অনলাইন প্রতিবেদক

১১ নভেম্বর, ২০১৬ ০৩:৩০

ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে এখনও যে বাধা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে পপুলার ভোট কম পেয়েও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রীতি অনুযায়ি নির্বাচিত হয়েছেন এ ধনকুবের।

৮ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮তম নির্বাচনে ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ৪৯ রাজ্যের ভোটের হিসাবে ট্রাম্প ২৯০টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে হিলারি ক্লিনটন পেয়েছেন ২৩২ ইলেকটোরাল ভোট। ফল ঘোষণার বাকি আছে কেবল মিশিগান অঙ্গরাজ্যের যেখানে বাকি রয়েছে ১৬টি ইলেকটোরাল ভোট; ওখানে যেই জিতুক না কেন তাতে নির্বাচনী ফলাফলের কোন হেরফের হবে না, কারণ প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় ২৭০টি ভোট আগেই পেয়েছেন ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন রাজ্যে ডেমোক্রেট সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। ভাঙনের সুর বাজছে আমেরিকায়। প্রথমে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যটি আমেরিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এ রাজ্যে হিলারি জয়ী হয়েছিলেন। ক্যালিফোর্নিয়ার জনগণের দাবি, তার আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে অন্য অঙ্গরাজ্যগুলোর মিল নেই। তাই আমেরিকা থেকে বেরিয়ে যাবে তারা।

ক্যালিফোর্নিয়ায় ডেমোক্রেটদের এই বিক্ষোভ অন্য অঙ্গরাজ্যগুলিতেও ছড়িয়ে পড়েছে। হিলারি সমর্থকরা জানিয়েছেন, ট্রাম্পকে তারা কিছুতেই প্রেসিডেন্ট মানতে পারবেন না।

হেরে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সমর্থকদের চেয়ে কম কষ্ট পাননি হিলারি। বলেছেন, এ হার তাকে দীর্ঘদিন ধরে বেদনা দেবে। যদিও তিনি সমর্থকদের প্রতি ট্রাম্পকে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার আমেরিকার প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক পোস্ট জানায়, হিলারির মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই শেষ হয়ে যায়নি। এখনও একটি উপায়ে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করতে পারেন। কী সেই উপায়? সে উপায় বেশ জটিল। এই পদ্ধতিতে সুযোগ থাকলেও খুব কমই এ পদ্ধতিতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী ইলেকটোরাল কলেজের নির্বাচিত ইলেকটররাই সত্যিকারের ভোটার যারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন।

এ বছর ১৯ ডিসেম্বর তার নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দেবেন। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কাউকে ভোট দেওয়ার জন্য তারা বাধ্য নন। এসব ইলেকটররা চাইলেই একত্রিত হয়েই হিলারিকে প্রেসিডেন্টের আসনে বসাতে পারেন।

এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অন্য এক আশঙ্কা সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রতারণার এক মামলায় আগামী ২৮ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে তাকে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালতে হাজির হতে হবে। সান ডিয়াগো ফেডারেল কোর্টে হাজির হতে তাকে নোটিস দেওয়া হয়েছে বলে অ‌্যাটর্নি প্যাট্রিক জে কলিন জানিয়েছেন।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে অঙ্গরাজ্যে এ মামলাটি চলছে সেখানে ডেমোক্রেটরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন, এমনকি তারা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মানতে নারাজ দাবি করে জানাচ্ছেন প্রয়োজনে তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরে যেতে চান। আর অন্য এক আশংকার বিষয় হচ্ছে যে আদালতে এ বিচার চলছে সে আদালতের বিচারক একজন মেক্সিকান। আর নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই মেক্সিকানদের ‘ধর্ষক ও সন্ত্রাসী’ বলে আসছিলেন ট্রাম্প। ক্ষমতায় গেলে দেশটির সঙ্গে থাকা সীমান্তে দেয়াল তুলে দেওয়ারও ঘোষণাও দেন এ রিপাবলিকান।

শুরু থেকেই ট্রাম্প এ মামলার বিচারক গঞ্জালো পি কিউরিয়েলের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছেন বলে নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিচারক মেক্সিকান বংশোদ্ভূত হওয়ায় মামলায় ন্যায়বিচার পাবেন না বলে মনে করেছেন ট্রাম্প।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ট্রাম্প তার আগে বিষয়টি মিটমাট করে নিলে তা এড়াতে পারবেন। ধনকুবের ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন বিলুপ্ত ট্রাম্প ইউনিভার্সিটির একদল শিক্ষার্থী। তাদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডিগ্রির মর্যাদার তুলনায় অতিরিক্ত অর্থ নিয়েছে এবং ট্রাম্প এ বিষয়টি জানতেন। এ বছরের অগাস্টে মামলাটি হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত তার কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদন জানিয়েছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবীরা। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর নভেম্বরের ২৮ তারিখ ট্রাম্পের হাজিরার দিন ঠিক করা হয়েছে বলে জানান কলিন।

উল্লেখ্য, আমেরিকার আইনে প্রেসিডেন্ট সব আইনের ঊর্ধ্বে, কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার আগে করা অপরাধের দায় থেকে অব্যাহতি পাবেন না। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে এক অভিযোগের শুনানি শেষে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এ বিধান দেয়।

এখন দেখার বিষয় ট্রাম্প সব দিক কীভাবে সামলান? আর নির্বিঘ্নে ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারেন কিনা? আর তার জন্যে অপেক্ষা করতে হচ্ছে আগামী জানুয়ারি পর্যন্তই!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত