তাহিরপুর প্রতিনিধি

১৭ আগস্ট, ২০২২ ১৫:৩৫

তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট, পাঠদান বিঘ্নিত

শিক্ষক ও কর্মচারী সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১১টি পদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৫টিতে। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে তেমনি ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম। একইসাথে বিদ্যালয়ের পরিবেশও চরম নোংরা হচ্ছে। এ সংকট কবে নাগাদ শেষ হবে তা বলতে পারেন না বিদ্যালয়ের প্রধানরাও।

বিদ্যালয়টিতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৭ সাল থেকে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষক সংকটে ভুগছে কিন্তু সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা এই বিষয়ে সমাধানে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। ফলে প্রতি বছরেই সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর ফলাফলে ধস নামছে। বর্তমানে যেখানে শিক্ষক সংকটে পাঠদান করাই কঠিন সেখানে ডেপুটেশনে আছেন একজন শিক্ষক। তিনি কিভাবে এই সংকটের মধ্যে ডেপুটেশন সিলেট আliয়া মাদ্রাসায় থাকার সুযোগ পান, কিভাবেই বদলী হয় আর কিভাবেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেন প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগন।

আরও জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গণিতের শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষক ১জন, সহকারী প্রধান শিক্ষক ১জন, সহকারী শিক্ষক ৪জন, অফিস সহকারী ১জন, পিয়ন ২জন, নাইটগাট ১জন, মালি ১জন সংকট রয়েছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষক সহ জনবল সংকটের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে।

অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দা রুকন উদ্দিন তালুকদার জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষক সহ জনবল সংকটের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে। দিন দিন শিক্ষার মান নিম্নমুখী হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উচিত দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার মান বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

প্রথমে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী এহসানুল হক আবির জানান, বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক সংকটের কারণে আমাদের এই বিদ্যালয়টির সকল শিক্ষার্থীরা সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে ক্লাস করতে পারছেন না। নতুন শিক্ষক নিয়োগের জন্য জোড় দাবী জানাই।

শিক্ষার্থী দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নলিমা আক্তার মায়া জানান, শিক্ষক সংকট দুর করা না হলে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাল ফলাফল করতে পারছে না, নিয়মিত পাঠদানে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের স্কুলে ফলাফল খারাপ হওয়ায় সুনাম নষ্ট হচ্ছে।

ইংরেজি বিষয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. জাহিদুল কামাল বলেছেন, তিনি ইংরেজির শিক্ষক হলেও শিক্ষক সংকটের কারণে তাকে একাধিক ক্লাসের পাঠদান করতে হয় এতে করে চাপ বেড়ে যায়। শিক্ষক সংকটের কারণে আমরা যারা শিক্ষক আছি তারা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি।

ভৌত বিজ্ঞানের সিনিয়র শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন জানান, সৃষ্টপদ ও সৃষ্টতব্য পদের কারণে শিক্ষক সংকট লেগেই আছে গত তিন যুগের বেশি সময় ধরে। এতে করে বিদ্যালয়টির প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে শিক্ষকগনও নিজেদের মধ্যে দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে থাকেন সিদ্ধান্ত নিয়ে। ধ্বংশের মুখে থাকা বিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন কঠোর নজরদারির করলে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কদ্দুস জানান,অফিস সহকারী না থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককেই সকল কাজ করতে হয়। শিক্ষা সংকটের মধ্যে একজন ডেপুটেশন আছে তিনি থাকলেও উপকার হত। শিক্ষক সংকটসহ প্রতিষ্ঠানটির জনবল সংকটের বিষয়ে বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হলেও আজও কোনো কাজ হয়নি। ফলে সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রমে চরম ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান,শিক্ষক সংকটের বিষয় আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে বার বার জানানো হচ্ছে। কিন্তু কোন কাজেই হচ্ছে না। আর একজন শিক্ষক ডেপুটেশনে আছেন তা আমাদের কিছুই করার নেই। ঐ শিক্ষক ঢাকা থেকে অনুমতি নিয়ে সিলেট আলীয়া মাদ্রাসা এখনও কর্মরত আছেন।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমি বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো দেখি সরকারীগুলো আমি দেখি না। সিলেট ও ঢাকা মাধ্যমিক অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় এখানে আমার কিছুই করার থাকে না। এর পর আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলল।

এ বিষয়ে সিলেট আঞ্চলিক উপ পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির জানান, তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের বিষয় অবগত আছি। আমাকে কেন্দ্রীয় ভাবে শিক্ষক দিলে আমি ঐ বিদ্যালয়ে শিক্ষক দিতে পারব। না হলে পারব না।

আর শিক্ষক সংকটের মধ্যে একজন শিক্ষক কিভাবে ডেপুটেশনে সিলেট আলীয়া মাদ্রাসায় কর্মকর্তা থাকেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি জানি গত একবছর পূর্বে ডেপুটেশনে থাকা সকল শিক্ষকে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল জেনারেলি। পরে আমি ঐ শিক্ষকে বলেছিলাম নিজ কর্মস্থল তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য তিনি না গিয়ে কিছু দিন পর এসে আমাকে বললেন ঢাকা থেকে তিনি অনুমতি নিয়ে এসেছেন কিন্তু কোন লিখিত ভাবে কাগজ দিতে পারেন নি।

এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির জানান, তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের বিষয়টি দীর্ঘদিনের এই বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এই বিষয়ে আরও গুরুত্ব সহকারে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত