মুজাহিদুল ইসলাম সর্দার

২১ এপ্রিল, ২০২০ ১৬:৫২

ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেও উপেক্ষিত ডিপ্লোমা চিকিৎসকরা

সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ৭১ চিকিৎসক ও ৬২ জন নার্স ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন। সে হিসেবে আক্রান্তদের শতকরা প্রায় আট ভাগ স্বাস্থ্যকর্মী। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতে প্রায় ৮.৫ শতাংশ, স্পেনে ১৫ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও ও মিনেসোটা রাজ্যে আক্রান্তদের প্রায় ২০ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী৷

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা দেশের স্বাস্থ্যখাতের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করে ডিপ্লোমা মেডিকেল এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. এম সাহিদুর রহমান বাবু বলেন, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও পিছিয়ে নেই সারাদেশের ডিপ্লোমা চিকিৎসকরা। দেশের সকল পরিবার ও স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্র ,উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ডিপ্লোমা চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, করোনাকালে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যে ১৫ জন ডিপ্লোমা চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ আতঙ্কের মধ্যেও থেমে নেই ডিপ্লোমা চিকিৎসকরা।

তিনি আরও জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলা হাসপাতালের করোনা সেলে কাজ করে আসার পর একজন ডিপ্লোমা ইন্টার্নি বাড়ি এসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। নির্ধারিত সময়ের পরে নমুনা সংগ্রহ করায় রেজাল্ট নেগেটিভ আসে আমরা তাকে শহীদ হিসেবেই আখ্যায়িত করবো।

তিনি ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আরও বলেন, করোনার ভাইরাসের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশজুড়ে ডিপ্লোমা চিকিৎসকরা মেডিকেল টিম গঠন করে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছেন। এই সময় পাবনার চাটমোহরে তরুণ ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমের প্রশংসা করেন তিনি। চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাওয়ার মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রী অধিকাংশ ডিপ্লোমা চিকিৎসকই পাননি। তারপরও ডিপ্লোমা চিকিৎসকগণ পিছিয়ে নেই।

ক্ষোভ প্রকাশ করে এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. এম সাহিদুর রহমান বাবু আরও বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাংবাদিক সম্মেলনে সবার কথা বললেও ডিপ্লোমা চিকিৎসক তথা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তাদের কথা উল্লেখ করছেন না। এতে করে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাওয়া তৃণমূলের চিকিৎসকরা হতাশ হচ্ছেন। ডিপ্লোমা চিকিৎসকগণ বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল নিবন্ধিত হওয়ার পরও ডা. উপাধি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অন্যান্য সকল ডিপ্লোমার নিয়োগসহ, পদোন্নতি, দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলেও বরাবরই বঞ্চিত হচ্ছে এই চিকিৎসক জাতি।

বিজ্ঞাপন

একই চেয়ারে তাদের কর্মজীবন জীবন কেটে যায় বলে হতাশা ব্যক্ত করেন ডা. এম সাহিদুর রহমান বাবু।

এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, বিএমডিসির একটি ধারায় বলা আছে এমবিবিএস, বিডিএস এবং ডিএমএফ ব্যতীত কেউ এলোপ্যাথি চিকিৎসা করতে পারবে না। এই আইনটি প্রচার না করে এক শ্রেণির লোক শুধু ২৯ এর ২ ধারাটির আংশিক প্রচার করে, আমাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করে যাচ্ছেন, যা নিয়ে মামলা চলমান আছে। এই বিষয়টি তারা প্রকাশ না করে গোপন করে যাচ্ছেন।

এই সময়ে সকল ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্য খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াসহ দ্রুত নিয়োগসহ দশম গ্রেড বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তিনি আকুতি জানান এবং খুব দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই সঙ্কট কাটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে জড়িত সকল ডিপ্লোমা চিকিৎসকসহ, নার্স, টেকনোলজিস্টদের করোনা মোকাবিলায় কাজ করার আহ্বান জানান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত