নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ অক্টোবর, ২০২০ ১৫:৫৯

ব্যারিস্টার রফিক উল হকের বর্ণাঢ্য জীবন

মানুষের আইনি অধিকারের প্রশ্নে আপসহীন ব্যারিস্টার রফিক উল হকের জীবনাবসান হয়েছে। শনিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর আদ-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর মৃত্যু হয়। এরআগে ওই হাসপাতালে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ব্যারিস্টার রফিক উল হক। বাবা মুমিন-উল হক পেশায় ছিলেন চিকিৎসক, চব্বিশ পরগনায় মিউনিসিপ্যালটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তার মা নূরজাহান বেগম।

১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, ১৯৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৫৮ সালে এলএলবি পাস করেন। ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বার অ্যাট ল সম্পন্ন করেন।

ব্যারিস্টার রফিক উল হক ১৯৬৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে এবং ১৯৭৩ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা শুরু করেন। এরপর জেনারেল এরশাদের আমলে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা, সে সময়কার স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেওয়া মামলা পরিচালনা করেন তিনি।

১৯৯০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রফিক উল হক। এ সময়ে তিনি কোনও সম্মানী নেননি। পেশাগত জীবনে তিনি কখনও কোনও রাজনৈতিক দল করেননি।

ব্যারিস্টার রফিক উল হক তার বর্ণাঢ্য জীবনে আইন পেশায় প্রায় ৬০ বছর পার করেছেন। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে আইনি লড়াই করেন তিনি। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ভাবমূর্তি রক্ষায় বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও আইনি বিষয় নিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেছেন বর্ষীয়ান এই আইনজীবী।

জীবনের উপার্জিত অর্থের সবই ব্যয় করেছেন সমাজসেবায়। মানুষের সেবা করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন হাসপাতাল, এতিমখানা, মসজিদ ও মেডিকেল কলেজ। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ১০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করছেন। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন সুবর্ণ ক্লিনিক; ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। বারডেম হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ ও নুরজাহান ওয়ার্ড, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালের চেয়ারম্যান, আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান রফিক-উল হক। আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ২৫টিরও বেশি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের একমাত্র ছেলে ব্যারিস্টার ফাহিমুল হক আইন পেশায় জড়িত।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত