সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ২১:০২

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

মিয়ানমারের সংকটপূর্ণ রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে দেশটি রাখাইনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অব্যাহত সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ দিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

শুক্রবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে যেসব শরণার্থী বাংলাদেশের ইতিমধ্যে উপচে পড়া ক্যাম্পগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে তারা সবাই হত্যা, ধর্ষণ ও ব্যাপক অগ্নিসংযোগের ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছে।

এদিন জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে পুলিশের বেশ কিছু চৌকিতে হামলার পর সেখানে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো অভিযান শুরুর পর সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতিতে গত দুই সপ্তাহে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

মিয়ানমারের এই রোহিঙ্গা সংকট বৃহস্পতিবার মার্কিন সরকারের অবস্থান জানান দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের মুখমাত্র হিদার নোয়ার্ট। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া এবং নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের সহিংস কর্মকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগের প্রেক্ষাপটে সেখানে (রাখাইনে) উল্লেখযোগ্য মাত্রায় স্থানীয় লোকজনের স্থানান্তর ঘটেছে।'

'আমরা আবারও মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ওপর ভয়াহব হামলার নিন্দা জানাই, তবে একই সঙ্গে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে এসব বাহিনীর প্রতি স্থানীয় লোকজনের ওপর আর কোনো হামলা না করার আহ্বান জানাচ্ছি।'
রাখাইনে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির পর সেখান থেকে পালিয়ে দলে দলে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। বৃহস্পতিবার তোলা ছবি

মিয়ানমারের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে গত ২৫ আগস্ট পুলিশের বেশ কিছু চৌকিতে হামলার পর সেখানে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। গ্রামের পর গ্রাম রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পুরুষদের গুলি ও গলা কেটে হত্যা এবং নারীদের ধর্ষণ ও নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে।

রাখাইনে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া ও বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুসহ সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতির জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা জঙ্গিদের দায়ী করলেও সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছে, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটি থেকে রোহিঙ্গাদের সমূলে বিতারিত করার চেষ্টা করছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বেসামরিক রোহিঙ্গা নাগরিকদের রক্ষা করতে বাংলাদেশ, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের মতো বিশ্বের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর পক্ষ হতে শান্তিতে নোবেলজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির ওপর চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। এমনকি সুচির নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেওয়ারও দাবি উঠেছে।

এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে এ বিষয়ে সুচি বলেন, 'আমাদেরকে আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে হবে। আমাদের দেশে থাকা প্রত্যেককেই আমাদের সুরক্ষা দিতে হবে, তারা আমাদের নাগরিক হোক বা না হোক।'

তিনি বলেন, 'অবশ্যই আমাদের সম্পদ যথাযথ নয়, যেমনটা আমরা চাই। তারপরও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করছি এবং সবাই আইনের সুরক্ষায় থাকুক সেটা নিশ্চিত করতে চাই আমরা।'

অং সান সুচি বলেন, রাখাইন রাজ্যের এই সংকট বেশ কয়েক দশক ধরেই চলছে। আর তাই ক্ষমতায় আসার মাত্র ১৮ মাসের মধ্যে তার প্রশাসন এই সংকটের সমাধান করে ফেলবে— এটা আশা করা 'কিছুটা অযৌক্তিক'।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত