১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০৪:৫৩
গণঅভ্যুত্থানের পর সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও অস্থিরতা বিরাজ করছিল। পুরো আগস্ট মাস জুড়ে প্রায় প্রতিদিনই সিলেটের কোনো না কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভিসি, অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষকদেরও অপসারণ দাবি তুলে আন্দোলন করছেন। এখনো কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চলমান রয়েছে।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার অস্থিরতা বিরাজ করছে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গা শেখ ফজিলাতুন্নেছা ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায়। মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতায় ২০১৯ সাল থেকে অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওয়ারিছ উদ্দিন আল মামুন এর পদত্যাগের দাবিতে একযোগে আন্দোলন করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে বুরুঙ্গা শেখ ফজিলাতুন্নেছা ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ মাওলানা শায়েখুল ইসলামের মৃত্যুর পর মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি মুফতি কামরুল ইসলাম ও তার ভাইয়ের ছেলে সহসভাপতি রাশেদুল হক বজলু চৌধুরী নিয়ম বহির্ভূতভাবে ওয়ারিছ উদ্দিন আল মামুনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। গভর্নিং বডির সভাপতি মুফতি কামরুল ইসলাম সিলেটে সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর চাচাত ভাই হওয়ায় এবং আওয়ামী মদদপুষ্ট হওয়ায় সবসময় এই মাদ্রাসার বিভিন্ন কাজে প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। তাদের সাথে নিয়ে বিগত কয়েকবছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাদ্রাসায় বিভিন্ন দুর্নীতি করছেন। যে শিক্ষকরা তাদের এসব অবৈধ কাজে প্রতিবাদ করেন তাদের নামে মামলা, ভয়ভীতি দেখিয়ে দমিয়ে রাখেন।
তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হওয়ায় এবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওয়ারিছ উদ্দীন আল-মামুনের অপসারণের দাবিতে ছাত্র শিক্ষক এক হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুপমা দাসের কাছে আবেদন পত্র প্রদান করেছেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আগেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে পদত্যাগের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মৌখিক ভাবে অনুরোধ জানানো হয়। এরপর থেকে ধারাবাহিক ভাবে অধ্যক্ষ পদত্যাগ আন্দোলন চলমান আছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীর অভিভাবকসহ এলাকাবাসীকে নিয়ে মতবিনিময় সভা করে। সভায় মাদ্রাসার চলমান সংকট নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর ৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে মাদ্রাসা গভর্নিং বডির সভাপতি মাওলানা মুফতি কামরুল ইসলাম চৌধুরী নিজ উদ্যোগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওয়ারিছ উদ্দিন আল মামুনকে অব্যাহতি দিয়ে মাদ্রাসার প্রভাষক মো. তারেককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের দায়িত্ব দেন। সভাপতি কর্তৃক নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের খবর পেয়ে ১০ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার শিক্ষকরা এক জোট হয়ে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহকারী অধ্যাপক সাজিদা বেগমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন।
এ ব্যাপারে সহকারী অধ্যাপক সাজিদা বেগম বলেন, ২০১৯ সালে আমাদের মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মারা যাওয়ার পরই গভর্নিং বডির সভাপতি মুফতি কামরুল ইসলাম ও তার ভাইয়ের ছেলে সহসভাপতি রাশেদুল হক বজলু চৌধুরী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে না করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ওয়ারিছ উদ্দিন আল মামুনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। তখন আমার এ ব্যাপারে কথা বললেও আমাদের কথা গভর্নিং বডি শুনেনি। কারণ তখন তাদের সরকার দলীয় প্রভাব ছিল। তখন জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হওয়ার কথা ছিল আরেক শিক্ষক আহমদ আলী হেলালী সাহেবের। কিন্তু তিনি তাদের মনমত না হওয়ায় তাকে অধ্যক্ষের হত্যা মামলায় ফাঁসানো হয়। পরবর্তীতে তিনি এই হত্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেলেও বর্তমান গভর্নিং বডির প্রভাবশালীদের কারণে এখনো তিনি মাদ্রাসায় আসতে পারেন না। তাদের বাধ্যগত ছিলাম না বলে আমিসহ ৬ জন শিক্ষকের নামে আরও একটি মিথ্যা অভিযোগে মামলা করেছেন গভর্নিং বডির সহসভাপতি রাশেদুল হক বজলু চৌধুরী। এই মামলা এখনো চলমান আছে।
সাজিদা বেগম বলেন, এবারও অধ্যক্ষ অপসরণের দাবি ওঠলে আবার সভাপতি জ্যৈষ্ঠটার ভিত্তিতে না করে জুনিয়র একজন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। কিন্তু যে শিক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তিনিও এই দায়িত্ব নিতে রাজি নন। তাই শিক্ষকরা এক জোট হয়ে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। কিন্তু এখনো ওয়ারিছ উদ্দিন আল মামুন সাহেব পদত্যাগ করেননি। তবে আমরা এই মাদ্রাসায় একজন অধ্যক্ষ চাই। এবং গভর্নিং বডিরও পরিবর্তন চাই।
এ ব্যাপারে গভর্নিং বডির সভাপতি মুফতি কামরুল ইসলাম বলেন, আমি অসুস্থ। তবে আন্দোলন হয়েছে শুনেছি। কিন্তু নতুন কাউকে দায়িত্ব আমি দিইনি। এ ব্যাপারে আমি অবগত না।
আপনার মন্তব্য