Sylhet Today 24 PRINT

গভীর রাতে প্রসূতিকে কোলে করে হাসপাতালে নিয়ে প্রশংসিত র‌্যাব কর্মকর্তা

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৮ এপ্রিল, ২০২০

রাত প্রায় ১২টা। প্রসবকালীন জটিলতায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার শহরতলীর দক্ষিণ উত্তরসুর গ্রামের গৃহবধূ শিল্পী রানী পাল। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া দরকার। কিন্তু লকডাউনের এই রাতে রাস্তায় কোনো যানবাহন পাওয়া যাচ্ছিলো না। এলাকায় পরিচিত যে সিএনজি অটোরিক্স চালকরা ছিলেন, হাসপাতালে যাওয়ার কথা শুনে সাথে সাথে না করে দিয়েছেন তারা।

এত রাতে রাস্তায় নেমে তারা বিপদে পড়তে চান না কেউ। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পারলে তো প্রসূতির জীবন সংকটে পরবে। শেষ আশা হিসেবে শ্রীমঙ্গল র‌্যাব কমান্ডার মো. আনোয়ার হোসেন শামীমকে ফোন করেন ওই প্রসূতির এক আত্মীয়। ফোন পেয়ে তাৎক্ষণিক র‌্যাবের গাড়ি নিয়ে সেখানে ছুটে গেলেন পুলিশের এএসপি আনোয়ার নিজেই। শুধু তাই নয়, হাঁটতে অপারগ হওয়ায় তিনি ওই প্রসূতি নারীকে কোলে করে গাড়িতে ওঠান এবং হাসপাতালে পৌঁছার পর কোলে করেই নিচ তলা থেকে তিন তলায় অবস্থিত প্রসূতি ওয়ার্ডে নিয়ে যান।

বিজ্ঞাপন



ওই প্রসূতি নারীর স্বামী রনজিত দাস বলেন, অনেক চেষ্টা করেও কোনো গাড়ি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। ১৫/২০ জন ড্রাইভার আমাকে না করে দিল। মনে করেছিলাম, আর হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারব না। “ভগবান কপালে যা রাখছে, তাই হবে। এমন সময় র‌্যাব স্যার বাইচ্চার মায়ের জীবনটা বাঁচাইছে। স্যারকে ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা আমার জানা নাই।”

শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অফিসার হয়ে এএসপি আনোয়ার যেভাবে একজন প্রসূতি নারীকে এই গভীর রাতে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন এবং কোলে করে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অপরিচিত একজন নারীকে কোলে নিয়ে বলা যায় তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন।”

এমন মানবিক উদ্যোগের কারণে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছেন ওই র‌্যাব কর্মকর্তা। প্রসূতিকে কোলে তার হাসপাতাে নিয়ে যাওয়ার ছবিটি ইতোমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এমন র‌্যাব কর্মকর্তার ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

এই ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেন নির্মল পাল নামে ওই প্রসূতি নারীর এক আত্মীয়। যেখানে দেখা যায়, এএসপি আনোয়ার র‌্যাবের গাড়ি থেকে ওই নারীকে কোলে করে নামাচ্ছেন ও হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যাচ্ছেন। ক্যাপশনে তিনি এই উপকারের জন্য র‌্যাব কমান্ডারকে ধন্যবাদ জানান।

নির্মল পাল ফেসবুকে লেখেন-
“শ্রীমঙ্গল র‌্যাবকে ভগবান  অনেক বড় পুরস্কার দেক!

বিজ্ঞাপন



গতকাল রাত আনুমানিক সাড়ে এগারটা।  আমার পিসির প্রসব বেদনা ওঠে। রক্ত ভাঙা শুরু হয়। কিন্তু বাচ্চা প্রসব হইতেছিল না। তাই সবাই বল হসপিটালে নেওয়াই লাগবে। হসপিটালে নেওয়ার জন্য  এত রাতে  গাড়ি কোথায় পাব- চিন্তায় আমরা সবায় টেনশন করতে ছিলাম। অনেক চেষ্টা করেও গাড়ি পাই নাই। পরিচিত অনেক সিএনজি ড্রাইভারকে অনুরোধ করেও লাভ হয় নাই। তারা বলে এত রাতে যাইতে  পারবে না। এমন সময় আমার প্রিয় বড় ভাই রাজু (উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে) ভাই আমাকে শ্রীমঙ্গল র‌্যাব বাহিনীর কমন্ডার, এএসপি আনোয়ার হোসেন শামিম স্যারের নাম্বার দেয়। তিনি নাকি এ রকম সব মানুষকে সাহায্য করেন। প্রথমে বিশ্বাস করি নাই। তবুও কল দিলাম। উনি বললেন ২ মিনিটের মধ্যে রওনা হইতেছেন। বিশ্বাস করি নাই। পরে দেখি ওনি ঠিক সময়মতো তাড়াতাড়ি আসছেন।

আমরা আরো আশ্চর্য হইলাম, পিসির হাঁটার অবস্থা ছিল না। ওনি মুখে কিছু না বলে পিসিকে কোলে করে  নিয়ে গাড়িতে তুলল। হাসপাতালে পৌছার পর রোগীকে কোলে নিয়ে আবার একবারে অপারেশন রুমে দিয়া আসছে। আমরা আশ্চর্য হইলাম, এই রকম মানুষও কি পৃথিবীতে আছে! (আমার পিসির গর্ভ থেকে ভাই  হইছে, দুইজনই সুস্থ আছে। সবার আশীবাদ চাই)।”

এ প্রসঙ্গে র‌্যাব ৯ ক্যাম্পের কমান্ডার এএসপি আনোয়ার হোসেন জানান, “আমি রাত্রিকালীন টহলে ছিলাম। হঠাৎ এক ব্যক্তি ফোন করে আমাকে এই পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করেন এবং সাহায্য চান। পরে আমি মানবিক দিক বিবেচনা করে তাৎক্ষণিক টহল গাড়ি নিয়ে ওই বাসায় পৌঁছাই এবং প্রসূতি নারীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিই।”

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সৃষ্টির পর এএসপি আনোয়ার তার মানবিক কাজের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই আলোচনায় এসেছেন। তিনি ৩৪তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। তার গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন উত্তর বড়বিল গ্রামে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.