সিলেটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

০৪ আগস্ট, ২০১৬ ১৪:৫৮

ব্রিটেনে অন্ধকার যুগের বিস্ময়কর রাজপ্রাসাদ আবিষ্কার

কিং আর্থারের কিংবদন্তীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্রিটিশ প্রত্নতাত্বিক সাইটটির রহস্যঘেরা উৎপত্তির বিষয়টি আরো রহস্যময় হয়ে উঠেছে। প্রত্নতাত্বিকরা কর্নওয়েলের টিনটাজেলে অন্ধকার যুগের একটি রাজপ্রাসাদের বিস্ময়কর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন।

ওই আবিষ্কারই এই রহস্যকে আরো ঘনীভুত করে তুলছে। এক মিটার পুরু দেয়ালের যে ধ্বংসাবশেষটি আবিষ্কার করা হয়েছে তা ৬ষ্ঠ শতকের কোনো এক ব্রিটিশ রাজার মূল বাসস্থানের প্রতিরক্ষা দেয়াল। প্রাচীন ব্রিটেনের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় অবস্থিত ওই রাজত্বের নাম ছিল ডুমনোনিয়া।

ইতিহাসবিদরা বহুদিন ধরেই এ বিষয়ে বিতর্ক করে আসছিলেন যে, রাজা আর্থার নামে সত্যিই কেউ ছিলেন কিনা। নাকি তিনি কোনো কাল্পনিক চরিত্র। কিন্তু নতুন এই আবিষ্কারের ফলে সেই বিতর্কের অবসান ঘটতে পারে। কারণ মধ্যযুগীয় ঐতিহ্যে বলা হতো, রাজা আর্থারের জন্ম হয়েছিল টিনটাজেলে; এক ব্রিটিশ রাজা এবং টিনটাজেলের স্থানীয় এক শাসকের সুন্দরী স্ত্রীর অবৈধ যৌন সম্পর্কের ফল হিসেবে। জিওফ্রে অফ মনমাউথ নামে ওয়েলসের ব্রিটিশ বংশোদ্ভুত এক যাজক তার লেখা সেরা ইতিহাস বই হিস্টোরিয়া রেজ্যুম ব্রিটানিয়া বা ব্রিটেনের রাজাদের ইতিহাস নামের বইতে কিং আর্থারের জন্মের গল্পটির উল্লেখ করেন। মধ্যযুগে লিখিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস বইগুলোর মধ্যে এটি উল্লেখযোগ্য একটি বই।

১১৩৮ সালের মধ্যে ওই বইটি লেখা শেষ হয়। যে সময়ের মধ্যে টিনটাজেলের ওই সমুদ্র উপত্যকা পরিত্যক্ত জনপদে রূপান্তরিত হয়েছে। যেখানে উল্লেখিত অন্ধকার যুগের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষটি আবিষ্কৃত হয়েছে। ওই বইতে বলা হয় ব্রিটিশ রাজা এবং টিনটাজেলের স্থানীয় শাসকের সুন্দরী স্ত্রীর মধ্যে অবৈধ যৌন মিলনের ঘটনাটি ঘটেছে একটি প্রাচীন পরিত্যক্ত রাজপ্রাসাদে। আর সেখানেই কিং আর্থারকে গর্ভে ধারণ করেন স্থানীয় শাসকের ওই সুন্দরী স্ত্রী।

প্রত্নতাত্বিকদের ধারণা টিনটাজেলে যে প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে তা ৫ম থেকে ৬ষ্ঠ শতকে অস্তিত্বমান ছিল। আর রাজা আর্থারের কিংবদন্তীও ঠিক সে সময়কালেরই। প্রত্নতাত্বিকদের এই আবিষ্কারের মূল্য অনেক। কারণ এই প্রথমবারের মতো ব্রিটেনে অন্ধকার যুগের কেন্দ্রীয় সময় ৫ম ও ৬ষ্ঠ শতকের তাৎপর্যপুর্ণ কোনো ভবনের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হলো। ভবনটি সম্ভবত ৫ম বা ৬ষ্ঠ শতকে নির্মিত হয়েছিল। তবে ৭ম শতকে এসে সেটি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এই আবিষ্কার থেকে দেড় হাজার বছর আগে ব্রিটেনের রাজ-রাজড়াদের জীবন-যাপন সম্পর্কেও অনেক নতুন তথ্য জানা সম্ভব হবে। আর সেসময়ে বিশ্ব দরবারে পশ্চিম ব্রিটেনের কী অবস্থান ছিল তাও জানা যাবে।

সেসময়ে পূর্ব ও কেন্দ্রীয় ব্রিটেনের বেশিরভাগ অঞ্চলই বর্তমান জার্মানি ও ডেনমার্ক থেকে আসা জর্মন (অ্যাংলো-স্যাক্সন) বিজেতাদের দখলে চলে গিয়েছিল। কিন্তু পশ্চিম ব্রিটেন স্থানীয় ব্রিটিশদের দখলেই ছিল। পশ্চিম ব্রিটেনের এই স্থানীয় রাজ-রাজড়ারাই রোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক অব্যাহত রাখে বা পুনরুজ্জীবিত করে। রোমানরা ৪১০ খ্রিস্টাব্দেই ব্রিটেন ছেড়ে চলে যায়। আর ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই জর্মন বর্বরদের হাতে পুরো পশ্চিম ইউরোপ হারায়। সূত্র: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট

আপনার মন্তব্য

আলোচিত