সিলেটটুডে ডেস্ক

৩১ অক্টোবর, ২০২০ ০১:১৩

হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন খুন হওয়া জুয়েল

লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পিটিয়ে হত্যার পর পেট্রল ঢেলে দেহ পুড়িয়ে দেওয়া শহীদুন্নবী জুয়েলের (৫০)। তবে নিজ এলাকার বাসিন্দারা এমন অভিযোগ বিশ্বাসই করছেন না। তাদের দাবি, জুয়েল ব্যক্তিজীবনে ছিলেন খুবই ধর্মপ্রাণ। এমনকি স্ত্রীকে নিয়ে তিনি আগামী বছর হজ পালনে সৌদি আরবে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলেও জানিয়েছেন তারা।

রংপুর নগরীর শালবনে শহীদুন্নবী জুয়েলের বাসায় গিয়ে পরিবার ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তর্কাতর্কির জেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় জুয়েলকে। পরে তার দেহে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেয়া হয়।

নৃশংস এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

জুয়েল রংপুর শহরের শালবন রোকেয়া সরণি এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তার বাসার নাম নবী ভিলা।

রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক ছিলেন জুয়েল। তার বড় মেয়ে জেবা তাসনিম এবার এইসএসসি পাস করেছে। ছেলে তাশিকুল ইসলাম ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

শুক্রবার সকালে জুয়েলের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, স্বজনের কান্না ও আহাজারিতে ভারী হয়ে আছে পরিবেশ।

স্বজন ও এলাকাবাসী জানায়, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এক বছর আগে জুয়েলের চাকরি চলে যায়। এতে মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের এই শিক্ষার্থী। চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ খেতেন।

জুয়েলের বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ঘরে পবিত্র কোরআন শরিফ, হাদিসসহ ইসলামিক বিভিন্ন বই সাজানো। ঘরের আলমারি ও দেয়ালে ঝুলছে ইসলামিক বিভিন্ন নিদর্শন ও দোয়ার ছবি।

বিজ্ঞাপন



স্ত্রী জেসমিন আক্তার মুক্তা হাতে তসবিহ নিয়েই আহাজারি করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী অনেক সহজ-সরল ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত, কোরআন-হাদিস পড়ত। প্রত্যেক বছরেই তিন-চারবার করে কোরআন খতম দিত। করোনা ভাইরাসের সময়েও কয়েকবার কোরআন খতম দিয়েছে। আগামী বছর আমাকে নিয়ে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমি বিশ্বাস করি না সে কোনোভাবেই কোরআন অবমাননা করতে পারে। ’

গুজব ছড়িয়ে নৃশংস হত্যায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন মুক্তা।

বাসার পাশের শালবন জালালিয়া জামে মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন জুয়েল। মসজিদের ইমাম মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার মতো ঘটনাকে কোনোভাবেই ইসলাম সমর্থন করে না। জুয়েলকে হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

জুয়েলের বন্ধু রংপুরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে তাকে চিনি। সে আমাকে সবসময় তার বিষয়গুলো জানাত। নামাজের সময় হলে মসজিদে ছুটে যেত। আশপাশের লোকজনকেও নামাজের জন্য ডাকত। ষড়যন্ত্রের কারণে চাকরি চলে যাওয়ার পর সে অনেকটা ভেঙে পড়েছিল। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ধর্মের দিকে মনোনিবেশ করেছিল।’
সূত্র : নিউজবাংলা২৪

আপনার মন্তব্য

আলোচিত