নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ১৯:৪৫

গোলাপগঞ্জের বাঘা হাওর রক্ষার দাবি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের প্রাণ বাঘা হাওর রক্ষার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা হাওর পরিদর্শনে গেলে উপস্থিত লোকজন এ দাবি জানান।

এ সময় তারা বলেন, শতশত মৎস্যজীবী পরিবার এখন নি:স্ব হওয়ার পথে। নদীর উৎসমুখ এবং গোয়ালিখাল, বাঘাখালে বাধ দেওয়ায় হাওরের আশপাশের এলাকার লোকজন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পানি জমে থাকার কারণে হাওরের পাশের লোকদের শতশত হেক্টর জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে হাওরের লিজ বাতিল করে এলাকার লোকদের জমি চাষাবাদের আওতায় আনার দাবি জানান। ভুক্তভোগী কৃষকরা কর্মকর্তাদের সামনে মানববন্ধন করে তাদেরকে রক্ষার দাবি জানান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মুহিবুর রহমান, আতাউর রহমান, সালেহ আহমদ, আখলাছ হোসেন, আকমল হোসেন, আসাদুর রহমান, ইসলাম উদ্দিন, মোক্তার আলী, বাখর মিয়া, বাসন আলী, জয়নাল আহমদ, রেনাম চৌধুরী, জাহাঙ্গীর হোসেন টিপু, সৈয়দ খিজির হোসেন এনু, মিজান আহমদসহ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও কৃষকবান্ধব লোকজন।
এ সময় উপস্থিত লোকজন পরিদর্শনকারী কর্মকর্তাদের সামনে তাদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তারা জানান, বাঘা মৌজার বাঘা হাওরটি যুগ যুগ ধরে এলাকার লোকজন ব্যবহার করে আসছেন। চারিদিকে গ্রামবাসীর ৩ হাজার একর জমি আর মধ্যখানেই বাঘা হাওর। ওই হাওরের পানি আটকিয়ে বছরব্যাপী ফলানো হত ফসল। অথচ একটি পক্ষ সরকারকে ভুল বুঝিয়ে হাওর লিজ নেওয়ার পর থেকেই গ্রামবাসীর ভোগান্তি শুরু হয়েছে। লিজ গ্রহীতা নদীর উৎস মুখে এবং খালে বাঁধ দেওয়ায় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ৩ হাজার একর কৃষি জমি। এতে প্রতি বছর গ্রামবাসীকে গুণতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকার লোকসান।

এলাকার লোকজন জানান, প্রতি বছরই কোন না কোন পক্ষ লিজ নিচ্ছে বাঘা বিল। গেল বছর ৬ বছরের জন্য লিজ নেয় ভাই ভাই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি.। যারাই লিজ নেয় তারাই নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য কৃত্রিম বাঁধ দেয় কুশী নদীর সংযোগস্থলে এবং গোয়ালি খালের মুখে। কুশী নদী এবং গোয়ালি খালে বাধ দেওয়ার পর পরই এলাকার ৩ হাজার একর জমি পানিতে ডুবে যায়। যথাসময়ে এলাকার লোকজন ফসল উৎপাদন করতে পারেন নি। প্রতি বছর ওই জমিতে কোটি কোটি টাকার ফসল ফলত। অথচ বিগত কয়েক বছর ধরে কোন ফসল ঘরে তুলতে পারেননি কৃষকরা। এ বছর আমন, বোরো, রুপা আমন ও শীতকালীন কোন সবজি চাষ হয়নি ৩ হাজার একর জমিতে।

ভুক্তভোগী গ্রামবাসী সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, ভূমি মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়ে সুরাহা চেয়ে অবেদন করেছেন বিভিন্ন দফতরে। এলাকার লোকজনের গণস্বাক্ষর সম্বলিত একটি স্মারকলিপিতে নানা দুর্ভোগ ও দুর্দশার কথা তুলে ধরা হয়েছে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রশাসন থেকে সরেজমিন তদন্ত করা হয়। বুধবারও সরেজমিন তদন্ত করেন উপজেলা ভূমি অফিসের তদন্ত কর্মকর্তারা।

গ্রামবাসী অভিযোগে জানান, কৃষিকাজের জন্য উপযুক্ত সময়ে পানির প্রয়োজন না থাকলেও তখন পানি আটকে রাখা রাখা হয়। আর কৃষি কাজের জন্য যখন পানির প্রয়োজন তখন মৎস্য আহরণের জন্য লিজ গ্রহীতা পানি ছেড়ে দেয়। এ কারণে গত কয়েক বছর ধরে তারা কোন ফসল ফলাতে পারছেন না। ফলে প্রতিবছরই গ্রামবাসীকে লোকসান গুণতে হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত