শাবি প্রতিনিধি

১৬ জুন, ২০২০ ২১:০৭

মাহিরের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের আহবান শাবি ছাত্র ফ্রন্টের

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাসিমকে নিয়ে 'কটূক্তি করে স্ট্যাটাস' দেয়ার অভিযোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহির চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই মামলাকে হয়রানিমূলক ও অযৌক্তিক দাবি করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট।

মঙ্গলবার (১৬ জুন) দুপুরে সংগঠন থেকে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ আহবান জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহির চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাসের জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মিরা সেই স্ট্যাটাসকে ‘ঘৃণাপূর্ণ স্ট্যাটাস’ ও ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মানহানিকর’ দাবি করেন। মাহিরকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবিও জানান তারা।

এরপর ওই শিক্ষার্থী ভুল হয়েছে বলে স্ট্যাটাসটি মুছে ফেলেন এবং লাইভে এসে সকলের কাছে ক্ষমাও চান। এর পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়।

আমরা মনে করি, সকলের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। ভিন্ন মতের বিরুদ্ধে আলোচনা সমালোচনার মাধ্যমেই সবার কাছে মতের বৈপরীত্য স্পষ্ট করে তুলে ধরতে হয়। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর স্ট্যাটাস এর কোথায় ভুল সেটা ঠিকমত না তুলে ধরে, আলোচনা করার সুযোগ না দিয়ে তাকে এক প্রকার হুমকি দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মি দের পক্ষ থেকে। কিন্তু আমরা বিস্মিত হয়ে দেখলাম, এইসব হুমকির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে, শিক্ষার্থীর সাথে কোন আলোচনা না করে, তার পাশে না দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উল্টো সমালোচিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ এ উক্ত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এটি সম্পূর্ণ অযোক্তিক।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার দাবি করেছেন যারা মাহিরের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছে, অভিযোগ করেছে তাদের কথায় প্রশাসন মামলা করেছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদ বলেন "সে একজন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়েছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুন্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুন্ন হওয়া মানে রাষ্ট্রের মানহানি হওয়া। আর এ ছেলের বিরুদ্ধে আরো বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সে কিছুদিন আগে অনলাইন ক্লাস বর্জনের আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছে।"

প্রশাসনের ব্যক্তিদের উপরোক্ত বক্তব্যগুলোর মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, বৈষম্যমূলক অনলাইন ক্লাস বর্জনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার পর থেকেই অনেক আন্দোলনকারির মত ওই শিক্ষার্থীর উপরও তারা ক্ষুব্ধ ছিলেন। এই কারণে একটি সাধারণ স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে কিছু ছাত্রলীগ নেতাকর্মির বক্তব্য, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুন্ন হওয়া’ এর আশ্চর্য অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছেন। অনলাইন ক্লাস বা মেস ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে, দাবি করছে তার কোন সঠিক সমাধান না করে এধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, যেভাবেই হোক ‘এই আন্দোলনকারি দের শায়েস্তা করতে হবে’ এমন একটি মনোভাব কাজ করছে প্রশাসনের। গত বছরও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ‘অনুমতি ছাড়া মানববন্ধন করা যাবে না’ বলে মানববন্ধন বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। আমরা মনে করি, সেসময় অযাচিত হুমকি প্রয়োগ বন্ধ করার পক্ষে প্রশাসন যে সম্মতি সেসময় দিয়েছিল তার একদম বিপরীত পথেই তারা চলছে।

আরো আগ্রাসী হয়ে শিক্ষার্থীদের সকল প্রকার আলোচনা, সমালোচনা বন্ধ করে একটা দমবদ্ধ ক্যাম্পাস তৈরি করার চেষ্টা করছে। যেখানে কোন সমস্যা নিয়ে কোন কথা বলা যাবে না। যেখানে শুধু চাপিয়ে দেয়া অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। যেখানে সমস্যা নিয়ে আত্মহত্যা করা যাবে ,কিন্তু ‘টু’ শব্দটিও করা যাবে না। পরিস্থিতি ও কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে, শাবি প্রশাসন এমনই একটা ক্যাম্পাস চাইছে।

বিজ্ঞপ্তিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, অবিলম্বে শাবি প্রশাসন যেন মাহিরের বিরুদ্ধে করা অযৌক্তিক মামলাটি তুলে নেয় এবং তাকে হয়রানি করার প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকে। সাথে সাথে বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাই তারা যেন এই মামলার বিরুদ্ধে দাঁড়ায় এবং মুক্ত ক্যাম্পাস নির্মাণের লক্ষ্যে অগণতান্ত্রিক ও অসহনশীল ক্যাম্পাস সৃষ্টির যেকোন চেষ্টার বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে রুখে দাঁঁড়ায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত