সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ মার্চ, ২০২৪ ১৩:২৬

আজও উত্তাল বুয়েট

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ শীর্ষ নেতাদের প্রবেশ ও জনসমাগমকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।

শনিবার সকাল থেকে প্লাকার্ড হাতে নিয়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। এর আগে শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে মিছিল নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘন করে বুয়েটের ২১ ব্যাচের পুরোকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বি মধ্যরাতে এই রাজনৈতিক সমাগম ঘটিয়েছেন। তারা রাব্বির স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করে রাব্বির সঙ্গে বুয়েটের যে সকল শিক্ষার্থী এই সমাগমে জড়িত তাদেরও বিভিন্ন মেয়াদে হল এবং টার্ম থেকে বহিষ্কার দাবি জানিয়েছেন। দাবি না মানা পর্যন্ত সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করার ঘোষণা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিও) অধ্যাপক মিজানুর রহমানের পদত্যাগ দাবি জানিয়েছেন তারা।

শুক্রবার বিকেলে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি উত্থাপন করেন। পরে রাত আটটায় তারা জানান, উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদারের মৌখিক আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করেছেন।

বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের (ডিএসডব্লিও) পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমানের পদত্যাগ এবং শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বির স্থায়ী একাডেমিক বহিষ্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আজ সকালে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়া ও বুয়েট শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। দুপুর ২টার মধ্যে দাবি মেনে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন।

একই সঙ্গে ছাত্রলীগের জনসমাগম করার পেছনে ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বি ছাড়াও জড়িত ছিলেন এমন আরও কয়েক শিক্ষার্থীর নাম প্রকাশ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ তালিকায় যাদের নাম এসেছে তারা হলেন- এ. এস. এম. আনাস ফেরদৌস, মোহাম্মদ হাসিন আরমান নিহাল, অনিরুদ্ধ মজুমদার, জাহিরুল ইসলাম ইমন ও সায়েম মাহমুদ সাজেদিন রিফাত।

এদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষার্থীরা বুয়েট শহিদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের দাবি তুলে ধরেন। তারা বলেন, যে সকল শিক্ষার্থী এর সঙ্গে জড়িত তাদের একাংশের নাম-পরিচয় আমরা ছবি ও ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে চিহ্নিত করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ভঙ্গের দায়ে এবং ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার চেষ্টায় তাদের সকলকে স্থায়ীভাবে একাডেমিক এবং হল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।

শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা ডিএসডব্লিও অধ্যাপক মিজানুর রহমান দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে তাঁর পদত্যাগেরও দাবি জানিয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা শুক্রবার জানান, বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তি যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, তারা কেন আর কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেল এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা বুয়েট প্রশাসনের কাছ থেকে আসতে হবে। আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না- এই ব্যাপারে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

এ সময় সংবাদকর্মীদের সামনে এক শিক্ষার্থী কথা বলেন। তবে তিনি তার পরিচয় প্রকাশ করেননি। তিনি বলেন, উপাচার্য স্যার আমাদের সাথে দেখা করে আমাদের কিছু দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে মৌখিকভাবে আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু আমাদের দাবি ছিল সকল দাবি বাস্তবায়ন করা। আগামীকাল (শনিবার) সকাল আটটায় বুয়েটের সকল প্রবেশদ্বারে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আামাদের এই দাবি চলবে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ডিএসডব্লিউ স্যার শিক্ষার্থীদের মাঝে এসে নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করেননি, উল্টো শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে উগ্র আচরণ করেছেন। অভিভাবকতুল্য আমাদের এই শিক্ষকের আচরণে আমরা মর্মাহত। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ডিএসডব্লিউ স্যারের আমরা অতিদ্রুত পদত্যাগ চাই।’

অভিযোগের বিষয়ে ইমতিয়াজ রাব্বি বলেন, সেদিন কেন্দ্রীয় নেতারা এসেছিল। তবে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য আসেননি। আমি যেহেতু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদে আছি, সেজন্য তারা (শিক্ষার্থীরা) আন্দোলন করছে। কিন্তু আমি বলতে চাই, আমি ক্যাম্পাসের বাইরে রাজনীতি করি। এ কারণে আমার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। রাজনীতি করা আমার মৌলিক অধিকার।

এদিকে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, এটা সাধারণ একটা বিষয়, এটাকে রাজনৈতি মোড়ক দেওয়ার কোনো বিষয় না। বরং এটাকে যারা রাজনৈতিক মোড়ক দেওয়ার চেষ্টা করছে, তারা কোন রাজনীতি করছে সেটা কিন্তু আমরা জানি। বিরাজনীতির কথা বলে আজকে সেখানে অন্ধকার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক থাকে। আমি পলাশী দিয়ে হেঁটে বুয়েটের শহীদ মিনারে গিয়েছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয়েছে।

রাজনীতি করার কারণে কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ছাত্রলীগ আন্দোলনে নামবে জানিয়ে সাদ্দাম আরও বলেন, একজন শিক্ষার্থীও যদি অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনে থাকার কারও অধিকার নাই। এমনটি হলে আমরা ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, ডিসিপ্লিনারি বোর্ড ইমতিয়াজ রাব্বিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবে, এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্রিয়া মেনে বহিষ্কার বা অন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রাত সাড়ে দশটায় আমাদের গেট বন্ধ হয়ে যায়। কিন্ত যে সকল স্টাফ এরপরে গেট খুলেছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিএসডব্লিও অধ্যাপক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখবে বলে জানান তিনি।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইমতিয়াজ রাব্বির আবাসিক সিট বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি একাডেমিক সব কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত