স্পোর্টস ডেস্ক

০১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৮:২২

রিয়ালের হয়ে অভিষেকেই উজ্জ্বল জিদান তনয় এনজো জিদান

এত দিন জিদান বলতে গুগল সার্চ ইঞ্জিন একজনকেই চিনত—জিনেদিন জিদান। যাঁর পায়ের জাদুতে ফুটবল বিশ্ব মোহাচ্ছন্ন ছিল প্রায় এক দশক। তাঁর ছোঁয়াতেই ফ্রান্সের অনেক দিনের দুঃখ কেটেছে। অধরা বিশ্বকাপটা ধরা দিয়েছে।

কিন্তু আজ জিদান লিখে গুগল বা অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করলে দেখা যাচ্ছে শুধু জিনেদিন জিদান না আরেকজন আছেন। আর তিনি হলেন এনজো জিদান।

এনজো-ঝলক মৌসুমের শুরুতেই একবার দেখা গিয়েছিল। প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতিতে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু ট্রফি ম্যাচে রিমসের বিপক্ষে। ডি বক্সের বাইরে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের একেবারে নাচিয়ে ছেড়ে আলতো এক পাস বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মারিয়ানোর দিকে। তা থেকে গোল না করা সম্ভব নয় কারও পক্ষে। সেদিন থেকেই রিয়াল-সমর্থকেরা ক্ষণ গুনছিলেন, প্রীতি ম্যাচ নয়, কবে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচেই এমন জাদু দেখাবেন এনজো।

অপেক্ষাটা ফুরোল প্রায় সাড়ে তিন মাস পর, গতকাল (২০ নভেম্বর)। কোপা ডেল রেতে কালচারাল লিওনেসার বিপক্ষে কাল এনজো নামবেন, এ আশায় ছিলেন সবাই। আগের লেগেই ৭-১ গোলে জিতেছে রিয়াল। এল ক্লাসিকোর আগে রোনালদো, বেনজেমা, মোরাতাদের বিশ্রাম দিতে চাওয়ার কথা কোচ জিদানের।

কিন্তু কোচ হতাশ করলেন। মূল একাদশে মার্টিন ওডেগার্ড, মারিয়ানো, তেজেরো থাকলেও পুত্রকেই নামালেন না জিদান! দ্বিতীয়ার্ধে সুযোগ মিলল এনজোর। ইসকোর বদলে মাঠে নামলেন। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে অভিষেক হলো জিদান-তনয়ের। এটুকুই যথেষ্ট ছিল, মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে রিয়ালের জার্সিতে পিতা-পুত্রের মাঠে নামাই তো ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ফেলার জন্য যথেষ্ট।

এনজো অবশ্য এতেই সন্তুষ্ট হলেন না। ২১ বছর বয়সী এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার অভিষেকটা স্মরণীয় করে রাখতে সময় নিলেন মাত্র ১৮ মিনিট। ডি বক্সের সীমানা থেকে দুর্দান্ত এক গোলে অভিষেকটা রাঙালেন তিনি। তাঁর জগদ্বিখ্যাত বাবাও রিয়াল অভিষেকে এমন কিছু করতে পারেননি। আর গোলটি কেমন? নিজের বক্সে বল পেলেন পেপে, সেটা ভারানের পা ঘুরে এল এনজোর কাছে। এনজো সেটা দিলেন মার্কো এসেনসিওকে। এসেনসিও থেকে ওডেগার্ড, হামেস, এসেনসিও হয়ে আবার এনজোর কাছে। বাঁ দিকে রিয়াল কাস্তিয়া-সতীর্থ ওডেগার্ডকে দেখে আবার তাঁকে পাস। ওডেগার্ড শরীরে একটা মোচড় দিয়ে সেটা দিলেন মারিয়ানোকে। মারিয়ানোর পাসটা এনজোর কাছে আসতেই এল সে মুহূর্ত, ডাইভ দেওয়া ডিফেন্ডারের পায়ের নিচ দিয়ে বল পাঠালেন এনজো। গোলকিপার দেখলেন, কীভাবে তার পাশ দিয়ে বল জড়িয়ে যাচ্ছে জালে, গো-ও-ও-ল!

মাত্র ১৫ হাজার দর্শকের সুযোগ হলো সে দৃশ্য দেখার। এনজো অবশ্য এতেই খুশি, ‘রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে অভিষেক এবং তাতে গোল করা তো সারা জীবনের স্বপ্ন, আমি খুশি সেটা বার্নাব্যুতে হলো।’ বাবাকে অবশ্য একটু কূটনৈতিক হতে হলো, ‘আমি যদি কোচের স্যুটাটা খুলে ফেলি, তবে অবশ্যই আমি ছেলের জন্য খুশি। আর কোচ হিসেবে আমি ওডেগার্ড, আলভারো ও রুবেনের জন্যও খুশি।

এনজোর এমন গোলের দিনে বাবার দিনটাও খুব ভালো কেটেছে। একদিকে ক্লাসিকোর আগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা ১-১ গোলে ড্র করেছে হারকিউলিসের সঙ্গে। আর তরুণ সব খেলোয়াড়দের নামিয়ে যে পরীক্ষাটা করেছেন, তাতে নিজে পুরোপুরি সফল। মারিয়ানোর হ্যাটট্রিকে ৬-১ গোলে দ্বিতীয় লেগ জিতেছে রিয়াল। মারিয়ানোর প্রথম গোলটি আবার এসেছে ২২ সেকেন্ডে, যা কোপা ডেল রেতে রিয়ালের রেকর্ড। তবে মারিয়ানোর দুর্ভাগ্য, এনজোর দিনে সেটা আর তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে কই!
তথ্যসূত্র: মার্কা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত