জুয়েল রাজ, যুক্তরাজ্য

২২ আগস্ট, ২০১৬ ১৫:০৭

ব্রিটেনে ‘ইসলামী জঙ্গিদের’ জন্য আলাদা কারাগার!

ব্রিটেনে  ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায়ে শাস্তি পাওয়া অপরাধীদের পুরো আলাদা কারাগারে আটকে রাখা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।  সাধারণ কারাগারে অপরাধীদের সঙ্গে তাদের আর  রাখা হবে না।  যে আলাদা কারাগারে তাদের  রাখা হবে তার নিরাপত্তা থাকবে উন্নত।

এর মধ্য দিয়ে ব্রিটেন নিজস্ব ধরনের ‘গুয়ানতানামো বে বন্দিশিবির’ সৃষ্টির জন্য অভিযুক্ত হতে পারে। তা সত্ত্বেও সরকার এমন পরিকল্পনা নিয়েই অগ্রসর হচ্ছে।

লন্ডনের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের  এক সংবাদে বলা হয়েছে, ইসলামপন্থি উগ্রবাদীদের জন্য এমন বিচ্ছিন্ন কারা ইউনিট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রিভিউ কমিশনে অনেক আগেই উত্থাপন করেছিলেন মাইকেল গোভ। তখন তিনি বৃটেনের আইনমন্ত্রী ছিলেন। তার সেই কাজ এখন নিয়েছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র আইনমন্ত্রী এলিজাবেথ ট্রুস।

ভয়ঙ্কর হিসেবে চিহ্নিত এমন বন্দিদের আটকে রাখা হয়েছে বিশেষ  আটটি জেলখানায়। সেখানে কর্মরত নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের গ্যাং তৈরি থেকে বিরত রেখেছেন। এ বিষয়ে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষজ্ঞ প্রফেসর পিটার নিউম্যান। তিনি বলেছেন, ইসলামপন্থি জঙ্গিদের আলাদা করে রাখা হলে তা হবে ‘ব্রিটিশ গুয়ানতানামো’। এ নিয়ে প্রতিবাদের একটি ইস্যু সৃষ্টি হতে পারে।

তিনি কিংস কলেজ লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব রেডিক্যালাইজেশন অ্যান্ড পলিটিকাল ভায়োলেন্স-এ কর্মরত। প্রফেসর পিটার নিউম্যান বলেছেন, ইসলামপন্থি উগ্রবাদী এসব মানুষকে এক স্থানে রাখলে তারা একটি কমান্ড স্ট্রাকচার বা কমান্ড কাঠামো তৈরি করার সুযোগ পাবে।

উল্লেখ্য, ব্রিটেনে মুসলিম বন্দির সংখ্যা ১২ হাজার ৩০০। এর মধ্যে ইসলামপন্থি উগ্রবাদী বা জঙ্গি মাত্র ১৩১ জন।

তিনি বলেছেন, সংখ্যায় তারা কম হলেও তাদের ভেতর যে বদ্ধমূল ধারণা আছে তা দিয়ে অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে। বর্তমানে ব্রিটেনে মোট বন্দির মধ্যে শতকরা প্রায় ১২ ভাগ হলো মুসলিম। গত মাসে হাউস অব কমন্সে জাস্টিস সিলেক্ট কমিটিতে হাজির হয়ে ইয়ান আচেসন সতর্ক করেছেন, জেলখানায় কমসংখ্যক বন্দি আছে, যারা অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে। জেলখানায় বিভিন্ন রকম মানুষ আছে।

তারা তাদেরকে উগ্রবাদে দীক্ষিত করতে পারে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ইসলামপন্থি জঙ্গিদের জেলখানার আলাদা ইউনিটে পৃথক করে রাখার বিষয়ে তিনি উদার। ওই সময়েই অনেকে সতর্ক করেছিলেন তাকে।

বলেছিলেন, সরকার এমন পদক্ষেপ নিলে তাতে প্রতিবাদ হতে পারে। আইনমন্ত্রী এলিজাবেথ ট্রুস বলেছেন, আমাদের সমাজের জন্য বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করেছে উদীয়মান ইসলামপন্থি জঙ্গিরা। এসব বিষাক্ত আদর্শকে মোকাবিলার জন্য আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

কারা বিষয়ক রিভিউয়ে ইসলামপন্থি উগ্রবাদীদের জন্য আলাদা জেল প্রতিষ্ঠার এমন সুপারিশ সোমবার প্রকাশ করার কথা রয়েছে ইয়ান আচেসনের। তিনি জেলখানা বিষয়ক সাবেক গভর্নর ও দাতব্য সংস্থা প্রিজনারস অ্যাবরোড-এর পরিচালক। সরকারের যুক্তি, যদি ইসলামপন্থি উগ্রবাদীদের অন্য সব অপরাধীদের সঙ্গে জেলখানায় রাখা হয় তাহলে তারা তাদের আদর্শ বন্দিদের মধ্যে বিস্তার ঘটাবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত