সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ অক্টোবর, ২০১৬ ০৩:০৫

বেকায়দায় হিলারি, ট্রাম্পশিবিরে উল্লাস

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন দশেক আগে এফবিআই প্রধানের এক চিঠিতে বেকায়দায় পড়েছেন ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। এফবিআইপ্রধান জেমস কমির গত শুক্রবার ই-মেইল তদন্তের পুরনো ঝামেলাটা নতুন করে টেনে তুল আনলেন। এতে করে উদ্বেগ ভর করেছে ডেমোক্রেটে শিবিরে, অন্যদিকে রিপাবলিকান শিবিরে নিয়ে এসেছে খুশির বার্তা।

ভোটের আগেই নতুন করে আরেক দফার ই-মেইল কেলেঙ্কারিকে ভালো চোখে দেখছেন না দলের ভোটার-সমর্থকরা। কী হয়, না হয় ভেবে হিলারির প্রচার শিবিরও শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। হিলারির বিরোধী মিছিলে নেমেছেন ট্রাম্প সমর্থকরা। 'লক হার আপ', অর্থাৎ হিলারিকে জেলে ঢোকাও, ডু ইট, ডু ইট এসব স্লোগানে রাজ্যে রাজ্যে ঢাক পেটাচ্ছে রিপাবলিকানরা।

হিলারির বিরুদ্ধে তদন্তের কথা শুনে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন রিপাবলিকানের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিউ হ্যাম্পশায়ারের এক প্রচারেও তিনি বলেছেন, হিলারির এই ই-মেইল কেলেঙ্কারি রিচার্ড নিকসনের ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির চেয়েও ভয়াবহ। ট্রাম্প আরও বলেন, 'হিলারি ক্ষমতায় থাকাকালে যে পরিমাণ দুর্নীতি করেছেন, তা আমরা এর আগে কখনও দেখিনি। আমরা তাকে তার দুর্নীতি নিয়ে ওভাল অফিসে যেতে দিতে পারি না।'

সাহস দেখানোর জন্য এফবিআইর প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেন, সম্ভবত শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার হয়েছে।

অন্যদিকে ট্রাম্পের পুত্রবধূ লারা ট্রাম্প বলছেন, হিলারির ই-মেইল তদন্তে তার শ্বশুর ট্রাম্পই এফবিআইকে বাধ্য করেছেন। শুক্রবার ডব্লিউএবিসি রেডিওতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন লারা।

তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত এ ঘটনা এখনই ঘটত না যদি তিনি (ট্রাম্প)চাপাচাপি না করতেন। কারণ প্রথম থেকেই আমার শ্বশুর বলে আসছিলেন, হিলারি প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য।

সম্প্রতি হিলারি ক্লিনটনের শীর্ষ সহযোগী হুমা আবেদীনের স্বামী সাবেক কংগ্রেসম্যান অ্যান্থনি ওয়েনারের কাছ থেকে বেশ কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করে এফবিআই। সে ডিভাইসে হিলারির কিছু ই-মেইলও পাওয়া গেছে। তাতেই ধরা পড়ে, হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে বেসরকারি সার্ভারও ব্যবহার করতেন। শুক্রবার সে বিষয়টি নিয়েই মার্কিন কংগ্রেসে চিঠি লেখেন এফবিআইপ্রধান কমি।

চিঠিতে কমি লিখেছেন, হিলারির নতুন কিছু ই-মেইল পাওয়া গেছে, যা সরকারি নয়। আগে ফাঁস হওয়া ই-মেইলের সঙ্গেও এর কোনো সম্পর্ক নেই। হিলারির বিরুদ্ধে কোনো ক্রিমিনাল চার্জও আনা হবে না। কারণ তাতে রাষ্ট্রের এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল, যা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর। তার পরও বিষয়টি তদন্তের দাবি রাখে বলে জানান কমি।

তবে প্রায় এক বছর ধরে তদন্তের পর গত জুলাই মাসে এফবিআই কংগ্রেসে প্রতিবেদন দাখিল করে। সে সময় এফবিআইপ্রধান জেমস কমি বলেন, হিলারির বিরুদ্ধে তদন্তে দোষের কিছু পাওয়া যায়নি। এখন ভোটের দিন যখন দোরগোড়ায়, ঠিক তখন নতুন করে শুক্রবার কমি কংগ্রেসের সব কমিটি চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে বলেন, অন্য একটি তদন্ত করতে গিয়ে হিলারির গোপন ই-মেইলের সন্ধান পাওয়া গেছে।

সাবেক কংগ্রেসম্যান অ্যান্থনি উইনারের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে হিলারির ওই ই-মেইলের সন্ধান মেলে। তিনি বলেন, তবে আমি এখনও নিশ্চিত নই, এই মেইলগুলো গুরুত্বপূর্ণ কি-না। এদিকে কোনো তদন্ত না করে এবং তড়িঘড়ি করে এ বিষয়ে কংগ্রেসে চিঠি দেওয়া নিয়ে তোপের মুখে পড়েছেন কমি।

শুক্রবার আইওয়ায় প্রচারকালে হিলারি বলেন, ই-মেইলে কী পাওয়া গেছে, সব খোলাসা করে বলা হোক। তিনি নিশ্চিত, নতুন তদন্তে আগের সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হবে না। হিলারি দাবি করেন, আমরা সম্ভবত জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের ১১ দিন দূরে রয়েছি। ভোটারদের অবশ্যই সব তথ্য জানাটা 'অপরিহার্য'। মার্কিন জনগণকে অবিলম্বে পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা জানাতে হবে।

এদিকে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভাগীয় প্রধানের পদক্ষেপ নিয়ে এফবিআইয়ে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। এফবিআই মনে করছে, তদন্তে অপরাধমূলক কিছু পাওয়ার আগেই কংগ্রেসকে চিঠি দিয়ে হিলারির নির্বাচনী প্রচারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেন কমি। মার্কিন কনজারভেটিভ অ্যাডভোকেসি গ্রুপ জাস্টিস ওয়াচের প্রেসিডেন্ট টম ফিটন বলেন, এটি হিলারির জন্য যেমন ক্ষতির, তেমনি কমির জন্যও।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত