২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ২১:৪৫
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে এসেছেন শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বুধবার বেলা ১১টায় ‘ছাত্রশিবির শাবিপ্রবি’ নামের ফেসবুক পেজে এ–সংক্রান্ত একটি পোস্ট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ওই পোস্টে জানানো হয়, শাবিপ্রবির ছাত্রশিবিরের সভাপতি হিসেবে আছেন তারেক মনোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা তুহিন। তারা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপাচার্যের কাছে ১৩টি বিষয়ে ৫২ দফা দাবি উল্লেখ করে স্মারকলিপি দিয়েছেন। মনোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ এবং মাসুদ রানা তুহিন একই বর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি তারেক মনোয়ার বলেন, ‘আমাদের কমিটি সব সময় নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়ে থাকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটিও আছে, সময়–সুযোগমতো তা প্রকাশ করা হবে।’
৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ব্যানারে ‘আপাতত’ কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম না চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারেক মনোয়ার বলেন, ‘আমরা ব্যানারভিত্তিক শোডাউন, মিছিল, মিটিং আপাতত করব না।
ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে আহ্বান থাকবে তা সংস্কার করা। শাবিপ্রবিতে দলীয় ব্যানারে শোডাউন বা কর্মসূচি করতে নিষেধ করা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করব। দলীয় ব্যানারে আমরা কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করব না।’
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সভাপতি। এরপর ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদকের নামও প্রকাশ্যে আসে। এরপর একে একে জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে আসছে ছাত্রশিবিরের কমিটি।
শিবিরের স্মারকলিপিতে ৫২ দাবির মধ্যে রয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে কাজ করেছে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, ফ্যাসিবাদের আইকনদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে সকল স্থাপনা ও কর্নারের নামকরণ করা হয়েছে তা পরিবর্তন করা।
গত ১৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামবিদ্বেষসহ নানাবিধ নিপীড়ন ও বৈষম্যের ঘটনার তদন্ত করে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার সকল শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ রুদ্র সেনের পরিবারের সদস্যদের জন্য যথাযথ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, আহতের তালিকা করে তাদের চিকিৎসার ও পরিবারকে সহযোগিতা, জুলাই অভ্যুত্থান ও শেখ মুজিব-শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামল সম্পর্কে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে বিশেষ গবেষণা ও থিসিসের ব্যবস্থা করা, ক্যাম্পাসে একটি জুলাই অভ্যুত্থান স্মৃতি কর্নার স্থাপন।
প্রশাসনিক কার্যক্রম সংক্রান্ত দাবির মধ্যে রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ধরণের আবেদন, টাকা জমা দেওয়া, সার্টিফিকেট-মার্কশীট প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট উত্তোলন আধুনিকায়ন করে সকল কার্যক্রম অনলাইনে ভিত্তিক করা, একাডেমিক পরীক্ষার ফলাফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিভাগে বর্ষভিত্তিক ভর্তি ফি, ক্রেডিট ফি কমানো, বিভাগের উন্নয়ন ফি এবং আইআইসিটি-এর ইস্টিটিটিউট ফি-এর যৌক্তিক সংস্কার করা, নিপীড়নমূলক ফ্লোর কালচার বিলুপ্ত করে ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে সকলের নৈতিক মূল্যবোধকে ধারণ করে ফ্রেশারস রিসিপশনের আয়োজন করা।
একাডেমিক সংক্রান্ত দাবির মধ্যে রয়েছে, ড্রপ সিস্টেম বাতিল করে ইম্প্রোভ সিস্টেম চালু করা, যেসব বিভাগে একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য ল্যাপটপ প্রয়োজন সেসব বিভাগের শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ ক্রয়ের জন্য শিক্ষা ঋণের ব্যবস্থা করা, সকল শিক্ষার্থীর জন্য থিসিসের সুযোগ রাখা, যে সকল ডিপার্টমেন্টের ক্লাসরুম ও ল্যাবের সংকট আছে তা নিরসন করা, প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টে সমৃদ্ধ সেমিনার লাইব্রেরি নিশ্চিত করে তাতে পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত, যেসকল ডিপার্টমেন্টের ফিল্ডওয়ার্ক কোর্সের অন্তর্ভুক্ত, সেসকল ফিল্ডওয়ার্কের পুরো ব্যয়ভার ডিপার্টমেন্টকে বহন।
আবাসন সংক্রান্ত দাবির মধ্যে রয়েছে, চলমান আবাসন সংকট নিরসন করে শতভাগ আবাসিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণ কর, আবাসন সংকট নিরসনের পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আবাসন খরচ বাবদ উপযুক্ত পরিমাণ মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থা করা, হল পরিচালনা, সিট বন্টনসহ সকল প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনায় যাতে কোন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থাকে তা নিশ্চিত করা, নারী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রত্যেককেই প্রথম বর্ষ থেকে আবাসিক সিট বরাদ্দ দিতে হবে। সিট সংকট সমাধানের সাময়িক পদক্ষেপ হিসেবে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসের নিকটবর্তী এলাকায় ছাত্রী হোস্টেলগুলোর ভাড়া কমানোসহ যাবতীয় সমস্যা নিরসন করতে হবে।
আবাসিক হলগুলোর ডাইনিং, ক্যান্টিন ও দোকানগুলোতে খাবারের যথাযথ মান নিশ্চিত করতে হবে এবং খাবারের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রয়েজনীয় ভর্তুকির ব্যবস্থা গ্রহণ করা, হলগুলোতে সার্বিক কার্যক্রমে হাউজ টিউটরদের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। প্রসাশনের পক্ষ থেকে হলভিত্তিক কো- কারিকুলার কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে।
পরিবহন সংক্রান্ত দাবির মধ্যে রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সংকট দূর করতে নতুন বাসের ব্যবস্থা করা, পরিবহনের রুট বৃদ্ধি করা, হল থেকে যাতায়াতের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা, ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলোর সংস্কার, রাস্তার দুপাশে ছায়াদার বৃক্ষরোপন।
নিরাপত্তা সংক্রান্ত দাবির মধ্যে রয়েছে, পড়ালেখার পরিবেশ সংরক্ষণে একাডেমিক এরিয়ায় দীর্ঘসময় উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে কনসার্টসহ সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে প্রক্টরিয়াল টিমের সার্বক্ষণিক নজরদারী নিশ্চিত করা, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে এবং পার্শ্ববর্তী এরিয়ায় মাদক ও নেশায় আসক্তদের উৎখাত করা, ক্যাম্পাসের সকল জায়াগায় রাতে পর্যাপ্ত আলো এবং সিসিটিভির ব্যবস্থা করা, গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের জন্য সরকারের কাছে জোরালো আবেদন ও প্রাপ্তি নিশ্চিত, গবেষণা কাজে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থপ্রদানকারী সংস্থা থেকেও অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া, প্রত্যেক বিভাগে মৌলিক গবেষণার উপর কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা, শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করতে গবেষণার জন্য আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে। শিক্ষকদের অধীনে গবেষণা সহকারী (রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট) হিসেবে কাজ করার বৈতনিক সুযোগ তৈরি করতে হবে।
গবেষনায় আগ্রহীদের গবেষণার সুযোগ প্রদান, প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে 'গবেষণা সপ্তাহ পালন করা। এতে দেশ-বিদেশের গবেষকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিভিন্ন সেশন আয়োজন, নবীন গবেষকদের গবেষণা প্রদর্শন, মৌলিক গবেষণা কোর্স ইত্যাদির আয়োজন করা, বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের জন্য শিক্ষা ঋণের ব্যবস্থা করা, ইউসি ভবন সংস্কার এবং আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া, সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য রুম বরাদ্দ করা, একই সাথে ফ্যাসিবাদের সহযোগী সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর বরাদ্দকৃত রুম বাতিল করা, ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদাভাবে নামাজের সুব্যবস্থা করতে হবে।
লাইব্রেরি সংক্রান্ত দাবির মধ্যে রয়েছে, লাইব্রেরীকে আধুনিকায়ন করে বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি, ক্যাটালগকে আধুনিকায়ন করে সহজে বই খুঁজে বের করার ব্যবস্থা করা, লাইব্রেরী থেকে বঙ্গবন্ধু কর্নার বাতিল করা, লাইব্রেরীতে একটি ইসলামী কর্নার স্থাপন করা, একই সাথে শাহজালাল রহঃ জীবন ইতিহাস ও আদর্শ জানার জন্য প্রয়োজনীয় বইয়ের ব্যবস্থারকণ, বাহির থেকে বই নিয়ে পড়ার জন্য রিডিং রুমের ব্যবস্থা করা, মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে।
ধর্মীয় উপাসনালয় সংক্রান্ত দাবির মধ্যে রয়েছে, কেন্দ্রীয় মসজিদ এবং হল মসজিদ সংস্কার করে মসজিদে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার এবং ইসলামিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা, প্রত্যেক একাডেমিক ভবন এবং লাইব্রেরী ভবনে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদাভাবে নামাজের সুব্যবস্থা করা, সকল শিক্ষার্থীর নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করা, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, হ্যান্ডবল গ্রাউন্ডের সংস্কার করা, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে গ্যালারী সংখ্যা বৃদ্ধি করা, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রকে আধুনিকায়ন করে সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে সার্বক্ষণিক অভিজ্ঞ ট্রেইনারের ব্যবস্থা করা, একটি আধুনিক সুইমিংপুল নির্মাণ করে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখতে হবে। সাঁতারের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেইনারের ব্যবস্থা করা, টেনিসকোর্টের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের জন্যও টেনিসকোর্ট উন্মুক্তকরণ করা।
মেডিক্যাল সেন্টার সংক্রান্ত দাবির মধ্যে রয়েছে, সার্বক্ষণিক ও দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং ভালো মানের ঔষধ সরবরাহ করা, অদক্ষ ডাক্তারদের অপসারণ করে মেধাবী ও বিভাগভিত্তিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
আপনার মন্তব্য