স্পাের্টস রিপোর্ট

৩০ মে, ২০১৬ ০০:২৮

প্রথমবারেই মুস্তাফিজের আইপিএল জয়

পুরো আইপিএল জুড়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মুস্তাফিজ। বাংলাদেশি এই বিস্ময়বালকের কাটার বিস্মিত করেছে বিশ্ববাসীকে। আর বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের করেছে বিভ্রান্ত। পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে এমন আলো ছড়িয়েছেন যিনি তিনি শিরোপার ছোঁয়া না পেলে কী হয়!

প্রকৃতি এতোটা অবিবেচক নয়। শিরোপা জিতলো মুস্তাফিজের হায়দ্রাবাদ সানরাইজার্স। প্রথমবার আইপিএলে খেলতে গিয়েই শিরোপার স্বাদ পেলেন এই বঙ্গতরুণ।

শিরোপা জয়ের কাজটা অর্ধেক সেরে রেখেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার-যুবরাজ সিং-বেন কাটিং। এই তিনজনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২০৮ রানের বিশাল পুঁজি সংগ্রহ করে হায়দ্রাবাদ সানরাইজার্স। তবে বেঙ্গালুরুতে ছিলেন তিন 'দানব' কোহলি-গেইল-ভিলিয়ার্স। বিরাট কোহলি ও গেইল মুস্তাফিজদের বুকে কাঁপন ধরিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশাল রান তাড়া করার চাপ সামলাতে পারেননি।

ফলশ্রুতিতে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ ৮ রানে জিতে প্রথমবারের মতো আইপিএল শিরোপা স্বাদ নেয় সানরাইজার্স। প্রথমবারের মতো আইপিএল খেলতে গিয়েই শিরোপার স্বাদ নিলেন টাইগার পেসার মুস্তাফিজও।

শেষ ৪ ওভারে বেঙ্গালুরুর প্রয়োজন দাঁড়ায় ৪৭ রান। তখনও ক্রিজে শেন ওয়াটসন। ১৭তম ওভারে বল করতে আসেন প্রথম দুই ওভারে ১৬ রান দেওয়া ম‌‌‌ুস্তাফিজ। প্রথম বলটি ইয়র্কার। কোনওরকম ঠেকালেও রান নিতে পারেননি ওয়াটসন। পরের বলে দুই রান। তৃতীয় বলে ওয়াটসনকে হেনরিকসের হাতে ক্যাচে পরিণত করলেন মুস্তাফিজ। পঞ্চম বলে হাকে ছক্কা হাঁকান স্টুয়ার্ট বিনি। ওই ওভারে ১০ রান দিয়ে একটি উইকেট নেন কাটার মাস্টার। ১৮তম ওভারে মাত্র ৭ রান দিলেন এ মৌসুমে দুর্দান্ত বোলিং করা ভুবনেশ্বর কুমার। দুই ওভারে বেঙ্গালুরুর দরকার ৩০ রান।

১৯তম ওভারে বল করতে আসেন মুস্তাফিজ। প্রথম বলটি কোনওরকম ঠেকিয়ে রান নিতে গিয়ে আউট স্টুয়ার্ট বিনি। ক্রিজে আসেন ক্রিস জর্ডান। ওভারের দ্বিতীয় মুস্তাফিজের বলে ক্যাচ মিস করেন বরিন্দ্রর স্রান। ফলে দুই রান । তৃতীয় বলটি ডট। চতুর্থ বলে এলবিডব্লিউ আপিল করেন মুস্তাফিজ। তবে তাতে স‌‌‌াড়া দেননি আম্পায়ার। ওই বলে আসে এক রান। শেষ বলে ছক্কা হাঁকান শচিন বেবি। ১৯তম ওভারে মুস্তাফিজ দেন ১২ রান।

শেষ ওভারে বেঙ্গালুরুর প্রয়োজন ১৮ রান। ওই ওভারে ভুবনেশ্বর কুমার দিলেন ৯ মাত্র রান। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৭ উই‌‌‌কেট হারিয়ে ২০০ রান করে বেঙ্গালুরু। ফলে আইপিএল জয়ের উল্লাসে মাতেন মুস্তাফিজ-ওয়ার্নাররা। এদিন চার ওভার বল করে ২৫ রান দিয়েছেন ভুবনেশ্বর। ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন মুস্তাফিজ। দুটি উইকেট নিয়েছেন বেন কাটিং।

চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং নেয় সানরাইজার্স। শুরুতে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন হায়দ্রাবাদের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ও শিখর ধাওয়ান। দলীয় ৬৩ রানে প্রথম উইকেটের পতন হয়। ২৫ বলে ২৮ রান করে আউট হন ধাওয়ান। এর দ্রুত ফিরে যান হেনরিকস (৫ বলে চার রান)।

যুবরাজ সিং এসে ভালো একটা জুটি গড়েন ওয়ার্নারের সঙ্গে। যদিও ৩৮ বলে ৬৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে শ্রীনাথ অরবিন্দের বলে ইকবাল আবদুল্লাহর হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেন তিনি। ৮টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৩টি ছক্কায় সাজানো ছিল ওয়ার্নারের ইনিংস।

২৩ বলে ৩৮ রান করে আউট হন যুবরাজ সিং। ৪টি বাউন্ডারির সঙ্গে ২টি ছক্কার মারও ছিল তার ব্যাটে। শেষ দিকে আসল ঝড়টা তুলেছিলেন বেন কাটিং। ১৫ বলে ৩টি চার আর ৪টি ছক্কায় ৩৯ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে হায়দ্রাবাদের ইনিংস গিয়ে দাঁড়ায় ২০৮ রানে। ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে ৪৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন ক্রিস জর্ডান। ২ উইকেট নেন শ্রীনাথ অরবিন্দ। ইয়ুজবেন্দ্র চাহাল নেন ১ উইকেট।

জবাবে দারুণ শুরু করে বেঙ্গালুরু। ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন ক্রিস গেইল। ১০.৩ ওভারে ১১৪ রানের জুটি গড়েন কোহলি-গেইল। ৩৮ বলে ৭৬ রান করে বেন কাটিং-এর বলে সাজঘরে ফেরেন গেইল। ৮ ছক্কা ও চারটি চারে নিজের ইনিংস সাজিয়েছেন তিনি।

ক্রিজে আসেন ডি ভিলিয়ার্স। ইনিংসের ১৩তম ওভারে নিজের অর্ধশতক পূরণ করেন কোহলি। মাত্র ৩২ বলে অর্ধশতক করেন তিনি। এরপর আর মাত্র ৪ রান যোগ করে সাজঘরে ফিরেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ৫টি চার আর দুটি ছয়ের মার। কোহলিকে বোল্ড করেন বরিন্দ্রর স্রান। কিছুক্ষণ পর বিপুল শর্মাকে তুলে মারতে গিয়ে আউট হন এবি ডি ভিলিয়ার্স (৫)। শেষ ৬ ওভারে বেঙ্গালুরুর প্রয়োজন দাঁড়ায় ৬০ রান। ক্রিজে শেন ওয়াটসন ও লোকেশ রাহুল। ১৬তম ওভারে লোকেশ রাহুলকে ফেরান বেন কাটিং। ৯ বলে ১১ রান করে বোল্ড হন তিনি।

শেষ ৪ ওভারে বেঙ্গালুরুর প্রয়োজন দাঁড়ায় ৪৭ রান। ১৭তম ওভারে বল করতে আসেন প্রথম দুই ওভারে ১৬ রান দেওয়া ম‌‌‌ুস্তাফিজ। প্রথম বলটি ইয়র্কার। কোনওরকম ঠেকালেও রান নিতে পারেননি ওয়াটসন। পরের বলে দুই রান। তৃতীয় বলে ওয়াটসনকে হেনরিকসের হাতে ক্যাচে পরিণত করলেন মুস্তাফিজ।

ওয়াটসন ফেরার পর ফিরে যান বিনি ও ক্রিস জর্ডান। শেষ পর্যন্ত আর পেরে ওঠেনি বেঙ্গালুরু। ফলে আইপিএল-এ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উল্লাসে মাতেন মুস্তাফিজরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত