নিজস্ব প্রতিবেদক

০২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:৪৭

সিলেটে চা উৎপাদনে স্বস্তি, দাম নিয়ে শঙ্কা

উৎপাদন ভালো হওয়ায় স্বস্তি বিরাজ করছে সিলেটের চা বাগানগুলোয়। তবে অধিক উৎপাদনের কারণে দাম নিয়েও শঙ্কিত বাগান-সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত গত কয়েকটি নিলামে চায়ের দাম অব্যাহতভাবে কমায় এ শঙ্কা আরো বেড়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে রেকর্ড উৎপাদনের সুফল মিলবে না বলে দাবি চা শিল্পের উদ্যোক্তাদের।

দেশের ১৬৬টি চা বাগানের মধ্যে ১৩৪টি সিলেটের ৩ জেলায় অবস্থিত। এখানকার ৭টি ভ্যালিতে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে এবারই প্রথম সর্বোচ্চ পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছে। তবে উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও কমেছে। চলতি মৌসুমের প্রথম দিকে নিলামে প্রতি কেজি চা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগামীতে দাম আরো কমতে পারে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। চট্টগ্রামে ওয়্যার হাউসে বর্তমানে রেকর্ড চা মজুদ রয়েছে বলে দাবি উদ্যোক্তাদের। এ অবস্থায় দেশীয় চা শিল্প রক্ষায় পণ্যটির আমদানি বন্ধ করা উচিত।

তবে চা বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উৎপাদন বাড়লেও দেশী চায়ের মান দিন দিন কমছে। উৎপাদন মৌসুমের শেষ সময়ে এর মান সবচেয়ে কমে যায়। এ কারণে নিলামে দামও কমছে। উৎপাদনের পাশাপাশি এর মান বাড়াতে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

জানা যায়, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দেশে প্রায় ৭ কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। গত বছরের একই সময় এর পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৪০ লাখ কেজি। আর গত বছর দেশে চায়ের সার্বিক উৎপাদন দাঁড়ায় ৬ কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার কেজিতে। এ বছরের প্রথম ১০ মাসে সিলেট ভ্যালিতেই প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে।

বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিটিএ) সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নিলামে চায়ের গড় দাম ছিল প্রতি কেজি ২৩০ টাকা। আর সর্বশেষ নিলামে একই পরিমাণ পণ্যের গড় দাম দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮৭ টাকায়। ফলে কেজিতে প্রায় ৪৩ টাকা কমেছে চায়ের দাম।

সিলেটের শ্রীপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক মনসুর আহমদ বলেন, চায়ের দাম এখন কিছুটা কমেছে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় দামও কমে থাকতে পারে। অধিক উৎপাদনের কারণে উদ্যোক্তাদের মধ্যে উত্সাহ দেখা দিলেও নিলামে ভালো মূল্য না পেলে তাতে ভাটা পড়বে।

এ ব্যাপারে চা সংসদের সিলেট ভ্যালির সভাপতি ও খাদিম চা বাগানের মহাব্যবস্থাপক নোমান হায়দার চৌধুরী বলেন, এবার উৎপাদন ভালো হওয়ায় চট্টগ্রামের ওয়্যার হাউসে রেকর্ডসংখ্যক চা মজুদ হয়ে আছে। কিন্তু নিলামে উপযুক্ত দাম পাওয়া যাচ্ছে না। দিন দিন চায়ের দাম কমছে।

তিনি আরো বলেন, দেশে এখন যে পরিমাণ চা উৎপাদন হয় তাতে চাহিদা পূরণের পর উদ্বৃত্ত থাকে। অথচ প্রতি বছর দেশে প্রচুর পরিমাণ চা আমদানি হচ্ছে। স্বল্পমূল্যে নিম্নমানের এসব চা আমদানি করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশী উদ্যোক্তারা। সরকার চা আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি করলেও শুল্ক ফাঁকি দিয়েও অনেকক্ষেত্রে চা আমদানি করা হচ্ছে। এজন্য চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত থাকা পর্যন্ত আমদানি বন্ধ রাখার দাবি জানান তিনি।

জানা যায়, দেশে বর্তমানে বছরে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি কেজি চায়ের চাহিদা রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসেই চাহিদার চেয়ে অধিক পণ্য উৎপাদন হয়েছে। তবু বছরে প্রায় দেড় কোটি কেজি চা আমদানি করে বিভিন্ন বৃহৎ ব্যবসায়ী গ্রুপ। চলতি বাজেটে সরকার চা আমদানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করলেও বন্ধ হয়নি আমদানি।

চা সংসদের হবিগঞ্জের লস্করপুর ভ্যালির চেয়ারম্যান এসসি নাগ বলেন, সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠী চা শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। তাদের জীবনমান উন্নয়নে বাগান কর্তৃপক্ষকে কাজ করতে হয়। কিন্তু বাগান লাভবান না হলে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নও সম্ভব নয়। এজন্য চা শিল্পের উন্নয়নে সরকারেরও উদ্যোগ প্রয়োজন।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চা বাগান ব্যবস্থাপনা কোষের মহাব্যবস্থাপক মো. শাহজানান আখন্দ মনে করেন, মৌসুমের শেষ দিকে আবহাওয়াজনিত কারণে চায়ের মান কিছুটা কমে গেছে। এ কারণে নিলামে দাম পড়তে পারে। তবে অধিক আমদানির কারণে দেশী উদ্যোক্তারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিমত তার। এজন্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি চায়ের মান বৃদ্ধি করার প্রতি উদ্যোগী হতেও আহ্বান জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত