নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ নভেম্বর, ২০২০ ২২:৫৮

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার হুমকির নিন্দায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের নামে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ঔদ্ধত্যপূর্ণ হুমকির তীব্র নিন্দা করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

রোববার (১৫ নবেম্বর) সংগঠনের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করছি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনে বাধাপ্রদান এবং স্থাপিত ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার ভয়ঙ্কর হুমকি দিয়েছে চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। গত ১৩ নবেম্বর করোনাকালীন যাবতীয় বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে তারা যেভাবে গেন্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে সমাবেশ করেছে এবং যে ভাষায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি বিষোদগার করেছে তা রাষ্ট্রদ্রোহিতাতূল্য অপরাধ হলেও এখন পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে সরকারি কিংবা সরকারদলীয় কোনও প্রতিবাদ আমাদের নজরে পড়েনি। হেফাজত-জামায়াত-বিএনপির মদদপুষ্ট তথাকথিত ‘তৌহিদী জনতা ঐক্যপরিষদে’র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানবিরোধী ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তির তীব্র নিন্দার পাশাপাশি আমরা মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির এহেন রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় অবস্থানের জন্য সরকারেরও নিন্দা করছি।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মওদুদিবাদী, ওহাবিবাদী মোল্লাদের কেবলা পাকিস্তান ও সৌদি আরবসহ সকল মুসলিমপ্রধান দেশেই ভাস্কর্য আছে, যা নগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ইতিহাসের মহানায়কদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের স্মারক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার প্রাণকেন্দ্রে হিন্দু পৌরাণিক চরিত্রের ভাস্কর্য রয়েছে, যেগুলোকে পৌত্তলিকতা বা মূর্তি আখ্যায়িত করে অপসারণের ধৃষ্টতা কখনও সে দেশের কট্টরপন্থীরা প্রদর্শন করেনি। বাংলাদেশে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা এবং কখনও প্রশ্রয়ের কারণে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরেধী এবং সংবিধানবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে তাতে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’র ঘোষণা অচিরেই প্রহসনে পরিণত হবে। যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা দিচ্ছে এবং ইতিমধ্যে স্থাপিত ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছে এদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আমরা দেশ ও জাতির জন্য সমূহ বিপর্যয় আশঙ্কা করছি, যা আমাদের জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে।

এতে আরও বলা হয়, ‘করোনা মহামারীকালে যে কোনও অজুহাতে আমরা সব রকম প্রকাশ্য জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। যারা স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবে না তাদের শাস্তির উদ্যোগও প্রশাসনকে নিতে হবে।

‘‘আমরা আবারও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর ’৭২-এর সংবিধান অনুযায়ী ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। ধর্মের পবিত্রতা রক্ষার জন্যই বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সহযোগীরা সাংবিধানিকভাবে ধর্মের নামে হত্যা, সন্ত্রাস ও হিংসা-বিদ্বেষের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন।’’

বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতারা হলেন- বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, লেখক সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক, ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীরউত্তম, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ বীরউত্তম, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অব.), ডা. আমজাদ হোসেন, ড. নূরন নবী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, অধ্যাপক আবুল বারক আলভী, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, ড. ফরিদা মজিদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার আবদুল মান্নান, অধ্যাপক আয়েশ উদ্দিন, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ডা. শেখ বাহারুল আলম, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, ডা. ইকবাল কবীর, মুক্তিযোদ্ধা মকবুল-ই এলাহী, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান শহীদ, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম, অধ্যাপক আবদুল গফ্ফার, কবি জয়দুল হোসেন, ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, মুক্তিযোদ্ধা কাজী লুৎফর রহমান, সাবেক ফুটবলার শামসুল আলম মঞ্জু, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, অ্যাডভোকেট আজাহার উল্লাহ্ ভূঁইয়া, সংগীতশিল্পী জান্নাত-ই ফেরদৌসী লাকী, ডা. মামুন আল মাহতাব, সাংবাদিক শওকত বাঙালি, উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা, লেখক আলী আকবর টাবী, সমাজকর্মী চন্দন শীল, অ্যাডভোকেট কাজী মানছুরুল হক খসরু, অ্যাডভোকেট দীপক ঘোষ, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, সাংবাদিক মহেন্দ্র নাথ সেন, শহীদসন্তান তৌহিদ রেজা নূর, শহীদসন্তান শমী কায়সার, শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, শহীদসন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, মানবাধিকারকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান, মানবাধিকারকর্মী আনসার আহমদ উল্যাহ, মানবাধিকারকর্মী স্বীকৃতি বড়ুয়া, কবি দিব্যেন্দু দ্বীপ, অধ্যাপক সুজিত সরকার, সমাজকর্মী হারুণ অর রশীদ, অ্যাডভোকেট মালেক শেখ, সহকারী অধ্যাপক তপন পালিত, সমাজকর্মী পূর্ণিমা রাণী শীল, সমাজকর্মী শিমন বাস্কে, সমাজকর্মী শেখ আলী শাহনেওয়াজ পরাগ, সমাজকর্মী সাইফ উদ্দিন রুবেল প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত