সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০৩:৪৪

হিলারি-ট্রাম্প : কাকে বেছে নিচ্ছে মার্কিনীরা?

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাকে বেছে নিচ্ছে ভোটাররা সে অপেক্ষার প্রহর গোনা শেষ। আজ মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এর মাধ্যমে নির্ধারিত হবে কে হতে যাচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট।

৮ নভেম্বর ভোটগ্রহণ হলেও আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হবে ৬ জানুয়ারি ২০১৭। তবে বুধবারের মধ্যেই মিডিয়ার মাধ্যমে হোয়াইট হাউসের নতুন বাসিন্দার খবর জানতে পারবেন বিশ্ববাসী। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছাড়াও মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট, প্রতিনিধি পরিষদ, বিভিন্ন রাজ্যের গভর্নর ও স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন ও রিপাবলিকান প্রার্থী ধনকুবের ডোনাল্ড জে ট্রাম্পের মধ্যে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে আজ ভোট শুরু হবে সকাল ৬ টা থেকে ৭ টার মধ্যে। ১১ ঘণ্টা থেকে ১৩ ঘণ্টা ভোট গ্রহণ চলবে। ১৯৪৮ সাল থেকে ঐতিহ্য অনুযায়ী নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডিক্সভিল নচ এবং হার্টস লোকেশন নামের দুটি ছোট গ্রামের বাসিন্দারা প্রথম ভোট দেবেন। ঘড়ির কাটা রাত ১২টা স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গেই বুথ খুলে দেওয়া হবে। এই ভোটকে মধ্যরাতের ভোটও বলা হয়।

হিলারি ও ট্রাম্প নিয়ে সারাবিশ্ব মাতামাতি করলেও নির্বাচনে আছেন আরও প্রার্থী, লিবারটেরিয়ান পার্টির প্রার্থী গ্যারি জনসন এবং গ্রিন পার্টির জিল স্টেইনও প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হয়েছেন। তবে মুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত হিলারি ও ট্রাম্পের মধ্যে।

নির্বাচনে ভোট দেবেন ২০ থেকে ২২ কোটি ভোটার। হিলারির রানিংমেট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী টিম কেইন এবং ও ট্রাম্পের রানিংমেট মাইক পেন্স। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টরা আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন।

৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিক ভোট শুরু হলেও তিন সপ্তাহ আগে থেকেই নিয়ম অনুযায়ী ৩৮টি অঙ্গরাজ্যে আগাম ভোট শুরু হয়েছে। ডাকযোগেও ভোট দেওয়ার প্রচলন আছে। প্রায় চার কোটি আগাম ভোট পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে। এই ইলেক্টোরদের জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হয়। দেশটিতে মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে। এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ২৭০টিতে জয় পেলেই তিনি হবেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উত্তরসূরি এবং দেশটির ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। জনসংখ্যার হিসাবে ইলেক্টোরাল ভোট নির্ধারণ করা হয়। একটি রাজ্যে যিনি বেশি পপুলার ভোট পাবেন তিনি সব কয়টি ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন। কেবল ব্যতিক্রম মেইন ও নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্য ছাড়া। কোনো প্রার্থী একটি রাজ্যে ৫১ শতাংশ ভোট পেলে তিনি ওই রাজ্যের সবকয়টি ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন।

এবারের নির্বাচনে ১৩টি অঙ্গরাজ্যকে ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ হিসেবে শনাক্ত করেছে বিবিসি। কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যম ১১টিও উল্লেখ করেছে। বিবিসির ১৩ অঙ্গরাজ্যগুলো হলো - অ্যারিজোনা, কলোরাডো, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, আইওয়া, মিশিগান, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও, পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া এবং উইসকনসিন।

৬ নভেম্বরের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী এসব রাজ্যগুলোর মধ্যে সাতটিতে ট্রাম্প ও ছয়টিতে হিলারি এগিয়ে।

ট্রাম্প এগিয়ে আছেন - অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, আইওয়া, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলিনা ও ওহাইওতে।

অন্যদিকে হিলারি এগিয়ে আছেন- কলোরাডো, ফ্লোরিডা, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া ও উইসকনসিনে।

তবে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে সংখ্যার হিসেবে ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও হিলারির এগিয়ে থাকা অঙ্গরাজ্যগুলোতে ভোটার সংখ্যা বেশি থাকায় ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যাও বেশি। এবার ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলিনা, ওহাইও রাজ্যগুলো গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এসব রাজ্যের জয়-পরাজয়ই প্রেসিডেন্ট হওয়া না হওয়ার বিষয়টি নির্ধারণ করবে।

সিনেটের ১০০ সদস্যের মধ্যে ৩৪ পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ডেমোক্র্যাটদের ১০টি আসনে এবং রিপাবলিকানদের ২৪টি। ৪৩৫ প্রতিনিধি পরিষদের সবকয়টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়া ১২টি রাজ্য এবং দুটি টেরিটোরির গভর্নর, ৪৪টি রাজ্যের আইনসভা এবং মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এবারের নির্বাচনে প্রধান ইস্যু থাকবে পাঁচটি। এর মধ্যে অভিবাসন জয়-পরাজয় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অভিবাসনকেই ট্রাম্প ব্যবহার করছেন তুরুপের তাস হিসাবে। আমেরিকা আর মেক্সিকো সীমান্তে দুর্ভেদ্য দেওয়াল তুলে দেওয়ার যে আহ্বান ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার সমালোচকরা যদিও বলছেন তা অবাস্তব এবং বিশাল ব্যয়সাপেক্ষ, কিন্তু তার এই আহ্বানে সমর্থন রয়েছে রিপাবলিকান দলের। ট্রাম্প আগে বলেছিলেন আমেরিকার মাটিতে যে এক কোটি ১০ লাখের বেশি নথিবিহীন অভিবাসী রয়েছে, তাদের তিনি দেশত্যাগে বাধ্য করবেন এবং সমস্ত মুসলমানের আমেরিকায় ঢোকা বন্ধ করে দেবেন- সে বক্তব্য থেকে তিনি আপাতত সরে এসেছেন। কিন্তু তার এই নীতি তিনি পরিত্যাগ করেননি।

হিলারি বলেছেন, আমেরিকায় নথিবিহীন যেসব অভিবাসী ও তাদের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একপাক্ষিকভাবে নির্বাহী ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তাদের থাকার বিষয়কে বৈধতার দেবার যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে চান। তিনি অভিবাসন নীতির সার্বিক সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যান্য ইস্যুর মধ্যে রয়েছে পররাষ্ট্র নীতি, শরণার্থী, জলবায়ু পরিবর্তন এবং গর্ভপাত।

১৯৮৪ থেকে সফলভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে আসছেন অ্যালান লিঞ্চম্যান। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক একাধিক কারণ ব্যাখ্যা করে ট্রাম্পের পক্ষে রায় দিয়েছেন। কিন্তু তিনিও ফল নিয়ে খুব একটা নিশ্চিন্ত নন এবার।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৭৮৯ সালে প্রথম নির্বাচনে জর্জ ওয়াশিংটন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই সময় নারীদের কোনো ভোটাধিকারই ছিল না। আজকে নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের সামনে এবার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার হাতছানি। হিলারি ক্লিনটন নির্বাচিত হলে তিনিই হবেন দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।

জর্জ ওয়াশিংটন প্রথম প্রেসিডেন্ট হওয়ার সময়ে মাত্র ছয় শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। তখন দেশটিতে ছিল মাত্র ১৩টি রাজ্য। ২১ বছরের বেশি বয়সী পুরুষরাই ভোট দিতে পারতেন। এখন যুক্তরাষ্ট্রে ৫০টি রাজ্যের ১৮ বছরের বেশি বয়সী নারী-পুরুষ সবাই ভোটার।

প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ছাড়াও দেশটির পার্লামেন্ট কংগ্রেসে নিম্নকক্ষে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ রয়েছেন ৪৩৫ জন এবং উচ্চকক্ষ সিনেটে ১০০ জন প্রতিনিধি রয়েছেন। তারাও ভোটে নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বয়স হতে হবে কমপক্ষে ৩৫ বছর। সিনেটরের বয়স কমপক্ষে ৩০ বছর আর নিম্নকক্ষের রিপ্রেজেন্টেটিভ হতে বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২৫ বছর।

প্রতি চার বছর পরপর নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবারের পরের মঙ্গলবারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে থাকে। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে দুই মেয়াদের বেশি কেউ নির্বাচিত হতে পারবেন না।

১৮ ও ১৯ শতক-জুড়ে ডেমোক্রেটিক আর রিপাবলিকান পার্টিই ঘুরেফিরে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় গেছে। তৃতীয় কোনো রাজনৈতিক দল দেশটিতে দাঁড়াতে পারেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মনোনয়ন প্রক্রিয়াও অভিনব। দুই দলই নির্বাচনের আগে দলীয় সম্মেলনের আয়োজন করে। তারপর বিভিন্ন রাজ্যে প্রাইমারি ও ককাসের মাধ্যমে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়।

ভোটারদের সরাসরি ভোটে জয়ী হলেও সব সময় প্রার্থী প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন এমন নয়। ১৮২৪ সালে এবং সাম্প্রতিককালে ২০০০ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ আর আল গোরের নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ভোটে বিজয়ীরা প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। কেননা যুক্তরাষ্ট্রে ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি রয়েছে। ৫৩৮ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট ডিসেম্বরের ১৫ তারিখে হয়। জানুয়ারিতে ঘোষণা হয় ফলাফল। রাজ্যের বেশিরভাগ ভোটার যেদিকে ভোট দিয়েছেন সেই পক্ষেই ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটাররা ভোট দিয়ে থাকেন।

এবারের নির্বাচনকে ঘিরে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দুই প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। এখন দেখার বিষয় কাকে বেছে নিচ্ছেন মার্কিনীরা, কে হতে যাচ্ছে হোয়াইট হাউসের নয়া বাসিন্দা?

আপনার মন্তব্য

আলোচিত