সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ নভেম্বর, ২০২০ ১৮:১৩

মুক্তিযুদ্ধের অস্ত্র বিক্রি ও হস্তান্তরে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ব্যবহৃত অস্ত্র বিক্রি ও হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের শুনানি নিয়ে রুলসহ এই আদেশ দেন।

গত ৫ অক্টোবর প্রথম আলোতে ‘মুক্তিযুদ্ধের অস্ত্র বেচতে চায় সরকার’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এরপর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্রগুলো জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জে আই খান পান্না এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে ১৫ নভেম্বর একটি রিট করা হয়।

মঙ্গলবার আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শামছ্‌ উদ্দিন বাবুল। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন ও মো. শাহিনুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট নির্দেশনাসহ আদেশ দেন।

একই সঙ্গে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্রগুলো জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে বিবাদীদের ছয় মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্রগুলো বিক্রি ও হস্তান্তরের কার্যক্রম কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়ে হাইকোর্ট রুল দিয়েছেন।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্রগুলো জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ বিষয়েও রুল দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি ওই সব অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বা মুক্তিযুদ্ধসংশ্লিষ্ট অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তরের জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—এ মর্মে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।

প্রতিরক্ষাসচিব, অর্থসচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বাণিজ্যসচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, “মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত হয়েছে, এমন আগ্নেয়াস্ত্রগুলো সরকার বেচে দিতে চায়। সরকারের যুক্তি হচ্ছে এগুলো পুরোনো, অপ্রচলিত এবং যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে অকার্যকর। ফলে রাখার কোনো দরকার নেই। প্রাচীন নিদর্শন বা স্মৃতিচিহ্ন (অ্যান্টিক সুভ্যেনির) হিসেবে অস্ত্রগুলো কিনে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ও সুইজারল্যান্ডের একটি অস্ত্র আমদানিকারক কোম্পানি।

“পুরোনোর পাশাপাশি নতুন অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানিরও উদ্যোগ রয়েছে সরকারের। প্রথম উদ্যোগটি নেওয়া হয় ১৬ বছর আগে। এ বিষয় নিয়ে আবারও নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।”

ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে তৈরি ০.৩০৩ রাইফেল নম্বর-৪ এমকে-১; ৯ এমএম স্টেন এসএমজি এমকে-২ ও সিএম ৯ এমএম স্টেন এ১; ভারতে তৈরি ৭.৬২ এমএম এসটিআর এল১ এ১ /১ এ ১ ও রাইফেল জি-৩; পাকিস্তানে তৈরি ৪৪ এমএম হ্যান্ড লঞ্চার এম-৫৭; যুক্তরাষ্ট্র/রাশিয়া/জাপানে তৈরি পিস্তল ও রিভলবার ৭০০ এবং জার্মানি/যুক্তরাজ্য/ভারতে তৈরি এলএমজি এইচকে ১১ এ১ সিএএল ৭.৬২ * ৫১ রয়েছে রপ্তানি করতে চাওয়া পুরোনো অস্ত্রগুলোর মধ্যে।

আট শ্রেণি মিলিয়ে অস্ত্রের মোট সংখ্যা ২৭ হাজার ৬৬২টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৪ হাজার ৪৫৪টি হচ্ছে ০.৩০৩ রাইফেল নম্বর-৪ এমকে-১। আর সবচেয়ে কম ১১৫টি হচ্ছে ৪৪ এমএম হ্যান্ড লঞ্চার এম-৫৭।

বিদ্যমান রপ্তানি নীতিতে বাংলাদেশ থেকে নতুন-পুরনো কোনো ধরনের অস্ত্র রপ্তানিরই সুযোগ নেই। বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ‘অস্ত্র ছাড়া সবকিছু’ নীতি অনুসরণ করে আসছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত