সিলেটটুডে ডেস্ক

২৭ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:২৭

অবসরের পর রায় লেখা অসাংবিধানিক নয় : আইনমন্ত্রী

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার বক্তব্যের বিরোধিতা করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, অবসরে যাওয়ার পর কোনো বিচারপতির রায় লেখা অসাংবিধানিক হতে পারে না। তবে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির স্বার্থে প্রধান বিচারপতি অবসরের পর রায় লেখার সময় নির্ধারণ করে দিতে পারেন।

মঙ্গলবার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি। সহকর্মীদের সম্পর্কে বিচারপতি সিনহার বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যেই আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।

আইনমন্ত্রীর ছাড়াও মাগরিবের নামাজের বিরতির পরে আলোচনায় অংশ নিয়ে এ বিষয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তুম আলী ফরাজী। পরে এতে আরো অংশ নেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাবেক আইনমন্ত্রী ও আব্দুল মতিন খসরু।

প্রসঙ্গত, প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তিতে গত ১৭ জানুয়ারি এক বাণীতে বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, অবসরে যাওয়ার পর বিচারকদের রায় লেখা ‘সংবিধান পরিপন্থী’। তার ওই বক্তব্য আসার পর থেকে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এর ভিত্তিতে বিএনপি বলছে, অবসরের পরে লেখা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের রায়ও তাহলে অবৈধ।

আনিসুল হক বলেন, আমাদের যে সংবিধান তার কোনো আর্টিকেলে এ কথা লেখা নাই যে বিচারপতি তার অবসর গ্রহণের পর রায় লিখতে পারবেন না। তা যদি হয় তাহলে এটা আর যাই হোক অসাংবিধানিক হতে পারে না।

তিনি বলেন, হাইকোর্ট ডিভিশনের স্টাবলিশ রুলসে যেটা আছে, রায় যতদূর সম্ভব এজলাসে বসেই দেওয়ার কথা। কিন্তু যদি এমন হয় তারা রায়টা এজলাসে দিতে পারছেন না মামলার চাপের জন্য। তাহলে অর্ডারিং পোর্শন বলার পরে এজলাসের বাইরে রায় লেখার অধিকার রাখে। এপিলেট ডিভিশন রুলস আছে। সেখানে কিন্তু একথা নাই যে এজলাসে বসেই দিতে হবে। পরিষ্কার লেখা আছে।

আইনমন্ত্রী বলেন, রায় দিতে হবে- ওপেন কোর্টে অর্ডারিং পোর্শন পর্যন্ত। রায় পরে লেখা হবে। অবসরে যাওয়ার পর আর লেখা যাবে না সেটা লেখা নাই। কোনো রুলস বা আইন দ্বারা বার্ধিত নয় বলে অবসরে যাওয়ার পরে রায় লেখা বেআইনি নয়।

তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিলম্ব রোধে প্রধান বিচারপতি অবসরের পর রায় লেখার সময় বেধে দিতে পারেন। ছয় মাস বা কয়েক মাস।

অবসরের পর রায় লেখার রেওয়াজ বন্ধ হলেও অতীতের রায়গুলোর জন্য তা প্রযোজ্য হবে না বলেও জানান আনিসুল হক।

বিএনপির সমালোচনা করে আইনমন্ত্রী বলেন, যারা বাসে পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে তারা প্রধান বিচারপতির বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। তারা বলছেন, আগের সব অবৈধ হয়ে গেছে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি এও বলেছেন, আগের রায় বাতিল হবে না।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে বিচার বিভাগকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা পৃথিবীর অন্য দেশে দেওয়া হয়নি। সার্বভৌম সংসদের আইন সংবিধান সম্মত না হলে আদালত তা বাতিল করতে পারে।

প্রধান বিচারপতির বক্তব্যকে শপথের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেন সুরুঞ্জিত। তিনি বলেন, সংবিধানের রক্ষক সুপ্রিম কোটের্র প্রধান বিচারপতি যে কথা বলে বসলেন, এ কথা বলা শপথের পরিপন্থী। এটি যদি অসাংবিধানিক হয়, তাহলে রাষ্ট্রের সব কিছুই অসাংবিধানিক হয়ে যায়। বিরোধী দল কথাটি লুফে নিয়ে বলল, এই সরকার নাকি অবৈধ। কারণ ওই রায়টা নাকি লেখা হয়েছে, অবসরের পর।

প্রধান বিচারপতি বক্তব্যের পেছেনে ‘উস্কানি’ থাকতে পারে বলে মনে করেন সুরুঞ্জিত। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন স্থিতিশীল হয়ে এসেছে, তখন একটি বিশাল উস্কানি। আমরা ঘর পোড়া গরু। কোনো অসাংবিধানিক শক্তির সঙ্গে আতাঁত করে সাংবিধানিক শক্তি এ ধরনের কথা বলছেন বলে মনে করতে হবে।’

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, দুই একজন বিচারপতির ব্যক্তিগত কাদা ছোড়াছুড়ি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা যাবে না। প্রধান বিচারপতি যদি মনে করেন অবসরের পর রায় লেখার রেওয়াজ খারাপ, তাহলে তিনি নতুন কিছু করতে পারেন। কিন্তু পেছনে ফেরার সুযোগ নেই।

আব্দুল মতিন খসরু বলেন, প্রধান বিচারপতির এটা জনসম্মুখে বলা উচিত হয়নি। প্রধান বিচারপতি কোনো ব্যক্তি নন, তিনি প্রতিষ্ঠান। তিনি জনগণের শেষ আস্থার প্রতীক। যখন যা ইচ্ছা বলতে পারেন না তিনি। পূর্ণাঙ্গ রায় লেখতে এক/দুই বছর সময় লাগা উচিত নয়। এক/দুই সপ্তাহ বা দুই/এক মাসের বেশি লাগাও উচিত নয়।

রুস্তম আলী ফরাজি বলেন, অন্যান্য দেশেও অবসরের পর পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা হয়। অতীতের রায় নিয়ে যদি বিতর্ক করা হয়, তাহলে রাষ্ট্রে শূণ্যতা সৃষ্টি হবে। ভবিষ্যতে যেনো অবসরের পর রায় লেখতে না হয়, তার জন্য রুল দিতে পারেন প্রধান বিচারপতি। অবসরের ছয় মাস আগে যেনো কোনো বিচারপতিকে মামলা দেওয়া না হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত