সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ জুলাই, ২০১৭ ১৭:১২

হরিধানের উদ্ভাবক হরিপদ কাপালী আর নেই

সারা দেশে সাড়া জাগানো হরিধানের উদ্ভাবক হরিপদ কাপালী আর নেই। ঝিনাইদহের এই মডেল কৃষক বুধবার মধ্যরাতে আসাননগর গ্রামে বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৫ বছর।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। গত ছয় মাস ধরে হরিপদ কাপালী বিছানায় শয্যাশায়ী ছিলেন। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে সাধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও সংবাদকর্মীরা ছুটে যান বাড়িতে। বৃহস্পতিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গার আলীয়ারপুর শ্বশানে তার অন্তষ্টিক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে।

হরিপদের পালিত পুত্র রুপ কুমার জানান, তার বাবা ১৯২২ সালের ১৭ সেপ্টম্বর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পরপরই তিনি তার বাবা কুঞ্জু লাল কাপালী ও মা সরোধনীকে হারিয়ে অনাথ হয়ে পড়েন। কিশোর হরিপদ পরের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। যুবক বয়সে তার পঙ্গু শ্বশুর একমাত্র মেয়ে সুনিতীকে বিয়ে দিয়ে আসাননগর গ্রামে ঘরজামাই রাখেন।

মৃত্যুর আগে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও বিবিসির কাছে দেওয়া সাক্ষাতকারে কৃষক হরিপদ এই ধান উদ্ভাবনের বিষয়ে জানিয়েছিলেন, তার ইরি ধান ক্ষেতে একটি ব্যতিক্রমধর্মী ধান গাছ দেখে তিনি সেটাকে আলাদা করে রাখেন। এরপর বীজ সংগ্রহ করে তিনি নিজের ক্ষেতেই ১৯৯২ সালে আবাদ করে সুফল পান।

পরে এ ধানের আবাদ সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার কৃষকরা বীজ সংগ্রহ করে ইরি ও বোরো মৌসুমে আবাদ করতে থাকেন। এই ধান উদ্ভাবনের ফলে হরিপদকে বাংলাদেশের বিভিন্ন কৃষি সংগঠন তাকে সম্মাননা ও পুরস্কার দেওয়া হয়। এছাড়া নবম ও দশম শ্রেণির কৃষি শিক্ষা বইতে হরিপদ কাপালী উদ্ভাবিত হরিধানের বিষয়টি স্থান পেয়েছে।

ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের দিকে ঝিনাইদহসহ দক্ষিনাঞ্চলের জেলাগুলোতে নাম পরিচয়হীন এক জাতের ধানের ব্যাপক আবাদ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৫ সালে ঝিনাইদহের সাংবাদিকরা এই ধান চাষের ওপর আঞ্চলিক ও জাতীয় দৈনিকে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ১৯৯৬ সালে চ্যানেল আই এর বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ ঝিনাইদহে এসে হরিধানের ওপর সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার করলে দেশব্যাপী হৈ-চৈ পড়ে যায়। পোকামাকড়, খরা ও অতিবৃষ্টি সহিষ্ণু এই জাতের ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ দেখে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিশেষ ধরনের এই জাতের ধান চাষের ওপর ছাড়পত্র দেয়।

পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে হরপদ কাপালীর নামের সঙ্গে মিল রেখে এই ধানের নামকরণ করা হয় 'হরি ধান'। এটি বিশেষ জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান। যা গোটা দেশে সাড়া জাগায়। আর এজন্য কৃষক হরিপদ কাপালী পেয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত