সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ নভেম্বর, ২০২০ ২১:৫০

করোনায় মারা যাওয়া মাওলানা সাঈদীর জানাজায় লাখো মানুষ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার আড়াইবাড়ী দরবার শরিফের পীর ও ওয়াজের বক্তা মাওলানা গোলাম সারোয়ার সাঈদী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। শনিবার (২১ নভেম্বর) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে (সাবেক অ্যাপেলো হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। হাসপাতাল সূত্র এ তথ্য জানা গেছে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর।

এদিকে, আড়াইবাড়ি দরবার শরিফে অনুষ্ঠিত তার জানাজায় অংশ নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশেপাশের জেলা-উপজেলা থেকে আসা লাখো মুসল্লি। জানাজায় অংশ নেন কসবা-আখাউড়া আসনের সংসদ সদস্য ও আইন বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। এছাড়াও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী জানাজায় অংশ নিয়ে স্মৃতিচারণ করা শুরু করলে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই বিব্রত হয়ে তার বক্তব্যের ব্যাপারে আপত্তি জানান।

এদিকে প্রিয় ধর্মীয় নেতা ও বক্তা হওয়ায় এ জানাজায় অংশ নেওয়ার ব্যাপারে স্থানীয়দের মধ্যে ভীষণ আবেগ কাজ করে। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রাক্কালে এমন জনসমাগম নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন অনেকে।

জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের একমাত্র ছেলে গোলাম সোবহান সাঈদী।

জানাজার আগে মরহুম গোলাম সারোয়ার সাঈদীর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বক্তব্য রাখেন কসবা-আখাউড়া আসনের সংসদ সদস্য ও আইন বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।

এসময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমার মা-বাবা নেই, সাঈদী আমার কাছের ছোট ভাই। তাকে আমি ছোট ভাইয়ের মতো দেখতাম। তার অকাল মৃত্যুতে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। কারণ এই অসময়ে তার চলে যাওয়ার কথা নয়। তার ছেলে আজ জানাজা পড়াচ্ছেন। এটা যে কত কষ্টের যার বাবা নেই কেবল সেই বোঝে।

তিনি গোলাম সারোয়ার সাঈদীর পরিবারের সদস্যদেরকে ধৈর্য্য ধারণ করে মরহুমের বিদেহী আত্নার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কসবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল কাউছার ভূইয়া জীবন, কসবা পৌরসভার মেয়র এমরান উদ্দিন জুয়েল, মরহুমের তালই বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ কামাল উদ্দিন জাফুরী ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী। এসময় কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ উল আলম, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী জানাজায় অংশ নিয়ে স্মৃতিচারণ করা শুরু করলে উপস্থিত মুসল্লিদের একাংশ তার বিরোধিতা করেন। ফলে শামীম সাঈদী তার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

এদিকে মন্ত্রীর উপস্থিতিতে লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে এ জানাজায় স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হয়েছে কিনা জানতে চাইলেকসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ-উল-আলম বলেন, মরহুম গোলাম সারোয়ার সাঈদীর অত্যন্ত জনপ্রিয় আলেম ছিলেন। আমরা আগে থেকে সচেতন ছিলাম। চেষ্টা করেছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছিল। মাননীয় আইনমন্ত্রী বক্তব্য রেখেছেন। আমাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না।

কসবা থানার ওসি লোকমান হোসেন জানান, লোকজনের ঢল ছিল। আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার কাজে ব্যস্ত ছিলাম। চেষ্টা করিছি স্বাস্থ্যবিধি যেন সবাই মানে। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলের বক্তব্যের সময় হট্টগোল সম্পর্কে তিনি বলেন, মাননীয় আইনমন্ত্রী বক্তব্য রেখেছেন। আরও অনেকে বক্তব্য রেখেছেন। সেখানে তার বক্তব্য নিয়ে কী হয়েছে সঠিক বলতে পারবো না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন একরাম উল্লাহ জানান, আমাকে কেউ কিছু বলেনি। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে থাকলে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। না মেনে থাকলে কিছুটা ঝুঁকি তো থেকেই যায়।

বক্তা মাওলানা গোলাম সারোয়ার সাঈদী আড়াইবাড়ী ইসলামিয়া সাঈদিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি প্রখ্যাত আলেম সৈয়দ আজগর আহাম্মদের দৌহিত্র ছিলেন। তার পিতা মরহুম পীর গোলাম হাক্কানির স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন গোলাম সারোয়ার সাঈদী। দেশ-বিদেশে ওয়াজ-মাহফিলের বক্তা হিসেবেও তার খ্যাতি ছিল।

উল্লেখ্য, এর আগে চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল লাখো মানুষের অংশগ্রহণে বেড়তলা গ্রামে জুবায়ের আহমদ আনসারীর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত