সিলেটটুডে ডেস্ক

০৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০২:২১

পারবেন কি হিলারী?

দুই প্রার্থীর তীব্র প্রচারযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্ব ছিল ভোটযুদ্ধ। এখন ফলাফলের অপেক্ষা। প্রায় আড়াইশো বছরের ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্র কি প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছে—তা জানতে উদগ্রীব গোটা বিশ্ব।

ইউএস আইল্যান্ড অব গুয়ামে ভোটগ্রহণ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। গুয়ামে মোট ভোট পড়েছে ৩২ হাজার ৭১টি। এর মধ্যে ৭১ দশমিক ৬৩ শতাংশ পেয়েছেন হিলারি। আর ট্রাম্পের পক্ষে পড়েছে ২৪ দশমিক ১৬ শতাংশ ভোট। তবে কোনো ইলেকটোরাল ভোট না থাকায় গুয়ামের ভোট মূল নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

নিউহ্যাম্পশায়ারের তিনটি ভোটকেন্দ্রের ফলাফলও পাওয়া গেছে। এসব ভোটকেন্দ্রে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। তিনটির মধ্যে দুটিতে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। এদিকে একটি কেন্দ্রে ট্রাম্প জিতলেও মোট ভোটের হিসাবে পেছনে ফেলেছেন হিলারিকে। তবে বিভিন্ন জরিপকারী সংস্থা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নির্বাচনে হিলারির জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ৯০ শতাংশ।

সময়চক্রের ভিন্নতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ অঙ্গরাজ্যের একেকটিতে একেক সময় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সাধারণত গ্রিনিচ মান সময় বেলা ১১টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। অঙ্গরাজ্যভেদে এটি মধ্যরাত পর্যন্ত চলে। এ হিসাবে সবগুলো অঙ্গরাজ্যে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হতেই বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা-৮টা বেজে যাবে। ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর পরই সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যে সম্ভাব্য বিজয়ী প্রার্থী সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে। কারণ তখনো বাকি থাকবে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট।

এরই মধ্যে নিউহ্যাম্পশায়ারের তিনটি কেন্দ্রের ফল জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ডিক্সভিল নচ। প্রথা মেনেই এ কেন্দ্রের ভোটাররা গতকাল প্রথম প্রহরে (মধ্যরাতে) তাদের রায় দিয়ে দিয়েছেন। স্কি রিসোর্টের ভোটকেন্দ্রে এ অঞ্চলের ভোটাররা মধ্যরাতেই এসে জড়ো হন। ভোটগ্রহণ সম্পন্নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই এর ফল প্রকাশ করা হয়। এ কেন্দ্রে জমা পড়া আটটি ব্যালটের মধ্যে চারটি গেছে হিলারির পক্ষে। ট্রাম্পের পক্ষে পড়েছে দুটি।

আর বাকি দুটির একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী গ্যারি জনসন ও আরেকটিতে বার্নি স্যান্ডার্সের নাম রয়েছে। স্যান্ডার্সের নাম উঠে এসেছে অন্য কেন্দ্রেও।

ভোট দিয়েছেন কাছাকাছি এলাকা মিলসফিল্ডের বাসিন্দারাও। এখানে ট্রাম্প ১৬-৪ ভোটে হারিয়েছেন হিলারিকে। এখানেও একটি ব্যালটে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে মনোনয়ন না পাওয়া বার্নি স্যান্ডার্সের নাম উঠে এসেছে। আরেক কেন্দ্র হার্টস লোকেশনে হিলারি অল্প ব্যবধানে পরাজিত করেছেন ট্রাম্পকে। এখানে তিনি পেয়েছেন ১৭ ভোট। এর বিপরীতে ট্রাম্প পেয়েছেন ১৪ ভোট। এখানেও দুই ব্যালটে স্যান্ডার্সের নাম দেখা গেছে। তিনটির দুটিতে হিলারি জিতলেও, সার্বিকভাবে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্পই।

এদিকে এরই মধ্যে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি নিজের ভোট প্রদান করেছেন বলে জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইল। নিউইয়র্কের চাপ্পাক কেন্দ্রে তিনি ভোট প্রদান করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। ভোট প্রদানের পর হিলারি বলেন, ‘এটা একটা অভাবিত মুহূর্ত। আমি জানি এ ভোট কতটা দায়িত্ববোধের পরিচায়ক। কত মানুষ এ নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আজ আমি বিজয়ী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করলে দেশের জন্য সর্বোচ্চ সক্ষমতা নিয়ে কাজ করব।’

একটু দেরি করেই ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন ট্রাম্প। স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে তিনি নিউইয়র্কে তার নির্বাচনী সদর দপ্তর থেকে কিছু দূরে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হন। গোপন কক্ষে ভোট প্রদানের পর ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ম্যালানিয়া ট্রাম্প, কন্যা ইভানকা ও নাতনি আরাবেল্লা। এ সময় ট্রাম্পের নির্বাচনী মুখপাত্র হোপ হিকসও উপস্থিত ছিলেন।

ভোট প্রদানের আগে ফ্রেন্ড অব ফক্স অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে ট্রাম্প জানান, ‘অবশ্যই আমি নিজেকেই ভোট দেব।’ ওই সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের ফলাফল আমি মেনে নেব।’ তবে এক্ষেত্রে তিনি একটি কিন্তুও রেখে দেন, আর তা হলো ‘যথাযথ নির্বাচন প্রক্রিয়া’।

এর আগেই ইন্ডিয়ানার গভর্নর ও রিপাবলিকান পার্টি থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মাইক পেন্স নিজ কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেন। আর ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন ভোট দিয়েছেন উইলমিংটনে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তিন কেন্দ্রের ভোটের ফলে ডেমোক্র্যাট সমর্থকরা উজ্জীবিত হয়ে উঠতেই পারেন। কারণ এর আগের নির্বাচনগুলোয় দেখা গেছে, ডিক্সভিল নচ কেন্দ্রে বিজয়ীরাই শেষ পর্যন্ত হোয়াইট হাউজে প্রবেশাধিকার পেয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে হিলারি স্বস্তিবোধ করতেই পারেন। কিন্তু অস্বস্তিরও বিষয় রয়েছে। আর তা আসছে স্যান্ডার্সের সমর্থকদের দিক থেকে। স্যান্ডার্সের অনুসারীদের একটি বড় অংশ হিলারিকে ভোট দেবেন না বলে আগে থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তিন কেন্দ্রের ভোটের ফলেও এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। চারজন স্যান্ডার্স প্রার্থী যে হিলারির পক্ষে রায় দেননি, তা তো এখন দৃশ্যমানই।

কিন্তু পপুলার ভোটের হিসাব যা-ই হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন ইলেকটোরাল কলেজ সদস্যরা। দেশটির ৫০ অঙ্গরাজ্য ও রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি মিলিয়ে মোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ সদস্য রয়েছেন। এসব সদস্যের সরাসরি ভোটেই নির্বাচিত হন দেশটির প্রেসিডেন্ট। এজন্য একজন প্রার্থীকে অন্তত ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়। ভোটারদের দেয়া ভোটে নির্বাচিত হন সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল কলেজ সদস্যরা। এর মধ্যে মেইন ও নেব্রাস্কা বাদে অন্যসব অঙ্গরাজ্যে সরাসরি ভোটে বিজয়ীরা ইলেকটোরাল ভোটের সবগুলো পেয়ে থাকেন। আর মেইন ও নেব্রাস্কায় এটি ভাগ হয় সংখ্যানুপাতিক হারে। এখন পর্যন্ত নিউহ্যাম্পশায়ারের তিনটি কেন্দ্রের ভোটের ফল জানা গেছে। জনসংখ্যা অনুপাতে এ অঙ্গরাজ্য থেকে চারজন ইলেকটোরাল সদস্য নির্বাচিত হবেন।

বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ইলেকটোরাল কলেজে সবচেয়ে বেশি ভোট রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ায়, ৫৫টি। এর পরই রয়েছে টেক্সাস ও নিউইয়র্কে। এ দুটি অঙ্গরাজ্যে যথাক্রমে ৩৮ ও ২৯টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে। তবে ইলেকটোরাল ভোটের ক্ষেত্রে ফল নির্ধারণী ভূমিকা পালন করবে মূলত ফ্লোরিডা, পেনসিলভানিয়া ও ওহাইয়ো। এ তিন অনির্ধারিত অঙ্গরাজ্যের ভোটের ওপরই নির্ভর করবে অনেক কিছু। এক্ষেত্রে হিলারি নিশ্চিতভাবেই এগিয়ে রয়েছেন। জরিপের ফলাফল উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে, হিলারি মোট ৩০৩টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে পারেন। তবে বড় কোনো একটি অঙ্গরাজ্যে অভাবিত কিছু হয়ে গেলে বদলে যেতে পারে যাবতীয় হিসাব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত