প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
রাজেশ পাল | ৩০ নভেম্বর, ২০১৮
মুক্তিযোদ্ধা ও চিত্রনায়ক ফারুকের একটি বক্তব্যকে টুইস্ট করে ব্যাপক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। যে বক্তব্যের বিন্দুমাত্র বিশ্বাসযোগ্য কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মিথ্যা বক্তব্যটি হলো, "ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি"
কিন্তু আমার মনে যে প্রশ্নটি উকি দিচ্ছে তা হলো, যে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান, সেদেশে ইসলাম একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। সেখানে আবার নতুন করে "ইসলাম প্রতিষ্ঠা" র প্রশ্নটি আসছে কেন?
ব্যক্তিগত জীবনে চরম নাস্তিক জিন্নাহ একদিন নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য জন্ম দিয়েছিলেন "one county two nation" অর্থাৎ "দ্বিজাতিত্ব থিওরি", ৩০ লক্ষ শহীদের এক যমুনা রক্তের বন্যায় সেই থিওরি ভেসে যায় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে। "ইসলামিক স্টেট অফ পাকিস্তান"-এর ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির ডানায় ভর করে জেগে ওঠে "পিপলস রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ"
৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পরপরই ঢাকা বেতার দখল নিয়ে মেজর ডালিম ঘোষণা দেন, "এখন থেকে এদেশের নাম হবে "ইসলামিক স্টেট অফ বাংলাদেশ", সেই থেকে শুরু হয় এদেশের রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহারের নোংরা প্রতিযোগিতা। পরবর্তীতে সব শাসকই বজায় রাখেন যার ধারাবাহিকতা। "ধর্মীয় জুজু" ব্যবহার করে জনমতকে নিজ পক্ষে টানার জন্য জেনারেল জিয়া সংবিধান থেকে নির্বাসনে পাঠান সংবিধানের দুই মৌলিক স্তম্ভ "সমাজতন্ত্র" আর "ধর্মনিরপেক্ষতা"কে। ৭৮ সালে বহুদলীয় রাজনীতির ছদ্মাবরণে রাজনীতি করার অধিকার ফিরিয়ে দেন ৭১-এ নিষিদ্ধ "জামায়াতে ইসলামী"কে। আরেক জেনারেল এরশাদ সাহেব ব্যক্তিগত জীবনে চরম ভোগবাদী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়েও হয়ে উঠেন রাষ্ট্রধর্মের প্রবক্তা।
দীর্ঘ ২১ বছর ধরে সুপরিকল্পিতভাবে এদেশের মানুষের রক্ত রন্ধ্রে প্রবেশ করানো হয় ধর্মীয় লেবাসের আড়ালে প্রো-পাকিস্তানি চিন্তাধারা। একসময় এসে দেখা যায়, বিএনপির রাজনীতিই হয়ে দাড়ায় "ভারত বিরোধিতা" আর "হিন্দু বিরোধিতা"র মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে নিজেদের পক্ষে ভোট টানার কুটচালের নকশা। এর বাইরে এদের তেমন কোনো রাজনৈতিক মিশনই ছিলোনা তাদের। বিএনপি নেতাদের বক্তব্য ছিলো ঘুরেফিরে "আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশে ইসলাম থাকবেনা" "ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে" "মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে" এতটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই প্রতিক্রিয়াশীল ইজমের মাধ্যমেই দেশের আপামর জনসাধারণের কাঁধে বন্দুক রেখে বারেবারে লক্ষ্যভেদ করে গেছে তারা।
বিরোধী শক্তির কাছে এই সেক্টরে মার খেতে খেতে একসময় আওয়ামী লীগও নেমে পড়ে সেই একই ইঁদুর দৌড়ে। "ধানের শীষে বিসমিল্লাহ"র কাউন্টার হিসেবে তৈরি হয় "নৌকার মালিক তুই আল্লাহ", শাহবাগের প্রতিবাদী তারুণ্যের ফাঁসির দাবিতে ছুটে আসা লাখ লাখ তৌহিদী জনতার নেতা শফি হুজুর তাই হয়ে উঠেছেন রাষ্ট্রের আধ্যাত্মিক গুরু। আর এতদিন "নারী নেতৃত্ব হারাম" ঘোষণা দেওয়াকারীদের পক্ষ থেকে পরম পরিতোষে দেয়া হয় "কওমি জননী" উপাধি।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি পারলে "নাস্তিক কমিউনিস্ট"-রাও আর বাদ যাবেন কেন? সারাজীবন তারকাখচিত "লাল সেলাম" প্রদানকারী কমরেড মনজুরুল আহসান খান, ইনু, রাশেদ খান মেননরাও আজ তাই "আলহাজ্ব মঞ্জুরুল আহসান খান" "হাজী ইনু" "আলহাজ্ব রাশেদ খান মেনন"! হুমায়ূন আজাদের ভাষায়, "পুত্রের ঔরসে জন্ম হচ্ছে পিতামহের"
নায়ক ফারুক বক্তব্যটি দেননি। কিন্তু যদি দিয়েও থাকেন, বন্ধুদের নিকট বিনীত প্রশ্ন, "ফারুকের মতো মুক্তিযোদ্ধারা কি আসলেই পাকিস্তানের মতো আরেকটি "ইসলামিক স্টেট" প্রতিষ্ঠার জন্যই জীবন বাজী রেখে পাকবাহিনীর মেশিনগানের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন?
তাহলে আর পাকিস্তান ভাঙার দরকারটাই বা কি ছিলো?"
সবিনয়ে জানতে চাই।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য