রিপন দে, মৌলভীবাজার

২৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৬:১৪

তীব্র শীতে ভোগান্তিতে মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকরা

ছবি: শামসুল হক

চা বাগান ও পাহাড়-হাওর বেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। গত কয়েকদিনের শীতে ভোগান্তি বেড়েছে চা শ্রমিকসহ ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষদের।

খড়খুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। তবে বয়স্ক রোগীদের সংখ্যা সেভাবে বৃদ্ধি না পেলেও বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত কারণে শিশু রোগীর সংখ্যা।

গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা অনেকটাই ওঠানামা করেছে ১১ ডিগ্রির আশেপাশে এবং মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) মৌলভীবাজারের তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসে সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারে ১২ ডিসেম্বর এ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেদিন থেকে জেঁকে বসে শীত যা এখনো অব্যাহত আছে। এরপর তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছালেও সর্বশেষ মঙ্গলবার তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

সেই সাথে আকাশে প্রচুর মেঘ থাকায় সূর্যের আলো সময়ে সময়ে দেখা দিলেও বেশিরভাগ সময় আড়ালেই থাকছে সূর্য। সূর্যের আলো না থাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. আনিছুর রহমান জানান, আকাশে প্রচুর মেঘ রয়েছে যার কারণে স্বাভাবিকের চেয়েও বেশী ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে। যদি মেঘ কেটে যায় তাহলে ঠাণ্ডা কমে আসবে।

তিনি আরও বলেন, একই তাপমাত্রায় সূর্যের আলোর উপর নির্ভর করে কেমন ঠাণ্ডা অনুভূত হবে। সূর্যের আলো আসলে স্বাভাবিকভাবেই ঠাণ্ডা কম অনুভূত হবে।

এদিকে শীতের প্রকোপে ও হিম শীতল হাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে জেলার ৯২টি চা-বাগানের ৫ লক্ষ চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীসহ সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষ। শেষ বিকেল থেকে ঘন কুয়াশা শুরু হয়ে রাত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিশির আকারে তা নেমে আসছে মাটিতে। শীতের প্রকোপ আর কুয়াশার কারণে কোনোদিন দুপুর পর্যন্ত আবার কোনোদিন সারাদিনও দেখা মিলছে না সূর্যের।

সন্ধ্যা নামতে না নামতেই শুরু হওয়া ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে নাকাল হয়ে পড়েছে জেলার জনজীবন।

চা বাগানগুলোতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে কম্বল বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী।

মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভর্তি রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা রোগীদের সংখ্যা বেশি। সেই সাথে শিশু ওয়ার্ডের প্রতিটি বেডে ভর্তি আছে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুরা।

মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এম এম হক বলেন, ঠাণ্ডাজনিত কারণে জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা।

মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা রত্নদ্বীপ বিশ্বাস তীর্থ বলেন, হাসপাতালে অন্য সময়ের মতো রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক থাকলেও গত ১০ দিনের মধ্যে ভর্তি হওয়া এবং বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের বেশীর ভাগ ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। এর মধ্যে গত ১০ দিনে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন ৫২০ জন।

এ দিকে জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, মৌলভীবাজারের ৭টি উপজেলায় শীতার্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪১ হাজার ২০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মল্লিকা দে বলেন, সাধারণ মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত আছে। আমাদের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে এবং সামনে আরও শীতবস্ত্র আসবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত