজবের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেবে। তিনি যে, বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন তার জন্য অন্তত দুঃখ প্রকাশ করবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত