সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৭:২৬

আন্তর্জাতিক বাজারে পানির চেয়েও কম দামে বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি তেল

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রি হচ্ছে ব্যারেলপ্রতি (প্রায় ১৫৯ লিটার) ৩০ ডলারের আশপাশে। এ হিসাবে বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রতি লিটারের দাম পড়ে প্রায় ১৫ টাকা। অথচ দেশে প্রতি লিটার বোতলজাত পানি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২০ টাকায়। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে পানির চেয়েও সস্তায় মিলছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল।

তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক বাজারে ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দামে লেনদেন হচ্ছে জ্বালানি তেল। বিশ্ববাজারে দাম পড়ে যাওয়ার পরও দেশে সমন্বয় না হওয়ায় এক বছরের বেশি সময় ধরে অনেক বেশি মুনাফা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯৭ ডলার হলে সে সময় দেশে এর দাম বাড়ানো হয়। এখন তা ৩০ ডলারে নেমে এলেও দেশে দাম কমানোর উদ্যোগ নেই।

দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের এখনই সময় বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের স্বার্থেই দাম সমন্বয় জরুরি বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।

জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরাও। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, এ মুহূর্তেই সরকারের অকটেন, পেট্রল, ফার্নেস অয়েল ও কেরোসিনের দাম কমানো উচিত। তবে ডিজেলের দাম কমানোর আগে একটু ভাবতে হবে। দাম কমালে কৃষক সুবিধা পাবেন কিনা, তা নিশ্চিত করেই ডিজেলের দাম কমানোর ওপর মত দেন তিনি। পাশাপাশি বাস ও ট্রাকের ভাড়া কমার বিষয়টি নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেন তিনি।

আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ব্যারেলপ্রতি ৩০ ডলারের কিছু বেশি দামে বিক্রি হলেও গত সপ্তাহে তা ২৭ ডলারে নেমে আসে। আন্তর্জাতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরের পুরো সময়জুড়ে ব্যারেলপ্রতি জ্বালানি তেল ৩০ থেকে ৪০ ডলারে লেনদেন হবে। গত সোমবার বিশ্বব্যাংক তাদের কমোডিটি আউটলুকে চলতি বছর প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ৩৭ ডলারে বিক্রি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। একই দামে পণ্যটি লেনদেনের পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক বার্কলেস এবং ইতালিভিত্তিক বহুজাতিক ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিক্রেডিট। আর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস বলছে, ২০১৬ সালে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রি হতে পারে ব্যারেলপ্রতি ৪০ ডলারে।

আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের বিষয়ে কাজ চলছে। আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে মূল্য কমানোর পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত রয়েছে। এ কারণে বিষয়টি আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।

বিপিসি সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বছরে ১২ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে সংস্থাটি। বাকি ৩৮ লাখ টন আমদানি করে পরিশোধিত হিসেবে। সেখানে পরিশোধিত তেলের দাম অপরিশোধিত তেলের চেয়ে অনেক বেশি হয়। ব্যারেলপ্রতি কখনো কখনো ২০ ডলারের পার্থক্য থাকে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩০ ডলার হলেও পরিশোধিত জ্বালানি তেল ৪৫-৫০ ডলার।

বিপিসির চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বিপিসি নির্ধারণ করে না। এটা সরকার নির্ধারণ করে। সরকার মূল্য সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিলে বিপিসি তা বাস্তবায়ন করবে।

জানা যায়, গত অক্টোবরে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে জ্বালানি তেলের দাম যৌক্তিকীকরণের উদ্যোগ নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অক্টোবরের শেষ দিকে অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদকে দেয়া এক চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা যথেষ্ট লাভ করেছি। আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দামই কমেছে। আমাদেরও দাম যৌক্তিকীকরণ প্রয়োজন। বর্তমানে পণ্যভেদে অকটেন, ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, কেরোসিনের দাম কত নির্ধারিত আছে এবং তার জন্য কী পরিমাণ ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে, সে হিসাবটি দরকার। তাতে শুল্ক ও করের ভাগ কত?’

অর্থমন্ত্রীর চিঠি পাওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয় জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ও দেশে খুচরা বিক্রয়মূল্য এবং বিপিসির মুনাফার হিসাব খতিয়ে দেখা শুরু করলেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে বিপিসির প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে মন্ত্রণালয়।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চলতি মাসের মাঝামাঝি এ বিষয়ে জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় বিপিসি এখন লাভে রয়েছে। তাদের এখন কোনো দেনা নেই। আমি তাদের বলেছি, তোমরা আমাকে একটা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাও। তার পর আমরা সব বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসব। তখন জ্বালানি তেলের মূল্য সংশোধন বা সমন্বয় নিয়ে কথা বলব। তবে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে হবে। তার আগে আমি কিছু বলতে পারব না।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বাজারে এখন প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা, কেরোসিন ৬৮, অকটেন ৯৯ ও পেট্রল ৯৬ টাকায়।

সূত্র : বণিক বার্তা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত