সিলেটটুডে ডেস্ক

২৩ আগস্ট, ২০১৬ ২২:০৪

বুধবারের কার্যতালিকায় মীর কাসেমের শুনানি, যুদ্ধাপরাধীপক্ষের সময়ের আবেদন

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায় আসার পর সে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন (রিভিউ) শুনানি আবারও পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছে মীর কাসেমের আইনজীবীরা। শীর্ষ এ যুদ্ধাপরাধীর রিভিউ আবেদন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বুধবারের কার্যতালিকায় শুনানির জন্যে ৫ নং ক্রমিকে রয়েছে।

এর আগে প্রস্তুতির জন্য এক মাস সময় পেয়েছিল কাসেমের আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।

শুনানির জন্য আসা রিভিউ আবেদনের সঙ্গে শুনানি মুলতবির আবেদনের বিষয়টিও রাখা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বুধবারের কার্যতালিকায়।

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর গত ৮ মার্চ আপিলের রায়ে ওই সাজাই বহাল থাকে। ৬ জুন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য ১৯ জুন আবেদন করেন মীর কাসেম।

রাষ্ট্রপক্ষ এরপর রিভিউ শুনানির দিন ধার্যের জন্য আবেদন করে ।এর ধারাবাহিকতায় ২১ জুন চেম্বার বিচারপতি বিষয়টি নিয়মিত আপিল বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান।

মামলাটি ২৫ জুলাইয়ের কার্যতালিকায় আসার পর মীর কাসেমের আইনজীবীর সময়ের আবেদনে শুনানি পিছিয়ে যায়। আসামিপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সেদিন বলেন, “প্রস্তুতির জন্য আমরা দুই মাস সময় চেয়েছিলাম। আদালত এক মাস দিয়েছে। ২৪ অগাস্ট শুনানির তারিখ দিয়েছে।”

জামায়াতের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত মীর কাসেমের আইনি লড়াইয়ের এটাই শেষ সুযোগ। রিভিউ আবেদন নাকচ হলে ফাঁসি এড়াতে তিনি শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। রিভিউ খারিজ হলে এবং তিনি প্রাণভিক্ষা না চাইলে কিংবা আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে কোনো বাধা থাকবে না। ৬৩ বছর বয়সী মীর কাসেম এখন আছেন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে।

দণ্ড মওকুফ চেয়ে ৮৬ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি তুলে ধরেছেন মীর কাসেম। রিভিউ দায়েরের পর তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, এতে ‘ন্যায়বিচার’ পাবেন বলে তারা ‘প্রত্যাশা’ করছেন। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অতীত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ফৌজদারি মামলায় পুনর্বিবেচনায় রায় বদলের খুবই ‘খুবই সীমিত’।

ট্রাইব্যুনালে তিন বিচারকের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এ অভিযোগে মীর কাসেমের ফাঁসির রায় হয়। আপিলেও তা বহাল থাকে। এছাড়া আরও ছয় অভিযোগে মোট ৫৮ বছরের কারাদণ্ডের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলে নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে কাসেমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার যুদ্ধাপরাধের বিচার। এ মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাসেমকে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তানের খান সেনাদের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হওয়া ‘বাঙালি খান’ হিসাবে, যিনি সে সময় জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় ছাত্রসংঘের বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে গঠিত সশস্ত্র আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার হিসেবে মীর কাসেম যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান, তা উঠে এসেছে রায়ে।

একাত্তরে মীর কাসেমের নির্দেশেই চট্টগ্রাম টেলিগ্রাফ অফিস সংলগ্ন এলাকায় হিন্দু মালিকানাধীন মহামায়া ভবন দখল করে নাম দেওয়া হয় ডালিম হোটেল। সেখানে গড়ে তোলা হয় বদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঘাঁটি এবং বন্দিশিবির। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে সেই ডালিম হোটেলকে বলা হয় ‘ডেথ ফ্যাক্টরি’। ডালিম হোটেল ছাড়াও নগরীর চাক্তাই চামড়ার গুদামের দোস্ত মোহাম্মদ বিল্ডিং, দেওয়ান হাটের দেওয়ান হোটেল ও পাঁচলাইশ এলাকার সালমা মঞ্জিলে বদর বাহিনীর আলাদা ক্যাম্প ও নির্যাতন কেন্দ্র ছিল সে সময়।

যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতদের মধ্যে মীর কাসেমের আগে রিভিউ করে বিফল হয়েছিলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মো. মুজাহিদ, মো. কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লা। রিভিউ খারিজের পর তাদের সবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সর্বশেষ গত মে মাসে নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজের ছয় দিনের মাথায় তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

মীর কাসেমের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ১১ নং অভিযোগে আপিল বিভাগ ফাঁসি দেন :

১৯৭১ সালে ঈদুল ফিতরের পরের যে কোনো একদিন মীর কাসেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম শহরের কোনো এক অজ্ঞাত স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। তাকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলে জসিমের মৃত্যু হলে আরো পাঁচজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশসহ তার মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত