অনলাইন ডেস্ক

৩১ জুলাই, ২০১৬ ১৩:৩১

আসামের বন্যায় বাংলাদেশের ছবি, তোলপাড়

আসামের বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাদেশের বন্যার একটি ছবি জমা দেওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে আসামের সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর হাতে এ ছবি জমা দেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল। পরে অবশ্য দুঃখপ্রকাশ করলেও দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়।

এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতের আসাম রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নিয়েছে। বিষয়টি সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করতেই শনিবার রাজ্যের বন্যা উপদ্রুত এলাকাগুলোতে সফরে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। সফর শেষে মন্ত্রীর হাতে বন্যার ওপর প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন ও নয়টি ছবি তুলে দেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল। ওই ছবিগুলোর একটি ছিল বাংলাদেশের বন্যার ওপর। আর এটি নিয়েই গোটা দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। যদিও রাজ্য সরকার ভুল স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এতেই বিতর্ক থামছে না। ইতোমধ্যে ভারতের কিছু প্রধান প্রধান সংবাদ মাধ্যমে খবরটি ফলাও করে প্রকাশ পেয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথের হাতে বাংলাদেশের যে ছবিটি দেয়া হয়েছিল সেটি আসলে এবারের বন্যার নয়। এটি দু বছর আগেকার ছবি। ২০১৪ সালে এটি তুলেছিলেন ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার হাসিবুল ওয়াহাব। ওই সময়  তিনি বন্যা পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখার জন্য উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সফর করেছিলেন। সে সময় তিনি নোয়াখালী সফরের সময় এই বিখ্যাত ছবিটি তোলেন। সেই বছরের ফেব্রুয়ারিতে এটি প্রকাশ করেছিল কার্টার নিউজ এজেন্সি। তখনই ছবিটি খুব আলোচনায় এসেছিল। কেননা এটি বন্যার কোনো সাধারণ ছবি নয়। একটি মানবিক ছবি যেখানে মানুষ আর পশুর ভালোবাসা সমান্তরাল অবস্থান নিয়েছে।

ছবিতে দেখা যায় এক তরুণ একটি হরিণ শাবককে বন্যার জল থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে। শিশু হরিণটিকে বাঁচাতে তার সে কি প্রচেষ্টা। এক হাতে সে পশুটিকে উঁচু করে ধরে রেখেছে। অন্য হাতটি দিয়ে বানের জল ঠেলে ডাঙ্গায় উঠার চেষ্টা করছে। বানের পানিতে তার চোখ পর্যন্ত ডুবে গেছে। তারপরও সে পশুটিকে ছাড়েনি। নিজের জীবনের মায়া তুচ্ছ করে হরিণটিকে বাঁচিয়েছে সে। ছবির এই তরুণটির নাম বেলাল। বয়স বিশের কোঠায়।

বিষয়টি ধরিয়ে দেওয়া হলে আসাম সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ভুল স্বীকার করেন, তবে ভুলের দায় ‘কয়েকজন’ জেলা প্রশাসকের ওপর চাপিয়ে দেন; ওই জেলা প্রশাসকরাই ছবিটি রাজ্যের রাজধানীতে পাঠানোর বিষয়টি অনুমোদন করেছেন বলে দাবি করেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজ্য কর্মকর্তা বলেন, “এটি বড় ধরনের ভুল। আমরা এটি স্বীকার করছি। আসলে ছবিটির সঙ্গে কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানের পরিস্থিতির মিল থাকায় কয়েকজন ডিসি এটি আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন।”

অন্য আরেকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কাজিরাঙ্গা ও এর আশপাশের বাসিন্দারা চলতি বন্যার সময় প্রাণিদের উদ্ধার করছেন, এ কারণেই ওই কর্মকর্তারা ‘ভুলক্রমে’ এই ছবিটিকেও যুক্ত করেছেন।

উল্লেখ্য, বন্যায় আসামে ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজ্যের ৩৭ লাখ মানুষ। সূত্র: এনডিটিভি

আপনার মন্তব্য

আলোচিত