প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
রাজেশ পাল | ২৯ এপ্রিল, ২০২৩
প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘অয়োময়’ নাটকের কথা মনে আছে? জনপ্রিয় সিরিজ ছিলো সেটি সেই বিটিভির যুগে। নাটকটি আবর্তিত হয়েছিলো ক্ষয়িষ্ণু জমিদার মির্জা বংশের ছোট মির্জা আর পরিবারের সদস্যদের কেন্দ্র করে।
মির্জা বংশ একদিকে যেমন ছিলো ব্যাপক অত্যাচারী। ঠিক তেমনি আবার দান-দক্ষিণার ক্ষেত্রে মুক্তহস্ত। একেবারে সেকেলে পাক্কা জমিদারসুলভ মেজাজ যাকে বলে! কালক্রমে জমিদারির অবস্থা পড়ে যায় খামখেয়ালিপনা আর উদাসীনতার কারণে। একসময় খাজনা জমা দিতে না পারায় ব্রিটিশ আমলের অদ্ভুত সেই ‘সূর্যাস্ত আইনের’ অধীনে ওঠে নিলামে। তখন সেই জমিদারি কিনে নেয় এলাকার ধনী ব্যবসায়ী কাশেম।
এই কাশেম একদা ছিলো সাধারণ ‘গাতক’ মাত্র। মির্জাদের দেওয়া মাইর খাওয়ার পুরষ্কার হিসেবে তাকে দেয়া হয় একটি নৌকা। সেই নৌকা দিয়ে সে শুরু করে ব্যবসা। এক সময় পরিণত হয় এলাকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিত্বে। এরপর জমিদারি কিনে জমিদার।
ক্ষমতার হাত বদলের সাথে সাথে এলাকার চামচা শ্রেণির লোকজন, যাদের কাজই হলো ক্ষমতাধর শক্তিমানদের চামচামি করে নিজেদের আখের গোছানো, তারা কাশেমের কাছে প্রস্তাব নিয়ে আসে, এখন থেকে ‘মির্জানগর’-এর নাম বদলে যেন ‘কাশেমনগর’ রাখা হয়। কাশেম এতে সানন্দে সম্মতি দেয়। পরদিন পুরো এলাকায় ঢোল বাজিয়ে ঘোষণা দেয়া হয় , “একটি বিশেষ ঘোষণা। একটি বিশেষ ঘোষণা। এখন থেকে এই এলাকার নাম হবে কাশেমনগর, কাশেমনগর, কাশেমনগররররর”।
শুনে এলাকার এক বিখ্যাত পাগল মন্তব্য করে, “তাইলে কি আমি কোনোদিন এই জমিদারি কিনলে এই এলাকার নাম হবে পাগলানগর”?
হুমায়ূন আজাদ স্যার তাঁর ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ উপন্যাসে দেখিয়েছেন কীভাবে দেশজুড়ে জিহাদের অভিযান শুরু করার পরে জিহাদি ভাইয়েরা ‘ভৈরব’-এর নাম বদলে রাখেন ‘মোহাম্মদনগর’। বলাই বাহুল্য অতি-অনুভূতিশীলরা তাঁর এই উপন্যাস হজম করতে পারেননি। বইমেলা প্রাঙ্গণেই তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে।
আশির দশকে, দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদী সিরাজগঞ্জ কলেজ মাঠে রাতভর জলসা করার পর সিরাজগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী ‘কালিবাড়ী’র নাম পরিবর্তন করে ‘আলীবাড়ী’ ঘোষণা করে। কিন্তু সিরাজগঞ্জবাসীর উত্তাল প্রতিবাদের কারণে তা হতে পারেনি। আরেকবার ‘গোপালগঞ্জ’-এর নাম পাল্টানোর মতো চরম বেফাঁস মন্তব্য করে ব্যাপক ট্রল আর ক্ষোভের শিকার হয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামতো ইতিমধ্যেই ‘বি-বাড়িয়া’ বানিয়ে ফেলেছে কিছু লোক। বাকি রইলো আর নারায়ণগঞ্জ। সেটাও কদ্দিন থাকে কে জানে?
প্রয়াত তারেক ফাতাহ ‘আপ কি আদালত’-এ বলেছিলেন , ‘মক্কার নাম যেমন রামগড় হতে পারে না , ঠিক তেমনি প্রয়াগের নামও এলাহাবাদ হতে পারে না। কারণ এতে উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিকে অশ্রদ্ধা জানানো হয়’।
এক শ্রেণির লোকের অতি-উৎসাহের কারণেই খুলনার ‘শিববাড়ী’র নাম বদলে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ করা হয়েছে। অথচ আমার জানামতে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ ইতিমধ্যেই আছে খুলনায়। ফেসবুকে অনেকেই লিখেছেন এটা নিয়ে। হচ্ছে তীব্র প্রতিবাদ। বঙ্গবন্ধুর নামে চত্বর অবশ্যই হবে, হতেই হবে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে চত্বর হবে না , তো হবে কার নামে? কিন্তু তাই বলে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি জড়িত স্থানের নাম কেন বদলে দিতে হবে?
চাটুকাররা এভাবেই যুগে যুগে শক্তিধরদের সর্বনাশ করে কুমন্ত্রণা দিয়ে। বঙ্গবন্ধুর নামে নতুন ভাবে চত্বর আর মিউজিয়াম হয়ে নামকরণ করা হউক সশ্রদ্ধ চিত্তে। কিন্তু ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট জড়িত শিববাড়ীর নাম বদলে ফেলার কোনো যৌক্তিকতা তো তাতে নেই।
কমিউনিস্টরা রাশিয়ায় একদা দুটি বিখ্যাত শহরের নাম বদলে তাদের দুই কিংবদন্তি নেতার নামে ‘লেনিনগ্রাদ’ আর ‘স্টালিনগ্রাদ’ রেখেছিল। সেগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি কী একটু খবর নিয়ে দেখুন। লেনিনগ্রাদের বর্তমান নাম সেন্ট পিটার্সবার্গ আর স্টালিনগ্রাদের নাম হয়েছে ভলগোগ্রাদ!
২১ বছর বিএনপি-জামায়াত প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে ইতিহাসের নাম থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দিতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বেঁচে ছিলেন তাঁর ‘ঘরে ঘরে গড়ে তোলা দুর্গগুলোর’ মানুষের অন্তরে। এই সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠীর অতি-ভক্তির আড়ালে এবার হয়তো সেই জায়গাটাতেই আঘাত করার প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে নীলনকশার অংশ হিসেবে।
এসব মুখোশধারী শ্রেণি থেকে সাবধান। সুযোগ পেলে ছুরি কিন্তু এরাই মারে পিঠে!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য