সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ জুন, ২০১৭ ২২:১৯

রাঙামাটির উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা

রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের চতুর্থ দিনে আর লাশ না পাওয়ায় উদ্ধার অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী।

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের অতিরিক্ত পরিচালক গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ জেলায় এই দুর্যোগে এ পর্যন্ত ১৫৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রাঙামাটিতে সর্বোচ্চ ১১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হলেও আরো অনেকে নিখোঁজ রয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন।

গত সোমবার রাত থেকে রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি ঢল ও ভূমিধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষাপটে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, পুলিশ, জেলা প্রশাসন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা।

ঢাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থানা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, পাহাড় ধসে রঙামাটিতে ১১০ জন, চট্টগ্রামে ২৩ জন, বান্দরবানে ৬ জন, কক্সবাজারের ২ জন ও খাগড়াছড়িতে ১ জনের প্রাণহানির তথ্য তাদের হাতে পৌঁছেছে। এছাড়া চট্টগ্রামে ঢলে ভেসে গিয়ে, গাছ ও দেয়ালচাপায় এবং বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে আরও ১৪ জনের।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান জানান, এ পর্যন্ত রাঙামাটিতে ১১০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দুয়েক জায়গায় কয়েকজন নিখোঁজ থাকতে পারে। সব মিলিয়ে নিখোঁজদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য না থাকায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করছি।”

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজও উপস্থিত ছিলেন এ সংবাদ সম্মেলনে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, “যদি কোথাও কোনো নিখোঁজের সংবাদ থাকে, তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার অভিযান শুরু করব।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাঙামাটির ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে দুর্গতদের খাদ্য সরবরাহ ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও চাল দেওয়া হচ্ছে। আহত প্রত্যেককে দেওয়া হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা ও চাল।

গত ১৩জুন সকাল ৯টা থেকে রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের কর্মী এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাঙামাটি শহরের কলেজ গেইট, ভেদভেদী, লোকনাথ বাবার আশ্রম এর পেছনে, রিজার্ভ বাজার, পুলিশ লাইন, টিভি সেন্টার এলাকা, রূপনগর, পশ্চিম মুসলিম পাগা উদ্ধার কাজ শুরু করে। এই এলাকাগুলো থেকে একের পর এক লাশ তুলে আনতে সক্ষম হয় উদ্ধার কর্মীরা।

উদ্ধার কর্মীদের সাথে যোগ দিয়েছে রাঙামাটির স্থানীয় জনগণ। ফায়ার সার্ভিস ও সেনা বাহিনীর সহযোগিতায় একের এক উঠে আসতে থাকে লাশ। উদ্ধার কাজে অংশ নিতে চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটির এই টিমের সাথে যোগ দিয়েছে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ৬২ সদস্যের একটি ফায়ার সার্ভিসের কর্মী বাহিনী।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গত ১৪ জুন কাপ্তাই হয়ে নৌ পথে রাঙামাটি এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। রাঙামাটি রিজিয়ন ও সদর জোনের প্রায় চার শতাধিক সেনা সদস্য এই উদ্ধার কাজে সাথে যোগ দিয়ে উদ্ধার তৎপরতাকে আরো বেগবান করেছে। এছাড়া স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, স্কাউট সহ বিভিন্ন জনতা এই মানবিক বিপর্যয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত