কামরুল ইসলাম মাহি, জগন্নাথপুর

০৭ মার্চ, ২০১৮ ১৭:১৫

বেড়িবাঁধের পাশ থেকে মাটি নিয়ে বাঁধ সংস্কার!

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধের দুই পাশ থেকে মাটি কেটে বাঁধের কাজ চলছে। যে কারণে বৃষ্টি এবং পানির চাপে বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। এতে করে আবারো কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় রাত দিন পার করছেন।

বুধবার (৭ মার্চ) সকালে উপজেলার সর্ববৃহৎ নলুয়ার হাওরের এমন দৃশ্য দেখা গেছে। ওই বাঁধের মতো আরও কয়েকটি বাঁধের গোড়া থেকে মাটি উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নলুয়া হাওরের ভুরাখালি খেয়াঘাট এলাকায় বেড়িবাঁধ প্রকল্পের ১৩নং পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) বাঁধের পাশ নিকট থেকে মাটি কেটে বাঁধের কাজ নির্মাণ কাজ হয়েছে। ওই বাঁধের দুই পাশ থেকেই মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। ফলে বাঁধের বা দিকে দীর্ঘ লম্বা দুইটি খালে পরিণত হয়েছে। ডান পাশেও রয়েছে এরকম একটি।

স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, বাঁধের দুই পাশ থেকে মাটি তোলে বাঁধ নির্মাণ করায় এমন অবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে বৃষ্টি এবং পানির চাপে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। হাওরের ফসল রক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী ৫০ মিটার (১৬৭ ফুট) দূর থেকে মাটি উত্তোলনের কথা থাকলেও নলুয়ার হাওরের বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি এ নিয়ম না মেনে বাঁধের পাশ থেকে মাটি তুলেছেন।

ভুরাখালি গ্রামের একজন  কৃষক জানান, ১৩নং প্রকল্পের বাঁধের দুই পাশের গোড়া থেকে মাটি তোলে বাঁধ নির্মিত হয়েছে। ফলে পানির সামান্য চাপে বাঁধ ভেঙে হাওরের ফসলহানি ঘটবে।

তিনি বলেন, ওই বাঁধের পাশে আরেকটি বাঁধও নির্মিত হচ্ছে বাঁধের গোঁড়া থেকে মাটি তোলে। নীতিমালা লঙ্ঘন করে ফসলরক্ষা বাঁধের পাশ থেকে মাটি উত্তোলন করার অভিযোগ করেছেন তিনি।

আরেক কৃষক বলেন, গত বছর ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিয়ে এবারও ২৫ কেদারা জমিনে চাষাবাদ করেছি। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও আজও হাওরের একটি বাঁধের কাজও শেষ হয়নি। ফলে ফসল হারানোর ভয় রয়েছে।

ভুরাখালি খেয়াঘাট এলাকার বাঁধের ১৩নং প্রকল্পের পিআইসি সভাপতি চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হীরা মিয়া বলেন, নীতিমালা মেনেই বাঁধের কাজ করছি। বাঁধের গোঁড়া থেকে মাটি উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব সাংবাদিক অমিত দেব বলেন, নলুয়া হাওরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধের পাশ থেকে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে হাওরের ফসল ঝুঁকির মুখে পড়বে। আমরা বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেছি। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময় অতিক্রম হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় আমরা শঙ্কিত।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী জগন্নাথপুর উপজেলার আঞ্চলিক অফিস প্রধান নাসির উদ্দীন বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী ৫০ মিটার দূরত্ব থেকে মাটি উত্তোলন করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই কেউ কেউ পাশ থেকে মাটি তুলেছেন বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন।

জগন্নাথপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, ১৩নং প্রকল্প পরিদর্শন করে বাঁধের পাশ থেকে মাটি তুলতে নিষেধ করা হয়েছে। এ সময় তিনি বলেন, মাটির সুবিধা থাকার পরও যে সব প্রকল্পে বাঁধের পাশ থেকে মাটি তুলছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত