Sylhet Today 24 PRINT

লন্ডনে করোনা জয়ী এক সাংবাদিকের ফিরে আসার গল্প

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক |  ১০ এপ্রিল, ২০২০

অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক ইউরো বাংলার সম্পাদক, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সদস্য, কবি ও কাউন্সিল অব মস্ক টাওয়ার হ্যামলেটসের ট্রেজারার আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে গত ২৩ মার্চ থেকে হোম-কোয়ারেন্টিনে ছিলেন।

১৪দিন কোয়ারেন্টিন থেকে ফিরে মঙ্গলবার এ সাংবাদিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। যা পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল।

করোনা ভাইরাসের ছোবল থেকে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা:
আমার লিখা “হায়াত ছিল এবং সবার দুয়ায় বেঁচে আছি” প্রচার হওয়ার পরে, অসুস্থ অবস্থায় কি কি করেছি তা অনেকেই জানতে আগ্রহ প্রকাশ করায় আবার দ্বিতীয় পর্ব লিখতে বাধ্য হই, আশাকরি অনেকের উপকারে আসবেl

সালাম ও শুভেচ্ছা প্রিয় বন্ধুবান্ধব এবং পরিজন সর্বশক্তিমান আল্লাহর অনুগ্রহে এখন আমি ভাল আছি, তাই আল্লাহ সোবাহানওয়া তায়ালার শুকরিয়া আদায় করছি ।

COVID-19 এ আমার কি কি অভিজ্ঞতা হয়ে ছিল এবং কি কি করেছি তা নিম্নরূপ:
২১ মার্চ শনিবার থেকে আমার যে লক্ষণগুলি ছিল তার মধ্যে অন্যতম, প্রথম দিন উচ্চ তাপমাত্রা, কাশি, বুকে ও গলায় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করলাম, দ্বিতীয় দিন আমার মনে হচ্ছে, আমার গলায় চাকু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, শুকনো কাশি শুরু হল, প্রচণ্ড জ্বর আসলো, গায়ে ব্যথা ও কিছু পেট অসুখ এবং একটু শ্বাসকষ্ট শুরু হলো, তৃতীয় দিন আমি স্বাদ এবং গন্ধ হারিয়েছিলাম, আমি খেতে পারিনি, খাবারে কোনও গন্ধ নেই, স্বাদ নেই, জ্বর আসছে এবং যাচ্ছে, আমার মারাত্মক কাশি লাগছে। কিছু সময় মনে হয় আমি শ্বাস নিতে পারি না, ২/৩ দিন দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম, আমিও শারীরিক ও মানসিক ভাবে মারাত্মক আক্রান্ত হয়েছিলাম, দিন রাত চোখে ঘুম নেই, শুধু কষ্ট আর কষ্ট, তাই বাধ্য হয়ে আবার দ্বিতীয় বার হসপিটাল যোগাযোগ করি, ৩০ মার্চ সোমবার সকালে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে একজন নার্স এসে আমার শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন।

নার্স জানিয়েছেন, ব্লাড প্রেসার, শ্বাস-প্রশ্বাস, ব্লাডসুগার স্বাভাবিক আছে। তবে টেম্পারেচার একটু বেশি। প্রায় ৩৮.৯ ডিগ্রী। কাশির কারণেই শ্বাসকষ্ট বেশি হচ্ছে। আমাকে এবং পরিবারের বাকি সবাইকে সেলফ আইসোলেশনে থাকতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৬/৮ গ্লাস গরম পানি খেতে হবে। সময় সময় প্যারাসিটামল খেতে হবে। কোনো ধরণের এন্টিবায়োটিক খাওয়া যাবেনা, কারণ এসব ভাইরাল ইনফেকশনে এন্টিবায়োটিক কোনো কাজ করে না। অ্যাম্বুলেন্স আসার আগেই বাসার সবাইকে বলে রেখেছিলাম, আমি হসপিটালে যাব না, আলহামদুলিল্লাহ  প্যারামেডিক ও আমাকে হসপিটালে নেয়ার প্রয়োজন মনে করে নি, যেহেতু গত রাত থেকে আমার শারীরিক অবস্থা একটু উন্নতি হচ্ছে।

আমি সেই মুহূর্তে কি করলাম:
সেলফ আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় ছেলে মেয়ের সাথে একটু দূরত্ব রাখার চেষ্টা করলাম, প্রথম ৩/৪ দিন সবাইকে নিয়ে একসাথে জামাতে নামাজ আদায় করলেও ঐদিন থেকে তাদের আলাদা করে নিজে একা একা নামাজ পড়া শুরু করি, স্ত্রী, বেচারি নাছরবান্দা, নিজের দিকে লক্ষ না করেই আমার সেবা যত্ন নিয়ে ব্যস্ত, যদিও চেষ্টা করেছি দূরত্ব বজায় রাখতে। আলহামদুলিল্লাহ  এখনো আমার পরিবারের সবাই সুস্থ আছেন।

কি কি করলাম:

  • তওবা ইস্তেফগার করে মহান প্রভু আল্লাহর শরণাপন্ন হই। দোয়া, জিকির, তেলাওয়াত করে শুধু আল্লাহর সাহায্য নিয়েছি, একমাত্র আল্লাহকে ডেকেছি এছাড়া আর অন্য কিছু আমার মনে আসেনি
  • প্রতি দুই তিন ঘণ্টা পরে গরম পানি এবং লবণ দিয়ে গার্গেল করলাম অনবরত
  • নিয়মিত লেবু, আদা, রসুন, লং, কালো গোলমরিচ ও মধু দিয়ে রং চা পান করতে লাগলাম। দিনে ৪/৫ বার আদা/মধু মিশ্রিত রং চা পান করেছি
  • সবসময় গরম পানি পান করেছি, এখন ও আমার সাথে ফ্লাস্ক ভর্তি গরম পানি আছে। কোনো প্রকার আইসক্রিম ও ঠাণ্ডা পানীয় পান করবেন না, সম্ভব হলে দিনে ৪ বার অবশ্যই গরম পানি পান করবেন
  • দিনে ৩/৪ বার ভিস্ক ও গরম পানির ভাপ নিচ্ছি, এর ফলাফল খুব দ্রুত কাজে এসেছে
  • দিনে ২/৩ বার গরম দুধ পান, সকালে পরিস/সাগু/জাউ খাবার চেষ্টা করেছি, যেহেতু অন্য কিছু খাবারের মুঠেই রুচি নেই, এইগুলো ও খুব কষ্ট করে খেতে হচ্ছে
  • কালো জিরা ( মধুর সাথে, চিবিয়ে,অথবা পানিতে ভিজিয়ে ২/৩ বার পান/খেয়েছি, কালোজিরার তেল ও নিয়মিত পান করেছি, সেটাই ও খুব কাজ হয়েছে
  • ইচ্ছে করে শক্ত মনোবল ও এই অসুখ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য খুবই জুড় করে সুস্বাদু খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করেছি
  • নিয়মিত ভিটামিন সি  খেয়েছি, মাল্টি ভিটামিন
  • হাত মুখ সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করেছি
  • নিয়মিত পবিত্র জম জম পানি পান করেছি


নিজেকে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে উৎসাহিত করেছি এবং কখনোই অপ্রয়োজনে ঘরের বাহিরে বের হতে দেই নি। সব ধরনের সামাজিক মেলামেশা থেকে বিরত থাকছি।

আমার ভাই বোন, মেয়ে, মেয়ের জামাই, ভগ্নীপতি, চাচাতো ভাই, ফুফাতো ভাই, আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধব অনেকেই দূরত্ব বজায় রেখে ঘরের বাইরে থেকে আমাদের দেখে এবং প্রয়োজনীয় খাবার, শপিং ও ঔষধ পত্র দরজার বাইরে রেখে চলে গেছেন।

আলহামদুলিল্লাহ এখন সুস্থ হয়ে উঠছি এবং অনেক ভাল বোধ করছি। এই অবসর সময়ে পবিত্র রমজান মাসের এতেকাফের মতো নিয়মিত কুরআন, ইসলামী সাহিত্য, রসূলের সিরা অধ্যয়ন করছি, এই মহামারীর দুঃসময়ে বেশি বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ করে সকল ভালো এবাদত করার তাওফিক চাই। আল্লাহ আমাদের সকলকে এই কঠিন সময়ে একে অন্যকে সাহায্য সহযোগিতা করার তৌফিক দান করুক, সবার সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল  কামনা করি।

ঘরে_থাকুন_জীবন_বাঁচান,
আবারও ধন্যবাদ
ক্যারল, লন্ডন

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.