সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ অক্টোবর, ২০১৯ ১৩:৩১

প্রবাসীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে খুব ভাল অবস্থানে, অপ্রতিরুদ্ধ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এ অগ্রগতি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।

তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগের বিপুল প্রয়োজন এবং সুযোগ রয়েছে। বিনিয়োগ বান্ধব নীতিমালা করা হয়েছে। বিনিয়োগে আকর্ষণীয় প্রণোদনা এবং সর্বোচ্চ মুনাফা লাভেরও সুযোগ রয়েছে।

ড. মোমেন দেশের সার্বিক উন্নয়নে রোহিঙ্গা সমস্যা প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত হয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে প্রবাসীরা রোহিঙ্গা কনসার্ট আয়োজন করে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণে ভূমিকা রাখতে পারেন।

স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কের লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলে আমেরিকান বাংলাদেশি বিজনেস এলায়েন্সের ১১তম বার্ষিক বিজনেস সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এবিবিএ’র ১১তম বার্ষিক বিজনেস সম্মেলনের আহ্বায়ক মো. জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং জয়েন্ট মেম্বার সেক্রেটারি এএফ মিসবাহউজ্জামান ও নিউজ প্রেজেন্টার শামসুন নাহার নিম্মির সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী মো. শাহাবউদ্দিন এমপি এবং কি নোট স্পিকার ছিলেন বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সীমান্তিকের চেয়ারম্যান ও রূপালী ব্যাংক লি. এর সাবেক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহমেদ আল কবীর।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপার্সন এমএস সেকিল চৌধুরী, সংগঠনের উপদেষ্টা শাহ নেওয়াজ, মূলধারার রাজনীতিক মোহাম্মদ এন মজুমদার, ব্যবসায়ী নেতা জাকারিয়া মাসুদ জিকো, ১১তম বার্ষিক বিজনেস সম্মেলনের চেয়ারম্যান একেএম এফ হক, সিনিয়র লিগ্যাল কনসালটেন্ট নাসরিন আহমেদ, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেসওম্যান প্রার্থী বদরুন নাহার খান মিতা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, এফবিসিআই সিনিয়ার সহসভাপতি মো. মুন্তাকিম আশরাফ, এবিবিএ’র উপদেষ্টা নাসির আলী খান পল, রেজাউল করীম চৌধুরী, প্যানেল চেয়ারম্যান শামিম আহমেদ, কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এলিজাভেথ ক্রাউলি প্রমুখ।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব এ খান, সিপিএ, এবিবিএ’র ফাউন্ডার ও ১১তম বার্ষিক বিজনেস সম্মেলনের কো-কনভেনর বিলাল চৌধুরী, মেম্বার সেক্রেটারি মোস্তফা কামাল। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবিবিএ’র সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মইনুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ইমাম কাজী কায়্যূম এবং পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করেন ডা. টমাস দুলু রায়।

বিজনেস সম্মেলনে আরো সহযোগিতায় ছিলেন, সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ জাকির হোসেন, কার্যকরী সদস্য জে মোল্লা সানি, লিটন আহমেদ, কামরুল ইসলাম সহ পরিচালক পর্ষদের সদস্যবৃন্দ।

বিজনেস সম্মেলনের মূল পর্ব শুরু হওয়ার আগে এবিবিএ’র আয়োজনে ‘বিজনেস মাইন্ড সেট’ শীর্ষক বিজনেস ডেভেলপমেন্ট সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে অনলাইন শপিং প্রতিষ্ঠান শপ অ্যান্ড হল’র লাঞ্চিং করা হয়। প্রধান অতিথি ড. মোমেন প্রতিষ্ঠানটির সিইও একে কাদের শিশিরসহ অন্যান্যদের সাথে নিয়ে ফিতা কেটে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

ড. মোমেন প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর কথা উল্লেখ করে বলেন, বিদেশী দূতাবাসগুলোও সার্বক্ষণিক সেবায় নিয়োজিত। আগের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন প্রবাসীদের বিনিয়োগের সবচেয়ে অনুকূল পরিবেশ বিরাজমান। প্রবাসী বিনিয়োগবান্ধব সরকারের এ সুযোগ গ্রহণ করার উৎকৃষ্ট সময়ও এখন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিশেষ অতিথি বন ও পরিবেশ মন্ত্রী মো. শাহাবউদ্দিন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রবাসীদের অবদানের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের আরো ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। দেশের উন্নয়নে সকল প্রবাসীকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে আরো ভূমিকা আরো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার এজন্য সম্ভাব্য সকল ধরণের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।

সেমিনারের কি নোট স্পিকার ড. আহমেদ আল কবীর বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার জন্যই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কে আইন দ্বারা সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে। বিনা বাধায় লাভ এবং আসলসহ পুঁজি প্রত্যাবাসন সুবিধা রয়েছে। নতুন শিল্প কারখানা এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রবাসীরা যার যার সুবিধাজনক অঞ্চলে সহজে সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন।

বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে দ্বিতীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক, ৩য় শীর্ষ সবজি ও মিঠা পানির মৎস উৎপাদনকারী, ৪র্থ শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে শিগগিরই বাংলাদেশ শীর্ষ রপ্তানিকারকের কাতারে উঠে আসবে। তিনি প্রবাসীদের বেশি বেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান।

এবিবিএ’র সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য অতিথিসহ সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। আয়োজনটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সংগঠনের কর্মকর্তাসহ ১১তম বার্ষিক বিজনেস সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটিকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান।

এবিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব এ খান, সিপিএ বলেন, এবিবিএ বিভিন্ন সময় ব্যবসায়িক সেমিনার, ট্রেড শো আয়োজনসহ বাংলাদেশ-আমেরিকার ব্যবসায় উন্নয়নে এফবিসিসিআই ও অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। সংগঠনটি এবারসহ গত ১১ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যবসায়িক সেতুবন্ধন রচনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সেতুবন্ধন ও পেশাদার সম্পর্ক স্থাপন করাই এ বিজনেস সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য। এবিবিএ এ কাজটি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বরাবরের মতো আজকের এ আয়োজনেও নতুন নতুন তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে প্রবাসীদের কল্যাণ হবে। উন্মোচিত হবে নতুন ব্যবসার দ্বার।

বক্তারা এ আয়োজনের প্রসংসা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী কমিউনিটি স্ট্রং কমিউনিটি। বাংলাদেশী কমিউনিটির অনেক ‘সাকেসেস স্টোরি’ রয়েছে। প্রবাসে সফলতার আলোকে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে ব্যাপক ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে আগ্রহী প্রবাসীরা। দেশে বিনিয়োগের অবারিত সুযোগ চান আমেরিকান বাংলাদেশী ব্যবসায়িরা।

অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। ব্যবসায়ীরা এ সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারে আরো সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর অনুরোধ জানান।

এবিবিএ কর্মকর্তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তারা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে বাংলাদেশ-আমেরিকার মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে সরকারের আরো আন্তরিক উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন।

এদিকে, এবিবিএ আয়োজিত ‘বিজনেস মাইন্ড সেট’ শীর্ষক বিজনেস ডেভেলপমেন্ট সেমিনারটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সিপিএ ইয়াকুব এ খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়।

এবিবিএ’র বার্ষিক বিজনেস সম্মেলনের প্রথম পর্বের এ সেমিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট কমিউনিটি এক্টিভিস্ট মোহাম্মদ এন. মজুমদার, মাস্টার অব ল, চেজ ব্যাংকের ম্যানেজার জুবের চৌধুরী। আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রিয়েলেটর মোহাম্মদ জন ফাহিম, চেজ ব্যাংকের এসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মাস্টার সোহেল ও ড. আপটার গাঞ্জু।

সেমিনারের শুরুতে সিপিএ ইয়াকুব এ. খান ‘বিজনেস মাইন্ড সেট’ বিষয় নিয়ে বলেন, ব্যবসা শুরুর আগে করণীয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের ছাড়াও আইনজ্ঞদের সাথে খোলামেলা পরামর্শ করা উচিত। তিনি বলেন, ব্যবসায় সফলতার জন্য অভিজ্ঞতা, দীর্ঘ্য মেয়াদী পরিকল্পনা, উন্নত কাস্টমার সার্ভিস, ভালো লোকেশন, দক্ষ ব্যবস্থাপনা, সুন্দর প্রেজেন্টেশন, ছোট-খাট বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া, হিসাব-নিকাশে স্বচ্ছতা, ব্যবসায় সময় দেয়া, টিম ওয়ার্ক, মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা, ক্রেতাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা, সর্বোচ্চ সেবা প্রদান, দূরদৃষ্টি, আধুনিক সিস্টেমসহ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে।

সেমিনারে মোহাম্মদ এন মজুমদার বলেন, সঠিক আইনকানুন জেনে ব্যবসায় শুরু করলে লাভবান হওয়া যায়, ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয় লোকসানের।

অন্যান্য আলোচকরা ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে অতি প্রয়োজনীয় পরামর্শ তুলে ধরেন। ব্যবসা শুরুর পূর্বে যে সকল বিষয় বিবেচনায় রাখা দরকার, ব্যবসা পরিচালনায় জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব, একজন উদ্যোক্তার আইনি বিষয়ে করণীয়, ব্যাংকিং-এর গুরুত্ব, ফাইনন্সিয়াল ডাটা, রিপোর্ট পর্যালোচনাসহ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন তারা। সঠিক পরিকল্পনা, ব্যবসার ধরণ, পুঁজি, ব্যাংক লোন, এ্যামপ্লয়ী, কাস্টমার সার্ভিস, লোকেশন, আয়-ব্যয় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাসহ ব্যবসার খুঁটিনাটি সকল বিষয়ই তুলে ধরেন। পরে আলোচকরা উপস্থিত ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত