স্পোর্টস ডেস্ক

২৫ মার্চ, ২০১৮ ১০:৫৩

সবাই মিলে বল টেম্পারিং!

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চলমান কেপটাউন টেস্টে দলীয় সিদ্ধান্তে বল টেম্পারিং করার কথা স্বীকার করেছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। ভিডিও ফুটেজে বল টেম্পারিং করার দৃশ্য ধরা পড়ার পর তারা অনুতপ্ত জানিয়ে এজন্যে ক্ষমাও চেয়েছেন অধিনায়ক। দাবি করেন এরআগে কখনো এমন করেননি তারা।

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড বলেছেন এই ঘটনায় তারা ‘ব্যথিত এবং সত্যিকারের হতাশ’। সঙ্গে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন।

ঘটনার সূত্রপাত টেস্টের তৃতীয় দিনে। দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ ব্যাট করে বড় লিডের পথে থাকা প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের ঠেকাতে অস্ট্রেলিয়া আশ্রয় নেয় প্রতারণার। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ফিল্ডার ক্যামেরন বেনক্রফট দুহাত দিয়ে বারবার বলের আকার বদলানোর চেষ্টা করছেন, এবং ট্রাউজারের পকেটেহাত দিচ্ছিলেন। পরে দেখা যায় পকেটে থেকে কিছু একটা বের করে তা আন্ডার-গার্মেন্টসের ভেতর ঢুকিয়ে রাখছেন।

আইসিসির নীতিমালা অনুযায়ী, হাত কিংবা কোনো কৃত্রিম পদার্থ দিয়ে বলের রং চটানো কিংবা কোনো প্রকার পরিবর্তন নিষিদ্ধ। ক্রিকেটাররা বড়জোর ট্রাউজারের সঙ্গে বল ঘষতে পারেন।

কেপটাউন টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শেষে স্মিথ বলেছেন, ‘দলের নেতৃত্ব গ্রুপ এটা সম্পর্কে জানত, আমরা লাঞ্চের সময় এই নিয়ে কথা বলেছি। যা হয়েছে তা নিয়ে অবশ্যই আমি গর্বিত না। এটা খেলার স্পিরিটের সঙ্গে যায় না।’

স্মিথ বলেন, ‘আমার বিশ্বাসযোগ্যতা, আমাদের দলের বিশ্বাসযোগ্যতা, নেতৃত্ব দেওয়া গ্রুপের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আগামীতে অবশ্যই এরকমটি আর হবে না। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’

কার মাথা থেকে এই বুদ্ধি তা প্রকাশ না করলেও বারবার নিজেদের কাণ্ডে অনুতপ্ত হওয়ার কথা জানান অস্টেলিয়ান অধিনায়ক, ‘আমি নাম বলতে চাই না। কিন্তু নেতৃত্ব দেওয়া গ্রুপ ছিল এই নিয়ে কথা বলার সময়। বেনক্রফট ছিল। আমরা আলাপ করছিলাম এটা করে একটু সুবিধা নেওয়া যায় কিনা। অবশ্যই এটা কাজ করেনি। বদলের পর কোন বাড়তি সুবিধা মেলেনি। এটা একটা বাজে সিদ্ধান্ত ছিল এবং এরজন্য গভীরভাবে অনুতপ্ত।’

এর আগে বেনক্রফট বল টেম্পারিং করার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এটা চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আসলে কাজ হয়নি।’

একটা ফুটেজে দেখা যায় অস্ট্রেলিয়ান কোচ ড্যারেন লেম্যান ও বদলি খেলোয়াড় পিটার হ্যান্ডসকম্ব কথা বলছেন, পরে বেনক্রফটের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দেন হ্যান্ডসকম্ব। যদিও স্মিথের কথা এতে জড়িত ছিলেন না কোচ। তার দাবি, ‘না এতে কোচ জড়িত নন। এটা একদম বাজেভাবে করেছে প্লেয়াররা ও লিডারশিপ গ্রুপ।’ তবে সেই লিডারশিপ গ্রুপে কারা কারা আছেন নাম বলেননি স্মিথ।

বল টেম্পারিংয়ের চাঞ্চল্যকর ঘটনার মধ্যে কেপটাউন টেস্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। অসিদের স্যুয়িং, রিভার্স স্যুয়িং, বাউন্স সামলে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেটে ২৩৮ রান তুলে ফেলেছে প্রোটিয়ারা। এইডেন মার্কামের ৮৪ রানের পর এবিডি ভিলিয়ার্স অপরাজিত আছেন ৫১ রানে। স্বাগতিকরা এরমধ্যে ২৯৪ রানের লিড নিয়ে নিয়েছে। প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার ৩১১ রানের জবাবে ২৫৫ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।

এদিকে, বিবিসি জানিয়েছে, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার দুইজন কর্মকর্তা সাউথ আফ্রিকা যাবেন ঘটনা তদন্ত করতে। তবে স্মিথ আপাতত অধিনায়কই থাকছেন।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার সাবেকরা স্মিথদের ধুয়ে দিচ্ছেন। সাইমন ক্যাটিচ বলেছেন, অধিনায়ক স্মিথ, সহঅধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার এবং কোচ ড্যারেন লেহম্যানকে বরখাস্ত করা ছাড়া ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সামনে কোনো উপায় নেই। সাবেক পেসার রডনি হগ স্মিথকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত