নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ১৭:৪৯

শিক্ষামন্ত্রীর ‘একান্ত সহকারী’ পরিচয়ে প্রধান অতিথি!

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ‘একান্ত সহকারী’ পরিচয়ে মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা বিয়ানীবাজারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল প্রভাব বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম জানান যে, তিনি মন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত একান্ত সহকারী বা এপিএস না। তবে শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে উনার নির্বাচনী এলাকায় অনানুষ্ঠানিকভাবেই সকল উন্নয়ন কার্যক্রম দেখাশোনা করেন বলেও জানান তিনি।

শনিবার (২৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিতব্য ঢাকাউত্তর মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও প্রধান অতিথি হিসেবে তার নামের সাথে পদবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ‘একান্ত সহকারী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী’।

উপজেলা আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা অভিযোগ করেন যে শিক্ষামন্ত্রীর নিয়োগপ্রাপ্ত একান্ত সহকারী বা এপিএস না হয়েও এ পদবী ব্যবহার করে নানা অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন তিনি। এটা স্বীকৃত পদ, কিন্তু পদ না পেয়েও স্বীকৃত পদকে এভাবে অপব্যবহার করা উচিত নয়।

কোন অনুষ্ঠানের ব্যানারে একান্ত সহকারী, কোথাও একান্ত সহকারী সচিব, আবার কোথাও সহকারী সচিব পরিচয় দেওয়ার কারণে এনিয়ে বিভ্রান্তিও রয়েছে। গত ২ ডিসেম্বর বিয়ানীবাজারের আলীনগরে ‘আনোয়ারা-খালিক ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’র উদ্যোগে ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভর্তি সহায়তা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে দেওয়ান আউয়ালের পদবি লিখা হয় একান্ত সহকারী সচিব, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতেও নানা অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর একান্ত সহকারী বা এপিএস হিসেবে দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল বক্তব্য প্রদান করেন।

ঢাকাউত্তর মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম চৌধুরী জানান, দেওয়ান আউয়াল শিক্ষামন্ত্রীর নিয়োগপ্রাপ্ত ‘এপিএস’ নয়, তবে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নুরুল ইসলাম নাহিদ দায়িত্ব নেয়ার পর স্থানীয়ভাবে একটি কর্মীসভায় মন্ত্রী উনার সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে দেওয়ান আউয়ালকে এলাকার রাজনীতিবিদদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।

তিনি বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী আউয়ালকে উনার ‘একান্ত সহকারী’ হিসেবে অলিখিতভাবে দায়িত্ব দিয়েছেন, আর শিক্ষামন্ত্রীর সাথে স্থানীয়দের যোগাযোগও তার মাধ্যমেই হয়। এ কারণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরাও তার নামের সাথে এ উপাধিটিই ব্যবহার করি”।

বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান খান বলেন, “দেওয়ান আউয়াল বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক, বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি। সে কারণে শিক্ষামন্ত্রী তাকে অনানুষ্ঠানিকভাবে এ দায়িত্ব প্রদান করেছেন এবং সকল অনুষ্ঠানে তার এই পদটিই উল্লেখ করা হয়”।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল বলেন, “আমি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘একান্ত সহকারী’ বা ‘এপিএস’ না, তবে উনার প্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয় যোগাযোগ রক্ষা করে থাকি। এ দায়িত্ব শিক্ষামন্ত্রী স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীসভায় সবার সম্মতি নিয়েই প্রদান করেছেন”।

তিনি বলেন, “বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এমনকি মন্ত্রীর উপস্থিতিতেও আমাকে উনার ‘একান্ত সহকারী’ বা ‘এপিএস’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যা অত্যন্ত বিব্রতকর। আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক আর এ দায়িত্বেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি”।

তার বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কখনো শিক্ষামন্ত্রীর ‘একান্ত সহকারী’ পদবি ব্যবহার করে কখনো কোন ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করিনি। আমি আওয়ামী লীগের একটি পদের দায়িত্বে আছি আর শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশেই তার প্রতিনিধি হিসেবে এলাকায় তার কার্যক্রম দেখে থাকি, কিন্তু কখনোই ‘একান্ত সহকারী’, ‘এপিএস’ এমনকি শিক্ষামন্ত্রীর ‘আস্থাভাজন প্রতিনিধি’ হিসেবেও কোন প্রভাব বিস্তার করিনি”।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী সিলেটটুডেকে বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত না হয়ে পদবি ব্যবহার উচিত নয়।

তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে বিব্রত হচ্ছেন তার দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘ব্যক্তিগত কর্মকর্তা’ (পিও)-এর কারণে। এ অবস্থায় এভাবে তার ‘একান্ত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত না হয়েও এ পদবি ব্যবহার খুবই অনুচিত। শিক্ষামন্ত্রীর উচিত তার কোন দায়িত্ব কে কোথায় আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করেন তার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত