সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০২:৩২

‘ব্যক্তিগত কিছু কথা বলতে’ গিয়ে এমপি লিটনকে গুলি করে খুনিরা!

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের কিলিং মিশনে অংশ নেয় পাঁচ খুনি। এরা সকলেই বহিরাগত। এমনটি জানিয়েছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা।

তিনি স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, ওই কিলিং মিশনে ৫ জন খুনি অংশ নেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধারণা করা হচ্ছে, তারা সবাই বহিরাগত। কালো কোট-প্যান্ট পরিহিত সবার বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এদের একজনের মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি ছিল। তারা দুইটা মোটরসাইকেলে করে এসে বিকেল ৪টা থেকে এমপি লিটনের বাড়ি এবং আশেপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়।

পরে তারা সন্ধ্যার দিকে এমপি লিটনের বাড়িতে প্রবেশ করে। এ সময় এমপি লিটন বাড়ির সামনে গাবগাছের নিচে বসে ছেলেদের বল খেলা দেখছিলেন। তার সাথে ছিল স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি ও এমপির শ্যালক বেতার। দুটি মোটরসাইকেলে ৫ জন কিলার এলেও বাকি তিনজন মোটরসাইকেলের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে। দু’জন এগিয়ে এসে এমপি লিটনের কাছে জরুরী কথা বলতে চায়।

এ সময় এমপি তাদের অপেক্ষা করতে বলে একটু পরে সাক্ষাত দিবেন বলে জানান। পরে সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে ওই দু’জনার সাথে কথা বলার জন্য এমপি বাইরের বৈঠক খানায় প্রবেশ করলে তার স্ত্রী, শ্যালকও তার সাথে যায়। বৈঠকখানা ঘরে গিয়ে একজন কিলার এমপি’র স্ত্রীকে বলে, স্যারের সাথে আমরা একান্তই ব্যক্তিগত কিছু কথা বলতে চাই।

এমপির স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি জানান, এ কথা শোনার পর তিনি ও তার ভাই পাশের ঘরে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পরেই তারা গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে ছুটে আসেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে এমপি লিটন চিৎকার করে বৈঠকখানা ঘরের পশ্চিম দিকের দরজা দিয়ে বাড়ির ভেতরে উঠোনে ছুটে বেরিয়ে আসেন। এ সময় বাড়ির দু’জন গৃহপরিচারিকা ও স্ত্রী তাকে জড়িয়ে ধরলে সে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন।

এমপির শ্যালক বেতার ও বাড়ির কেয়ারটেকার ইসমাইল হোসেন জানান, এমপির বৈঠক খানা ঘর থেকে ৩ রাউন্ড গুলির শব্দ শুনেই সেখানে ছুটে আসেন এবং পলায়নরত আততায়ী যুবকদের বেতারের সাথে গাড়ি নিয়ে ধাওয়া করলে তারা গুলি ছুরতে ছুরতে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়। বাড়ি থেকে বেরিয়েই কিলাররা একটি  মোটরসাইকেলে যোগে পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে বামনডাঙ্গার দিকে এবং অপরটি পশ্চিম দিকে নলডাঙ্গার রাস্তায় চলে যায়।

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান জানান, এমপি লিটনের বৈঠক খানা ঘর থেকে ৪ রাউন্ড গুলির খোসা ও ২টি ফায়ারর্ড বুলেট উদ্ধার করা হয়েছে। এই ফায়ারর্ড বুলেট দুটিই এমপির দেহ ভেদ করে বেরিয়ে আসে এবং সে কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিজয় মাসের শেষ দিন শনিবার সন্ধ্যার দিকে নিজ বাসভবনে গুলিবিদ্ধ হন এমপি লিটন। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) ভর্তি করানো হয়। মেডিকেলের ডাক্তাররা তাকে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৭টার দিকে মারা যান তিনি। এ খবর পেয়ে রাতেই ঢাকা থেকে রমেক হাসপাতালে ছুটে আসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক।

রোববার সকালে রংপুর পুলিশ লাইনে নিহত এমপির প্রথম নামাজে জানাযা শেষে আওয়ামী লীগের নেতারা তার মরদেহ নিয়ে ঢাকায় যান। এখন মরদেহটি হিমঘরে রাখা হয়েছে। সোমবার সকালে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় তার দ্বিতীয় নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। পরে এমপি লিটনের লাশ হেলিকপ্টার যোগে গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হবে। যোহরের নামাজ পর স্থানীয় আব্দুল হক কলেজের মাঠে নিহত এমপির তৃতীয় নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে।

অপরদিকে এমপি লিটন হত্যার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে গাইবান্ধা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সুন্দরগঞ্জে অনির্দিষ্টকাল হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। এলাকার জনসাধারণ এ হরতালে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নেমে আসছেন। তারা রেলপথসহ রাস্তায় রাস্তায় অগ্নিসংযোগ ও ট্রেন অবরোধ করে দফায় দফায় বিক্ষোভ করে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, এমপি লিটনের খুনিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

গত বছরের ২ অক্টোবর এমপি লিটনের বন্দুক থেকে ছোঁড়া গুলিতে উপজেলার গোলাপচরন গ্রামের শিশু শাহাদত হোসেন সৌরভ গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। পরের দিন ৩ অক্টোবর লিটনকে একমাত্র আসামি করে  সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন সৌরভের বাবা সাজু মিয়া। ওই মামলায় গত বছরের ১৪ অক্টোবর রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরের দিন গাইবান্ধা আদালতে হাজির করা হলে মুখ্য বিচারিক হাকিম তাকে কারাগারে পাঠান।

পরে ৮ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান এই সংসদ সদস্য। চলতি বছরের ১ এপ্রিল এ মামলায় লিটনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত