কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৮:৫৭

প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন হচ্ছে কমলগঞ্জের লাঘাটা নদী

এককালের বৃহত্তর সিলেটের শস্যভান্ডার খ্যাত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়িত হচ্ছে। কমলগঞ্জ উপজেলার লাঘাটা নদী খননের কাজ শুরু হয়েছে। ফলে বন্যা ও জলাবদ্ধতা থেকে লাঘবে এলাকার কৃষকরা আশাম্বিত হয়ে উঠছেন। কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী আদমপুর ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা থেকে এ নদীর উৎপত্তি। এটি রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়রে মধ্যদিয়ে মনু নদীতে মিলিত হয়েছে।

কমলগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের পতনঊষার, শমসেরনগর, মুন্সীবাজার ইউনিয়ন এবং রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের কৃষকরা ফি বছর বন্যা, পাহাড়ি ঢল ও নদী ভাঙ্গনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। বোরো, আউশ, আমন, সবজি ক্ষেত হারিয়ে নি:স্ব হয়ে ক্ষতি গুণতে হয় তাদের। ফলে গত কয়েক বছর ধরে এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সভা, সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রীর কাছেও স্মারকলিপি প্রদানসহ নদী খননের দাবি জানিয়ে আসছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দু’টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লাঘাটা নদীর খনন কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে নদীর ২৪ কি.মি. পর্যন্ত খনন কাজ চলবে। ১১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে লাঘাটা নদী খনন হচ্ছে।  

প্রতি বছর নদী ভাঙ্গন, পাহাড়ি ঢল ও বন্যার পানি নিস্কাশন হয়ে থাকে পতনঊষারের কেওলার হাওরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত লাঘাটা নদী। দীর্ঘদিন ধরে লাঘাটা নদী ভরাট হওয়ায় নদী সংকোচন হয়ে খালে পরিণত হয়। এতে জলাবদ্ধতায় ধানী জমি ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা।

মৌলভীবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নূরুল মোহাইমীন মিল্টন বলেন, লাঘাটা নদীকে কেন্দ্র করে কেওলার হাওর সহ জলজ পরিবেশ গড়ে উঠেছে। তবে নদী ভরাট ও সংকোচন হওয়ায় মৎস্য সম্পদসহ জলজ পরিবেশ বিপর্যয়, বন্যা, জলাবদ্ধতা ও শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ ব্যাহত হয়ে পড়ায় এখানকার জলজ পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ে। তিনি আরও বলেন, জলজ পরিবেশ, মৎস্য সম্পদ উৎপাদন ও কৃষি আবাদে লাঘাটা খননের মধ্যদিয়ে নদীর স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে।

মৌলভীবাজার কৃষক সংগ্রাম সমিতির নেতা রমজান আলী পাখি, কমলগঞ্জে হাওর ও নদী রক্ষা আঞ্চলিক কমিটির সদস্য সচিব তোয়াবুর রহমান তবারক, লাঘাটাছড়া পাবসস লি: এর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, নদী খনন ও সংস্কার আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি। গত কয়েক বছরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও আমাদের পক্ষ থেকে ইউএনও, জেলা প্রশাসক ও প্রধানমন্ত্রী বরাবরে আমরা স্মারকলিপি প্রদান ও সভা সমাবেশ করেছি। তারা আরও বলেন, লাঘাটা নদী খনন সম্পন্ন হলে দ্রুত পানি নিস্কাশন ও শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদের জন্য পানির সুব্যবস্থা হবে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, লাঘাটা খনন এলাকার মানুষের ব্যাপক চাহিদা ছিল। নদী খননের জন্য বিগত বছরে সরকারি উদ্যোগে নদীর সার্ভে কাজ শুরু হয়। তবে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে গত বছরে খনন কাজ শুরু হয়নি। এখন খনন কাজ শরু হয়েছে। দুইজন ঠিকাদারের মাধ্যমে খনন কাজ চলছে। সুষ্ঠভাবে খনন সম্পন্নের জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তিনি দাবি করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত