তাহিরপুর প্রতিনিধি

১১ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০১

তাহিরপুরে ১৫২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়ন মেঞ্জারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটিতে শহীদ মিনার নেই। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি-সিলেটটুডে।

সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুরের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোটিতে পতাকা উত্তোলন করেই দিবসটি পালন করা হয়। আবার কোনোটিতে দিবস পালনই হয় না।

অন্যদিকে যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার রয়েছে সেগুলো পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। বিভিন্ন জাতীয় এলেই শহীদ মিনারগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। না হলেই অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে থাকে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় শহীদ মিনার যেন দিবস কেন্দ্রীক হয়ে ওঠেছে।

স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও উপজেলার প্রায় দেড়শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকাটা লজ্জার বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল। তারা এসব বিদ্যালয়ে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, উপজেলায় ২টি কলেজ, ১৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৪টি মাদ্রাসা এবং ১৩৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে বাদাঘাট, জনতা, বীরেন্দ্রনগর, ট্যাকেরঘাট, বালিজুরী আনোয়ারপুরসহ ৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। বাকি ১৫২টি প্রতিষ্ঠানে আজও গড়ে ওঠেনি শহীদ মিনার। যার ফলে বিভিন্ন দিবসে শিক্ষার্থীর বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাহিরপুর উপজেলা সদরের একাধিক শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের বিদ্যালয়ে কোনো শহীদ মিনার নেই। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জাতীয় দিবসগুলোতে উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এদিন তাদের বিদ্যালয় বন্ধ থাকে।

জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোদাচ্ছির আলম সুবল বলেন, ‘অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় জাতীয় দিবসে শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে না শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ ও সেই সাথে জাতীয় দিবস বিদ্যালয়ে পালন করা উচিত।’

বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বাদাঘাট বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুক মিয়া বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা অন্দোলনের তাৎপর্য সম্পর্কে জানাতে হলে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন। তা না হলে শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানবে না।’

তিনি আরও জানান, বর্তমানে বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারটিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও সাংস্কৃতিক দলের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন দিবসে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। অথচ এটিও জরাজীর্ণ। এটা সংস্কার করা সময়ের দাবি।

তাহিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে হলেও প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।’

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘শহীদ মিনার স্থাপনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত