স্পোর্টস ডেস্ক

১৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ১৫:০১

টেস্টে অন্য বাংলাদেশ

সাম্প্রতিককালে একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্য ছিলো ইর্ষনীয়। বিপরীতে টেস্টে তেমন উল্লেখযোগ্য সাফল্য নেই। এঅবস্থায় ওয়ানডেতে টাইগাররা সকল প্রতিপক্ষের সমীহ আদায় করে নিলেও টেস্ট পারফরম্যান্সের জন্য প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়তে হতো।

অথচ এবারের নিউজিল্যান্ড সফরে দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারলো না বাংলাদেশ। টি২০তেও একই চিত্র। অথচ টেস্টের শুরুতেই দেখা মিললো বদলে যাওয়া বাংলাদেশের। আসল টাইগারদের।

ওয়েলিংটনকে রেকর্ড বন্যায় ভাসালো বাংলাদেশে। সাকিব আল হাসানের ডাবল সেঞ্চুরি ও মুশফিকুর রহিমের দেড়শ ছাড়ানো ইনিংসের সুবাদে টেস্টের দ্বিতীয় দিনেই চালকের আসনে টাইগাররা। দিনশেষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ৫৪২ রান। তবে তিন ওভার বাকি থাকতে দিনের খেলা শেষ হওয়ার শেষ বলে আউট হয়ে যান মিরাজ।

এদিন তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেন সাকিব। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এটি সাকিবের টানা দ্বিতীয় শতক। ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে সেঞ্চুরি করেন এই অলরাউন্ডার। ২৭৬ বল মোকাবেলা করে ৩১ চারের সাহায্যে ২১৭ রান করেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।  এর আগে ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪৪ রানই এত দিন সাকিবের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ছিল।

প্রথম দিনের ৫ রান নিয়ে খেলতে নামা সাকিব আজ যোগ করেন আরো ১৯৫ রান। ১২৫তম ওভারে কলিন গ্র্যান্ডহোমের বলে পয়েন্ট দিয়ে চার মেরে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাকিব।

তৃতীয় বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে দারুণ এই রেকর্ড গড়লেন সাকিব। এর আগে শ্রীলঙ্কার গলে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেন মুশফিকুর রহিম। ২০০ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এর পর ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০৬ রান করেন তামিম ইকবাল।

ডাবল সেঞ্চুরির দিন তৃতীয় বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে তিন হাজার রানের মাইলফলকও ছুঁলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। ব্যাট হাতে তিন হাজার রান ও বল হাতে ১৫০ উইকেট নেওয়া ১৪তম অলরাউন্ডার তিনি।

এদিন তামিম-ইমরুলের ৩শ’ ১২ রানের রেকর্ড ভেঙে ৩৫৯ রানের সেরা পার্টনারশিপের রেকর্ড গড়েন সাকিব-মুশফিক জুটি। আর পঞ্চম জুটিতে বিশ্বে চতুর্থ সেরা জুটি এটি। তবে ব্যক্তিগত ১শ ৫৯ রানে আউট হন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।

নিউজিল্যান্ডের মাঠে এটি সফরকারী দলগুলোর যেকোনো উইকেট জুটিতে নতুন রেকর্ড। তারা ভাঙেন ৪৪ বছর পুরোনো জুটির রেকর্ড। ১৯৭৩ সালে ডানেডিন টেস্টে চতুর্থ উইকেটে ৩৫০ রান যোগ করেছিলেন পাকিস্তানের আসিফ ইকবাল ও মুশতাক মোহাম্মদ। সেটিই ছিল নিউজিল্যান্ডে বিদেশী দলগুলোর সর্বোচ্চ জুটি। সাকিব-মুশফিকের এই জুটির ওপরে যেকোনো দল মিলিয়েই আছে মাত্র দুটি জুটি।

১৯৯১ সালে এই ওয়েলিংটনে তৃতীয় উইকেটে ৪৬৭ যোগ করেছিল ক্রো-জোন্সের জুটি। সেটি এখনো নিউজিল্যান্ডে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড হয়ে আছে।

সব দেশ মিলিয়ে প্রতিপক্ষে মাটিতে পঞ্চম উইকেটে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে জোহানেসবার্গ টেস্টে স্টিভ ওয়াহ আর গ্রেগ বিলওয়েট পঞ্চম উইকেটে ৩৮৫ রান এনে দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। এরপর প্রতিপক্ষের মাঠে সাকিব-মুশির জুটিটাই পঞ্চম উইকেটের রেকর্ড।

যেকোনো উইকেটে প্রতিপক্ষের মাঠে সবচেয়ে বেশি রান তোলায় টেস্ট ইতিহাসে সাকিব-মুশির এই জুটি থাকল ১৪ নম্বরে। যে তালিকায় সবার ওপরে আছে ১৯৩৪ সালে ওভালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বর্যান্ডম্যান-পন্সফোর্ডের ৪৫১ রানের জুটিটি।

৫৪২ রান এখনো পর্যন্ত বিদেশে মাটিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে ৬৩৮ রান করেছিল বাংলাদেশ। আর সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরের তালিকায় এটি আছে এখন চার নম্বরে। ৬৩৮ ছাড়া ঢকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৫৬ ও খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৫৫৫ রান করেছিল টাইগাররা।

প্রথমদিন শেষে বাংলাদেশের ঝুলিতে জমা পড়েছিল ১৫৪ রান, তিন উইকেট হারিয়ে।

প্রথমদিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও সতর্কভাবে শুরু করেছিলেন মুমিনুল ও সাকিব আল হাসান। তারা ভালো ভাবে এগিয়েও নিচ্ছিলেন দলকে। কিন্তু ৪৪তম ওভারের তৃতীয় বলে  মুমিনুল আউট হয়ে গেলেন টিম সাউদির দুর্দান্ত এক বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে।

মুমিনুল ৬৪ রান করে সাজঘরে ফিরে গেলে দিনের শুরুতেই বাংলাদেশের ইনিংসে একটি ধাক্কা লাগে।  অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও সাকিবের ওপর দায়িত্ব পড়ে সে ধাক্কা সামলানোর। শুরুর এই ধাক্কা সামলে ভালোভাবেই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।

এর আগে প্রথম দিনে তামিম অর্ধশতক করেন। তিনি খেলেন ৫০ বলে ৫৬ রানের দারুণ একটি ইনিংস। অবশ্য খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি ইমরুল (১) ও মাহমুদউল্লাহ (২৬)।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত