সিলেটটুডে ডেস্ক

০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৮:৫৭

ব্যাটিং ব্যর্থতায় আফসোসের হার

ইশ, আর কিছু রান হলেই তো...। দ্বিতীয় ইনিংসে বড্ড বেশি খারাপ করে ফেলেছেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। ১৫৭ না হয়ে, কেন দুইশ টুইশ করা গেল না, আর অল্প কিছু রান হলেই তো দারুণ জমে উঠতো ম্যাচটা। ফল হতে পারতো উল্টো। এ নিয়ে আফসোস থাকবে হয়তো।

৮৬ রানের মামুলি টার্গেট। ক্রিকেট যতই অনিশ্চয়তার খেলা হোক, সামান্য এই টার্গেট সহজেই অতিক্রম করে ফেলবে পেশাদার অজি ব্যাটসম্যানরা, তার নিশ্চয়তা ছিল ৮৫ শতাংশ। কখনও কখনও বড় অঘটনও তো হয়ে যায়! সেই আশায়ও গুঁড়েবালি। চট্টগ্রাম টেস্ট ৭ উইকেটে জিতে নিয়ে দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করেছে সফরকারীরা। ঢাকা টেস্টের মতো চট্টগ্রামেও ম্যাচ শেষ চার দিনে।

টার্গেট যত কম ব্যাটসম্যানদের উপর চাপও তত কম। অজি ব্যাটসম্যানরা ছিলেন তাই নির্ভার। অন্যদিকে রাজ্যের চাপ ছিল বোলারদের উপর। সেই চাপ নিয়ে শুরুতেই অবশ্য বিপজ্জনক ওয়ার্নারকে ৮ রানে ফিরিয়ে কিছুটা উত্তেজনা আনেন মোস্তাফিজ।

১৩ রানে এক উইকেট। এই সময় দরকার ছিল আরো গোটা দুয়েক উইকেট। অধিনায়ক স্মিথকে ব্যক্তিগত ১৬ রানে যখন তাইজুল ফেরালেন তখন অজিদের দলীয় সংগ্রহ ৪৪ রান। এর সঙ্গে চার রান যোগ না হতেই সাকিবের আঘাত। ২২ রানে রেনশকে বিদায় করে আফসোস আরোও বাড়িয়ে দেন সাকিব। ৪৮ রানে নেই তিন উইকেট।

কিন্তু হতাশ করে ম্যাক্সওয়েল- হ্যান্ডসকম্ব জুটি দাঁড়িয়ে গেলেন। ব্যস। এই জুটিতেই খেলা শেষ। সাত উইকেট হাতে রেখেই স্বস্তির জয় তুলে নেয় অজিরা।

এর আগে দ্বিতীয় ইনিংস বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যায় মাত্র ১৫৭ রানে। ৯ ব্যাটসম্যানের দলে হাফ সেঞ্চুরি নেই একটিও। ৩১ রান করলেন মুশফিক। ৩০ এর অঙ্ক স্পর্শ করতে পারেননি আর কেউ। মূলত প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের শোচনীয় ব্যর্থতায় অজিদের সামনে চ্যালেঞ্জিং টার্গেট দাড় করানোর হিসেব গড়বড়।

বাংলাদেশের ব্যাটিং একাই ধস নামান স্পিনার নাথান লায়ন। প্রথম ইনিংসে ৯৪ রানে নিয়েছিলেন ৭ উইকেটে। আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬০ রান দিয়ে নিলেন ৬ উইকেট। মানে দুই ইনিংসে ১৩ উইকেট। টেস্টে এটা তার সেরা বোলিং ফিগার।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩০৫ রানের জবাবে অজিরা করেছিল ৩৭৭। ৯ উইকেটে ৩৭৭ রান করে বুধবার তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিল তারা। আজ চতুর্থ দিনে মাত্র ১১ বল মোকাবেলা করতে পেরেছে অজি শেষ উইকেট জুটি। তবে এই ১১ বলে এক রানও আসেনি। মানে আগের দিনের সঙ্গে কোনো রান যোগ না করেই অলআউট হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। শেষ উইকেটটি নেন মোস্তাফিজ। ৮৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার তিনিই।

প্রথম ইনিংসে ৭২ রানে পিছিয়ে থাকার চাপ নিয়ে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। এরপর যা হয়েছে তা লজ্জার। উইকেট যে খুব একটা কঠিন ছিল তা নয়, কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় টপাটপ পড়তে থাকলো উইকেট। লড়াইয়ের পরিবর্তে আগেভাগেই হাল ছেড়ে দিতে থাকলো টাইগাররা।

যথারীতি শুরুটা করেন সৌম্য সরকার, ৯ রান করার পর পেসার কামিন্সের বলে আউট হয়ে। সকালে যে পথটা দেখিয়ে গেলেন সৌম্য, সে পথেই একে একে হাটলেন তামিম (১২), ইমরুল (১৫), নাসির (৫) ও সাকিব (২)। ৪৩ রানেই অর্ধেক শেষ। সাম্প্রতিক বছরগুলো এমন ব্যাটিং ধস দেখা যায়নি টাইগারদের।

তাহলে কী ৭২ রানও টপকাতে পারবে না বাংলাদেশ? ভালো কিছুর হিসেবে কষেও হারতে হবে ইনিংস ব্যবধানে? এই শঙ্কায় যখন দল তখন লড়াই চালিয়ে যাবার ঘোষণা মিললো অধিনায়ক মুশফিক ও সাব্বির রহমানের ব্যাটে। ৪০ রানের জুটি গড়ে লাঞ্চে যান তারা। বাংলাদেশের স্কোর তখন ৫ উইকেটে ৮৩। ৯ রানের লিড।

কিন্তু চট্টগ্রাম টেস্টের বারোটা তো আগেই বাজিয়ে গেছেন প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যান। পাঁচজন মিলে ১০০ রানও যদি করে যেতেন! তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারতো।

ভরসা যেটুকু ছিল তা মুশফিক ও সাব্বিরকে নিয়ে। কিন্তু ভালো খেলার পথে ২৪ রান করার পর লায়নের বলে স্ট্যাম্প হয়ে যান সাব্বির। প্রথম ইনিংসে ৮২ বলে ৩১ রানের ছোটখাটো একটা লড়াকু ইনিংস খেলেছিলেন মুমিনুল। আর মুশফিকের ব্যাট থেকে এসেছিল ৬৮ রান।

কঠিন পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় ইনিংসেও লড়াই ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। তাদের কাছ থেকে দরকার ছিল বড় ইনিংস। কিন্তু ১২৮ বলে ৩১ রান করে কামিন্সের শিকার হন অধিনায়ক। এরপর কিছু সময় উইকেটে থাকার পর ২৯ রান করে আউট হয়ে যান মুমিনুল। ব্যস, এখানেই সব শেষ। বাংলাদেশ অলআউট মাত্র ১৫৭ রানে।

প্রথম ইনিংসে নাথান লায়ন নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসেও লায়ন স্পিনে কুপোকাত টাইগাররা। ৬০ রানে নেন ৬ উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ফল: সাত উইকেটে জয়ী অস্ট্রেলিয়া

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩০৫ (১১৩.২ ওভার)

সিরিজ ফল: ১-১ ড্র

আপনার মন্তব্য

আলোচিত