কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

০৭ অক্টোবর, ২০১৮ ১৭:১৬

ঋণের ভারে জর্জরিত কমলগঞ্জের কৃষকরা

সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে না পেরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি সংস্থা ও বিভিন্ন দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন অনেক কৃষক। ঋণের ভারে কৃষক পরিবার এখনো জর্জরিত রয়েছেন। গ্রামাঞ্চলে চড়া সুদে ঋণ এনে এখন বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার, মুন্সীবাজার, শমশেরনগর, আদমপুর, আলীনগর, মাধবপুর, কমলগঞ্জ সদরসহ সবকটি ইউনিয়ন ও আনাচেকানাচে এক শ্রেণির অসাধু দাদন ব্যবসায়ী চড়া সুদে কৃষকদের ঋণ প্রদান করছে। এসব দাদন ব্যবসায়ীরা সুদের ব্যবসা চালিয়ে দ্রুত ধনী হয়ে উঠছে। পাশাপাশি এনজিওর মহাজনী ঋণের কিস্তি চালাতে নিঃশেষ হচ্ছে পরিবারসমূহ।

এনজিওর ঋণ গ্রহণকারী আবুল মিয়া জানান, পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে কাজে লাগানোর পূর্বেই ঐ টাকা ভেঙে সপ্তাহের কিস্তি চালাতে হয়। ফলে সাপ্তাহিক কিস্তি দিতে গিয়ে টাকা কাজে লাগানো সম্ভব হয় না এবং ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে।

কমলগঞ্জ উপজেলার নিম্নবিত্ত প্রায় ৯০ শতাংশ পরিবার এনজিও এবং মহাজনী ব্যবসায়ীদের ঋণের জালে আটকা পড়ে জর্জরিত হয়ে পড়ছেন। এছাড়াও এনজিও আর দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও ঋণ গ্রহণ করার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এসব ঋণ গ্রহণ করে কেউ মুখ খুলে কথাও বলতে পারছেন না। অভাব-অনটনের সংসারে অশান্তি, অস্থিরতা, হতাশা ও ঝগড়াঝাঁটি লেগেই আছে।

শমশেরনগর চা-বাগানের বাসিন্দা সুমন চাষা বলেন, দৈনিক যা রোজগার করি তা এনজিওর কিস্তি পরিশোধে শেষ হয়ে যাচ্ছে।

পতনঊষার ইউনিয়নের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মনাই মিয়া বলেন, আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাধ্য হয়ে মাসিক শতকরা দশ টাকা হার সুদে টাকা নিয়ে পরে মাসের পর মাস ঋণ পরিশোধ করেও সুদে-আসলে টাকা শেষ হয় না।

তিনি আরও বলেন, এনজিওসমূহের ঋণও রয়েছে। এদের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে অনেকেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লক্ষীপুর গ্রামের একজন কৃষক জানান, মুন্সীবাজার এলাকার এক প্রভাবশালী দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা ঋণ এনে এক বছরে দ্বিগুণ টাকা দিয়েও ঋণ পরিশোধ হয়নি। ফলে নি:স্ব হয়ে পড়ছেন তার পরিবার।

স্থানীয় কৃষকরা বলেন, কৃষি শ্রমিকের মজুরি, সার-ডিজেল-কীটনাশক, বীজের মূল্য পরিশোধ করে চাষাবাদের পর উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ঋণগ্রস্ত হতে হয়। এছাড়াও বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পর তা কাটিয়ে উঠতে না পেরে এনজিও, দাদন ও মহাজনী ব্যবসায়ীদের ঋণের জালে আটকা পড়েছি।

মুন্সীবাজার ইউনিয়নের নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘প্রয়োজনের তাগিদে আমার মা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সপ্তাহে কিস্তি চালাতে হিমশিম খেতো। ঋণ থাকাকালীন সাংসারিক খরচাদিসহ মাছ, মাংস কিনে খাওয়ারও সাধ্য ছিল না। এভাবে এখন নিম্নবিত্ত শত শত পরিবার এনজিও ও দাদন ব্যবসায়ীদের কবলে আটকা পড়ে চরম অভাব-অনটনে দিন কাটাতে হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত