নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ মে, ২০২৪ ১৬:১৪

দিনটি আজ মায়েদের

প্রতীকী ছবি

জড়ায়ে মায়ের গলা শিশু কহে আসি,-
মা, তোমারে কত ভালোবাসি!
কত ভালবাসার ধন? জননী শুধায়।
এ-ত। বলি দুই হাত’ দেখায়।

তুমি মা আমারে ভালবাসা কতখানি?
মা বলেন “মাপ তার আমি নাহি জানি।
তবু কতখানি, বল।
যতখানি ধরে

তোমার মায়ের বুকে।
নহে তার পরে?
তার বাড়া ভালবাসা পারি না বাসিতে।
আমি পারি।” বলে শিশু হাসিতে হাসিতে!

কবি কামিনী রায় মায়ের প্রতি ভালোবাসাকে প্রকাশ করেছেন এভাবেই। শুধু কবিই নন- গায়ক লেখক শিল্পী, চিত্রকর ভাস্কর কতজন কতভাবেই না মায়ের প্রতি আপন অনুরাগ ব্যক্ত করে থাকেন।

পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুরতম শব্দ মা। মা মানে নিঃস্বার্থ স্নেহ ভালোবাসা মায়া মমতার আধার। মা মানে নির্ভরতার সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল। মায়ের ভালোবাসার কোনো ব্যাখ্যা নেই। নেই কোনো পরিমাপ। মায়ের অসীম স্নেহ রাশির তুলনা মেলে না পৃথিবীর কোনো কিছুর সাথেই। জগতের শ্রেষ্ঠতম মানবিক সম্পর্ক মা। ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ উপাদান, আত্মশুদ্ধির চেতনা, ত্যাগের উৎস আর সফলতার উৎস কেন্দ্র মা শব্দকে ঘিরেই।

আর তাইতো বিবিসি জরিপে সারা পৃথিবীতে বহুল ব্যবহৃত শব্দের শীর্ষ শব্দটিই ‘মা’।আজ বিশ্ব মা দিবস। বিশ্বের সকল মাকে সম্মান জানানোর দিন।

সকল মাকে বিশ্বের শীর্ষে বসানোর অনুমতি দেয়া এবং প্রতিটি সন্তানকে ‘মা আমি তোমাকে ভালোবাসি‘ বলার সুযোগ করার দিন। দূরে বা কাছে মা দিবসটি নিশ্চিত ভাবে প্রতিটি আত্মাকে সম্ভাব্য সকল পন্থায় তাদের মায়েদের কাছে নিয়ে আসে।

প্রতি বছর এই দিনটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয় যথাযোগ্য ভাবে। মায়ের জন্য সন্তানের ভালোবাসা প্রতিদিনের, প্রতি মূহুর্তের। তারপরও নির্দিষ্ট একটি দিন মাকে সেলিব্রেট করাই হচ্ছে মা দিবসের উদ্দেশ্য। কিন্তু কিভাবে এলো এই দিনটি? কিভাবে হলো এই দিনটির সূচনা? আর কিভাবেইবা পৃথিবীজুড়ে একটা উৎসবমুখর দিনে পরিণত হলো?

আসলে মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের চিন্তা থেকেই মা দিবসের সূচনা। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পালিত হয়ে আসছে।তবে মা দিবস উদযাপনের প্রথম চিহ্ন পাওয়া যায় গ্রিস এবং রোমে। প্রাচীন গ্রীকরা গ্রীক দেবতাদের মা রিয়ার সম্মানে উদযাপন করতো বসন্ত উৎসব।

আর রোমানরা তাদের দেবী দের মা সাইবেলীর উদ্দেশে পালন করতো বার্ষিক উৎসব। আর এটাই কালক্রমে মা মেরীর সম্মানে লেস্টের ( ইস্টার পর্যন্ত ৪০দিন)। চতুর্থ রোববারে রূপান্তর হয়ে যায় খ্রিস্টীয় উৎসবে। ইংল্যান্ড বা স্কটল্যান্ডে এই চতুর্থ রোববারই ক্রমশ: মাদারিং সানডে হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আজো গ্রেট ব্রিটেনে মাদারিং সানডে জনপ্রিয়।

আধুনিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস উদযাপনের প্রচলনের কৃতিত্বটি দেয়া হয় আনা মেরী জার্ভিস নামের এক নারীকে। তার মা আনামেরী রীভস জার্ভিস শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এক সক্রিয় কর্মী ছিলেন।তিনি যখন ১৯০৫ সালের ৯মে মৃত্যুবরণ করেন তার মেয়ে মিস জার্ভিস তার মা এবং বিশ্বের সব মাকে সম্মানিত করার জন্য একটি স্বীকৃত মা দিবস পালনের জন্য উদ্যোগী হন।

বিশেষ করে মার্কিন বাবা মাদের ক্রমবর্ধমান অবহেলার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয়ভাবে মা দিবস পালনের জন্য সূচিত করেন।তার মৃত মাকে সম্মান জানানোর জন্য ১৯০৭ সালের ১২মে অ্যান্ডুস মেথোডিস্ট চার্চে চার্চসেবার আয়োজন করেন। স্মরণসভায় সবাইকে তিনি উপহার দিয়েছিলেন সাদা কার্ণেশন। সুগন্ধি ফুল। কারণ কার্ণেশন ছিল তার মা জার্ভিসের প্রিয় ও পছন্দের ফুল।

সেই থেকে তিনি তার জীবনের পুরোটা সময় উৎসর্গ করেছেন মায়ের জন্য। শেষপর্যন্ত পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনে তার মায়ের স্মরণে একটি একটি চার্চ তৈরি করতে সমর্থ হন। মিসেস জার্ভিসের মৃত্যুদিবসে পালন করতে থাকেন মা দিবস।

১৯০৮ সালের ১০ মে আনার মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠিত হয় চার্চসেবা। পরের বছর একই রকমের সেবা অনুষ্ঠিত হয় পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া শহরে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সেটিই ছিল প্রথম মা দিবস উদযাপন। এখানেই থেমে থাকেননি জার্ভিস। দরজা থেকে দরজায় দৌড়েছেন মা দিবসকে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। কথা বলেছেন রাজনীতিবিদদের সাথে, চিঠি লিখেছেন মন্ত্রণালয়ে, ব্যবসায়ীদের কাছে। দিবসটিকে জাতীয় মা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিয়েছেন। সাফল্য আসে কয়েক বছরের মধ্যেই।

১৯১৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় রোববার সাড়ম্বরে পালিত হয়ে আসছে মা দিবস। তবে এই ঘোষণার আগে দেশটির কোনো কোনো স্থানে মা দিবস উদযাপনের তথ্য পাওয়া যায়। সে যাই হোক, ১৯১৪ সালের ওই স্বীকৃতির পথ ধরেই এটা ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর সর্বত্র। অবশ্য দেশে দেশে তারিখের পার্থক্য লক্ষ করা যায়।

সন্তানের লালনপালনসহ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলায় মায়ের অবদান অনস্বীকার্য। হয়তো এজন্য আজো মানুষের মুখে মুখে ফেরে গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীরের সে গান- এক ধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম,/পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না/এমন দরদী ভবে কেউ হবে না আমার মা গো...। মাকে নিয়ে এমন লেখা হয়েছে শত সহস্র কবিতা, গান।

মা দিবসে যদিও সুনির্দিষ্ট কোনো আনুষ্ঠানিকতা দেখা যায় না। তবু অনেকে ঘরোয়াভাবে হয়তো দিনটি উদযাপন করবেন। ফুল দিয়ে মাকে বরণ করবেন। মায়ের মুখের হাসি দেখতে কোনো কাঙ্খিত উপহার হাতে তুলে দেবেন। মাকে ঘিরে ধরে কেক কাটবেন। কেকের গায়ে লেখা থাকবে ‘হ্যাপি মাদারস ডে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত