সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

২১ নভেম্বর, ২০১৭ ২৩:৩৩

জামালগঞ্জে নকলে বাধা দেয়ায় শিক্ষককে মারধর

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে জেএসসি পরীক্ষায় নকল করার সুযোগ না দেয়ায় এক  পরীক্ষার্থী ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে শিক্ষককে মারধর করেছে। মঙ্গলবার বিকালে উপজেলা সদরের হ্যালিপেড এলাকার রাস্তায় এই ঘটনা ঘটে।

মারধরে আহত হন সীতেশ চন্দ্র সরকার জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের রসায়ন বিষয়ের শিক্ষক। ঘটনার পর আহত অবস্থায় তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি ঘাড়ের ডান দিকে ও ডান হাতে আঘাত পেয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

মারধরকারী পরীক্ষার্থী রিয়াজ মাহমুদ শাহ উপজেলা সদর এলাকার নয়াহালট গ্রামের বাসিন্দা বিএনপি নেতা শাহজাহান শাহ’র ছেলে। সে জামালগঞ্জ মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এই বছর জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ নভেম্বর জেএসসি’র সমাজ বিজ্ঞান পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরীক্ষার্থী রিয়াজ মাহমুদ শাহ নকল (অন্য পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে উত্তর জানা ও উত্তর বলে দেয়া) চেষ্টা করছিল। এসময় পরীক্ষকের দায়িত্বে থাকা জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সীতেশ কুমার সরকার তাকে কথা বলতে বাধা প্রদান করেন ।

পরীক্ষা শেষে রিয়াজ মাহমুদ শাহ পরীক্ষক সীতেশ চন্দ্র সরকারকে হুমকি দিয়ে বলে, ‘এক মাঘে শীত যায় না।’ শিক্ষক সীতেশ চন্দ্র সরকার হুমকির পর পরই বিষয়টি পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান ভূষন চক্রবর্তী ও আইনশৃংখলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসারকে অবগত করেন।

সেই ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার বিকালে শিক্ষক সীতেশ চন্দ্র সরকারকে নিজের বাসার কাছে ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে মারধর করে রিয়াজ। এসময় চিৎকার শুনে জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা হুসনে আরাসহ আরো কয়েকজন এগিয়ে এসে তাঁকে রক্ষা করেন। পরে স্থানীয়রা তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

অভিযুক্ত পরীক্ষার্থী রিয়াজ মাহমুদ শাহ’র বাবা শাহজাহান শাহ বলেন, ‘ভুল বুঝাবুঝি নিয়ে একটা ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষককে ব্যাট দিয়ে মারধর করেছে এটা সঠিক নয়। শিক্ষকের সাথে বেয়াদবী করেছে। বেয়াদবীর জন্য চূড়ান্ত শাস্তি প্রদানের রাস্তা খোঁজা হচ্ছে।’

মারধরের শিকার শিক্ষক সীতেশ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘গত ১৬ নভেম্বর জেএসসি’র পরীক্ষায় ওই ছাত্র (রিয়াজ মাহমুদ শাহ) পরীক্ষার হলে অন্য পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে উত্তর জানা ও উত্তর বলে দিচ্ছিল। আমি তাকে বাধা প্রদান করি। পরীক্ষার পর সে আমাকে হুমকি দিয়ে বলেছিল, ‘এক মাঘে শীত যায় না।’ তাৎক্ষণিক আমি বিষয়টি কেন্দ্র সচিব প্রধান শিক্ষক বিধান ভূষন চক্রবর্তী ও আইনশৃংখলা দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসারকে অবগত করেছি।

মঙ্গলবার আমাকে তার বাসার সামনে পেয়ে ব্যাট দিয়ে মারধর শুরু করে। আমাদের বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা হুসনে আরা বিষয়টি দেখে দৌঁড়ে এসে আমাকে রক্ষা করেন।’

জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান ভূষন চক্রবর্তী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, পরীক্ষার হলে রিয়াজকে কথা বলতে বাধা প্রদান করেছিলেন সীতেশ বাবু। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার এই ঘটনা ঘটেছে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে এবং স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের নিয়ে জরুরী বৈঠকের আহবান করা হয়েছিল কিন্ত সভাপতি না থাকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি। আহত শিক্ষক হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান জানান, আমার জেনেছি পরীক্ষার হলে ওই ছাত্রকে কথা বলতে বাধা দেয়ায় শিক্ষক সীতেশ সরকারকে ব্যাট দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. মনিসর চৌধুরী জানান, আহত শিক্ষক সীতেশ সরকারের ঘাড়ের নিচে ডান দিকে ও ডান হাতে দুইটি আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘ শিক্ষককে মারধরের ঘটনাটি জানার পর পরই দ্রুত কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত