০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০৩:১২
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সন্তান হারানোর ঘটনায় দায়ের করা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য সিলেটের পুলিশ ও বিএনপি কর্মীরা চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাদী।
রোববার নগরের বারুতখানায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন বাদী কয়ছর আহমেদ।
তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গোলাপগঞ্জ উপজেলায় নিহত সানি আহমদের বাবা। সানি আহমেদ ৪ অগাস্ট গুলিতে নিহত হন। তবে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশ ও বিএনপি নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কয়ছর আহমদ অভিযোগ করে বলেন, তিনি থানার মামলায় যে এজাহার দিয়েছিলেন সেখান থেকে কিছু আসামিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিএনপির স্থানীয় কিছু কর্মী প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষরও নেয়।
অপরদিকে থানার মামলার অগ্রগতি না দেখে তিনি আদালতে মামলা করেছেন। সেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার হচ্ছে বলে অভিযোগ বাদীর।
কয়ছর আহমদ বলেন, ৪ আগস্ট দুপুরে উপজেলার ধারাবহর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে তার ছেলে সানি আহমদ নিহত হন। সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরদিন তার লাশ দাফন করা হয়।
তিনি বলেন, ঘটনার পর স্থানীয় বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মী তাদের তৈরিকৃত এজাহার অনুসারে মামলা করার পরামর্শ দেন। কিন্তু তা প্রত্যাখান করি। ২৫ আগস্ট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ রায়, গোলাপগঞ্জ মডেল থানার তৎকালীন ওসি মাসুদুল আমীনসহ গোলাপগঞ্জ থানার পুলিশ, বিজিবি ও গোলাপগঞ্জের আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের আসামি করে থানায় অভিযোগ দিই।
২৭ আগস্ট রাতে বিএনপি সমর্থিত জামাল, কবির, ঢাকা দক্ষিণ ইউপির সদস্য মকবিল মেম্বার আমার বাড়ি যান। ওসি মীর নাসিরের কথা বলে দাখিল করা এজাহার মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে বেশ কয়েকটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। কিন্তু কোনো অগ্রগতির কথা থানা থেকে জানানো হয়নি।”
কয়ছর আহমদ বলেন, ২ সেপ্টেম্বর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন। শুনানি শেষে বিচারক মামলাটি গ্রহণ করতে থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। আদালতে মামলার পর তিনি জানতে পারেন, গোলাপগঞ্জ থানা তার দেওয়া এজাহারটি গ্রহণ করেনি।
“পরে আমার স্বাক্ষর নেওয়া কাগজে এসি ল্যান্ড, পুলিশ, বিজিবিসহ যাদের আসামি করা হয়েছিল তাদের নাম বাদ দিয়ে একটি মামলা থানায় রেকর্ড করা হয়েছে। এটা বিএনপির লোকজন করেছে। উপরন্তু আদালতের মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য গোলাপগঞ্জ পুলিশ, বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মী আমাকে চাপ ও হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন।”
এর পেছনে পুলিশের কারসাজি আছে অভিযোগ করে কয়ছর আহমদ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে সিলেট বিভাগে পুলিশের ডিআইজি ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ থানার ওসি মীর মোহাম্মদ আব্দুন নাসের বলেন, মামলার বাদী নিজে এসে পাঁচ থেকে সাতজনের সামনে এজাহার দাখিল ও স্বাক্ষর করেছেন। তাহলে পুলিশ কিভাবে আসামিদের মামলায় আসামিদের নাম রেকর্ডভুক্ত করবে। আর উনি একই ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করেছেন। একটি থানায় অপরটি আদালতে। তাহলে দুটি মামলা দায়েরের উদ্দেশ্য কী?
অভিযোগের বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে বিএনপির পক্ষ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারের পাশে বিএনপির নেতাকর্মী রয়েছেন। মামলা প্রত্যাহারে বিএনপির নেতাকর্মী বা আইনজীবীদের চাপ দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।’
আপনার মন্তব্য