সিলেটটুডে ডেস্ক

০৫ জুন, ২০২০ ২১:৪৬

প্রতারণার অভিযোগের পর স্ত্রীর বিরুদ্ধে সাংসদ এনামুলের মামলা

রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হকের বিরুদ্ধে গোপনে বিয়ে করে প্রতারণা ও ভ্রূণ হত্যার অভিযোগ তোলায় আয়েশা আক্তার লিজার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে। সাংসদের পক্ষে মামলাটি করেছেন তার একান্ত সহকারী ও বাগমারা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ।

লিজা ফেসবুকে ছবি দিয়ে বিচার চাওয়ায় এর আগে সংসদ সদস্য এনামুল তাকে তালাক দেন। এবার তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হলো। রাজশাহীর বাগমারা থানায় এ মামলা হয়। এদিকে, তালাক নোটিশ এখনও পাননি জানিয়ে সাংসদ এনামুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী বলছেন আইনত তিনটি পাওয়ার পর তালাক চূড়ান্ত হয়। 

বাগমারা থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর সাংসদ এনামুল হকের পক্ষে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ও চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করেছেন তার একান্ত সহকারী আসাদুজ্জামান আসাদ। এতে আসামি করা হয়েছে এনামুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা আক্তার লিজাকে।

বিজ্ঞাপন

মামলায় বলা হয়েছে, আয়েশা আক্তার লিজাকে তালাক দেওয়ার পর তিনি তার স্বামী সাংসদ এনামুল হকের কাছে নিজের ব্যাংক লোনের এক কোটি টাকা পরিশোধের জন্য চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি দিয়ে সাংসদ এনামুল হকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে তার সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছেন।

পুলিশ লিজাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে বলে জানান বাগমারা থানার ওসি।

মামলা প্রসঙ্গে সাংসদ এনামুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা আক্তার লিজা বলেন, 'আমাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার এবং মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তার অংশ হিসেবেই আমার নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'আইনগত আমি এখনো সাংসদ এনামুল হকের বৈধ স্ত্রী। আমাকে তালাকের প্রথম নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। এখনো নোটিশ হাতে পাইনি। পরপর তিনটি নোটিশ তিন মাসে আসার পর তালাক চূড়ান্ত হয়। আমাকে তালাক দেওয়ার বিষয়টি শুনতে পেয়ে আমি ন্যায় বিচার চেয়ে আমার স্বামীর সঙ্গে ফেসবুকে ছবি দিয়েছি। এতে তার একার পক্ষে মান সম্মান নষ্ট হবার কথা নয়। যেহেতু আমরা বৈধ স্বামী-স্ত্রী।'

লিজা বলেন, 'দীর্ঘ আট বছর বিয়ের নামে নাটক করে আমার সঙ্গে সে ঘর সংসার করেছে। এত বছর পর যখন স্বামীর স্বীকৃতি চাইলাম বাচ্চা চাইলাম তখন আমাকে তালাক দেওয়া হয়। আমার সঙ্গে নির্মম আচরণ, মানুষিক নির্যাতন ও আমার বাচ্চা নষ্ট করা হয়। এসব বিষয় জনসম্মুখে আনার পরই এখন মামলা দেওয়া হলো। এভাবে আমার বিচার চাওয়ার পথ এমপি এনামুল হক থামিয়ে দিতে চায়। আমাকে গ্রেপ্তার করা হলে আমার পক্ষে আর বিচার চাওয়ার কেউ থাকবে না। এজন্যই মিথ্যা মামলা দেয়া হলো।'

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহীর মহিলা আইনজীবী সমিতি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিচার চাওয়ার কথা ছিলো আমার। এরপরই মামলা করার কথা ছিলো। কিন্তু নগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা আমাকে ফোন করে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা করা এবং সংবাদ সম্মেলন না করার জন্য বলেন। বলা হয়েছিলো ২৪ ঘণ্টার মধ্য তিনি সমঝোতা করে দেবেন। কিন্তু আমাকে থামিয়ে এখন পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলা দেওয়া হলো।

বিজ্ঞাপন

চাঁদা চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সাংসদ এনামুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি নাকি তাকে ব্লাকমেইল করে চাঁদাবাজি করে ৫ তলা বাড়ি করেছি। এরই প্রেক্ষিতে আমি বলেছিলাম, তাকে বিয়ে করার আগেই আমার ৩ তলা বাড়ি ছিল। বিয়ের পর ব্যাংকে কোটি টাকার উপরে ঋণ নিয়েছি। এজন্যই এই অভিযোগ এনেছে। অথচ এমপি এনামুল নিজেই আমাকে মেসেজ দিয়ে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছে। সেই মেসেজ আমার কাছে এখনো আছে। আমিও তার নামে মামলা করবো।

এদিকে আয়েশা আক্তার লিজা সাংসদ এনামুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের নামে প্রতারণা ও ভ্রূণ হত্যার অভিযোগ এনে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। লিজার অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান দিল সেতারা চুনি বলেন, প্রতারণামূলক বিয়ে, বাচ্চা নষ্ট করা এবং রাজনৈতিক কারণে বিয়ে গোপন করতে বলে লিজার সাথে ঘর সংসার করেন এমপি এনামুল হক। পরে যখন সন্তান এবং স্বীকৃতি দাবি করেন, তখন লিজার স্বাক্ষর জাল করে একটি তালাকের কাগজ দেখান। এতে বলা হয় লিজাই তালাক দিয়েছেন। পরে বলা হয় এনামুল হক তালাক দিয়েছেন। এরপর থেকেই এনামুল হকের অনুসারীরা লিজাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তারা নিজেরা দুজনই বিবাহিত ছিলেন। দুজনই বিয়ে করেছেন। এখন তাদের কাগজপত্র যাচাই করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাগজ পর্যালোচনা করছি। সূত্র: সমকাল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত