আবদুর রশিদ রেনু

১৫ জুন, ২০১৭ ০১:০৮

এজবাস্টন হোক আজ কুইন্স পার্ক

বাংলাদেশ-ভারত সেমিফাইনাল

আইসিসি টুর্নামেন্টে আরেকটা বাংলাদেশ-ভারত লড়াই। রোমাঞ্চ, উত্তেজনার পারদ এখন ঊর্ধ্বমুখী। উত্তেজনার ঢেউ লেগেছে উভয় দলের সমর্থক, সাবেক বর্তমান ক্রিকেটার ও গণমাধ্যমেও।

বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেটের মহারণ আজ (১৫ জুন) বৃহস্পতিবার। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম এজবাস্টন স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে দু’দল। বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায় শুরু হবে ম্যাচটি। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি, মাছরাঙা টিভি ও বিটিভি।

উত্তেজনার লড়াইয়ে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন দেখছে টিম বাংলাদেশ। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারত টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে এই ম্যাচে জয় ছাড়া কিছুই ভাবছেনা। এই অবস্থায় সমর্থকদের প্রত্যাশা মেলবোর্নের প্রতিশোধ নিয়ে টাইগাররা এজবাস্টনকে পরিণত করুক কুইন্স পার্ক ওভালে। বাংলাদেশ কোচ হাতুড়ে সিংহ মনে করেন ভারতকে হারানো অসম্ভব নয়।

আইসিসির কোন টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মত সেমিফাইনালে উঠে কোটি সমর্থককে ফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখাচ্ছে মাশরাফি বাহিনী। সেমিফাইনালের আগে বুধবার ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ভারত বাঁধা ডিঙিয়ে এবার ফাইনালে যাওয়ার ছক আঁকছেন সাকিব-তামিমরা। কাজটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয় বলেই মনে করছেন মাশরাফিরা। স্বপ্ন পূরণের পথে আরও এক ধাপ আগাতে হলে যার যার কাজটা ঠিকঠাক করার উপর জোর দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ভালো খবর হচ্ছে তামিম ছাড়াও ফর্মে আছেন সাকিব-মাহমুদুল্লাহ। এ ম্যাচে বাংলাদেশ দলের ওপেনিংয়ে একটি পরিবর্তন হতে পারে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মত আসরের ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ টাইগাররা।

গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারতের শুরুটা ছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে। যারা ইতোমধ্যে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছে। মাঝে শ্রীলংকার বিপক্ষে হারলেও শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দারুণ জয়ে সেমিতে ওঠে কোহলির ভারত। এবার চোখ ফাইনালে। দলে আছে একাধিক বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান। নিজেদের দিনে দলপতি কোহলি ছাড়াও, অভিজ্ঞ ধোনী, ধাওয়ানরা যে কোন বোলিং তছনছ করে দিতে পারেন। তবে, সাম্প্রতিক বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে সমীহ করছে ভারত। বুধবার সেমিফাইনালের আগে ভারত অধিনায়ক বাংলাদেশকে দেখছেন সমীহের চোখে। না, শুধু ক্রিকেটীয় সৌজন্য মেনে নয়; সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দেখেই বিরাট কোহলি বলছেন, বাংলাদেশ নিজেদের দিনে ভয়ংকর দল।

যদিও অতীত ইতিহাস ভারতের পক্ষে। ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে ৩২টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। সেখানে টাইগারদের জয় ৫টিতে। ভারতের জয় ২৬টিতে। একটি ম্যাচে কোন রেজাল্ট হয়নি। দ্বিতীয় সেমির আগে ক্রিকেট পণ্ডিতরা অবলীলায় ভারতের পক্ষে বাজি ধরছেন। তবে সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার মাইক হাসি বাংলাদেশকে হেলায় হারিয়ে দিতে চাইছেন না। তার কথায়, “যোগ্য টিম হিসেবে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠেছে। আশা করি ওরা ভালো করবে।” অনেকটা একই সুরে কথা বলেছেন ভারতীয় ক্রিকেট কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কারও।

সপ্তাহ দুয়েক আগে মন খারাপ করে বার্মিংহাম ছেড়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। প্রস্তুতি ম্যাচে ৩৪১ রান করেও পাকিস্তানের কাছে হারতে হয়েছিল তাদের। সেই হতাশা নিয়ে বার্মিংহাম থেকে বাসে করে লন্ডনে গিয়েছিল মাশরাফি বাহিনী। এখন দ্বিতীয় দফায় বার্মিংহামে সেই একই হোটেলে ফিরে এসে অন্য মেজাজে বাংলাদেশ।

২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে দুই আম্পায়ারের নির্লজ্জ পক্ষপাতদুষ্ট আচরণে ভারতের কাছে পরাজিত হয়েছিল বাংলাদেশ। এমন স্মৃতি বেশ সতেজ এখনও টাইগার শিবিরে। প্রতিপক্ষ ভারত বলেই ভেসে আসছে প্রায় আড়াই বছরে আগের মেলবোর্নের সেই দুঃসহ স্মৃতি।

আমাদের কামনা, ২০১৫ সালের ১৯ মার্চের মেলবোর্নের সেই দুঃসহ স্মৃতি ভুলে ২০০৭ সালের ১৭ মার্চের কুইন্স পার্ক ওভাল হয়ে উঠুক বার্মিংহামের এজবাস্টন। ফিরে আসুক বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যেকার সর্বশেষ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ, ফিরে আসুক ঢাকার মিরপুরের স্মৃতি। যেখানে বিশ্বকাপের পর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে মুস্তাফিজ বিস্ময়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতেছিল ভারতের বিরুদ্ধে (২-১)। এবার সেমিতে জ্বলে উঠার পালা মুস্তাফিজের। চলতি বছরের আইপিএলে তার প্রতি যে অবহেলা করেছে ভারতীয় দলটি মাঠে এর জবাব দিতে পারলে বাংলাদেশ উঠে যাবে ফাইনালে। সেই সাথে চাই মাশরাফি, তাহসিন ও রুবেলের যোগ্য সহযোগিতা।

ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে পেশ আক্রমণের দায়িত্বটা তাদের পালন করতে হবে। ভুলে গেলে চলকে না যে, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ওয়েস্টইন্ডিজের কুইন্স পার্ক ওভালে বাংলাদেশের কাছে ৫ উইকেটে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল ভারত। ম্যাচ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলের মাশরাফি বিন মর্তুজা। আগে ব্যাট করে মাশরাফির ৪, স্পিনার রফিক ও আব্দুর রাজ্জাক ৩টি করে উইকেট নিয়ে ১৯১ রানেই গুটিয়ে দিয়েছিল ভারতকে। সেই ম্যাচে ছিলেন শচিন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড়, বীরেন্দ্র শেহওয়াগ, যুবরাজ সিং, ধোনি। ভারতের বর্তমান ব্যাটিং লাইনআপ তাদের চেয়ে শক্তিশালী নয়। সেই দলের শেষ দুইজন বর্তমানেও আছেন। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচজয়ী মাশরাফি, সাকিব, তামিম ও মুশফিক রয়েছেন বাংলাদেশ দলে। চার জনের হাত ধরেই ম্যাচটি জিতেছিল বাংলাদেশ। চার উইকেট নিয়ে মাশরাফি ম্যাচ সেরা হলেও ব্যাটিংয়ে তিন জনেই করেছিলেন হাফ সেঞ্চুরি।

মেলবোর্ন নয়, এজবাস্টনে ফিরে আসুক কুইন্স পার্ক ওভালের স্মৃতি- এমন প্রত্যাশা আজ ১৬ কোটি বাঙালির।

  • লেখক : ক্রীড়া সাংবাদিক; সাধারণ সম্পাদক, সিলেট প্রেসক্লাব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত